খাগড়াছড়িতে ভারী বর্ষণ অব্যাহত, বসবাসকারীদের ধস এড়াতে প্রশাসনের মাইকিং

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ৯টি উপজেলাতে ভারী বর্ষণ অব্যাহত, নদীতে বাড়তে শুরু হয়েছে। তীরবর্তী বসবাসকারী বাসায় পানি উঠে যাওয়ায় আত্মস্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার। এতে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসীদের ধসের শঙ্কায় আতংকে আছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার(৩০শে মে) সারাদিন খাগড়াছড়ি ৯টি উপজেলাতে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। ক্রমাগত ভারী বর্ষণের ফলে খাগড়াছুড় চেংগী নদী, দীঘিনালা মারিশ্য মাইনী-কাচলং নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবনের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এতে নদী উপকূলীয় বিভিন্ন নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাহাড়ী ¯্রােতে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়ে বিভিন্ন গ্রাম ব্যাপকভাবে প্লাবিত হওয়ায় পরিস্থিতি দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুর থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে পাহাড়ী স্রোতে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করেছে নিচু গ্রামে বিভিন্ন এলাকায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে সাধারন মানুষ। এ ছাড়া গন্জ পাড়া, মহালছড়ি সরকারি কলেজ গেইট, গুগড়াছড়ি, বীচিতলাসহ বিভিন্ন নিচু সড়ক ও বাড়ি ঘরে পাহাড়ী স্রোতে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নদী উপকূলীয় এলাকার মানুষ আতঙ্কিত জোয়ারের অতিরিক্ত পানির ভয়ে আছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, ভারী বর্ষণের ফলে খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলাতে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি পাহাড়ের ওপরে, পাহাড়ের পাদদেশে ও পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী লোকজনকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে জেলার ৯টি উপজেলাতে পাহাড় ধস এড়াতে প্রশাসনের মাইকিং করা হচ্ছে। জেলায় পাহাড় ধসের সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা গুলোতে সচেতনতা মূলক কার্যক্রম ও সরেজমিন পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করেছে জেলা প্রশাসন।
খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মারুফের নেতৃত্বে একটি টিম বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে শহরের শালবন, কলাবাগানসহ বিভিন্ন উপজেলা পাহাড়ি এলাকা ঘুরে দেখেন, মাইকিং এবং স্থানীয়দের সতর্ক করেন।
পরিদর্শন কালে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন যেন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কেউ বসবাস না করেন এবং প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং ও সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এই অভিযানে ৯টি উপজেলা টিএনও, এসি ল্যান্ড ম্যাজিষ্ট্রেড, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায়, সহকারী কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন, সেজন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না থেকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে হবে।
অতি বৃষ্টির সময় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান না করা, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা, জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ বা স্থানীয় প্রশাসনের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে নোয়াখালীতে গত ২৪ঘণ্টায় ২৮৫মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় চলতি মৌসুমে একদিনে এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড।
শুক্রবার (৩০ মে) সকালে জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ঘণ্টায় ২৮৫মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গভীর নিম্নচাপের কারণে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় ৩নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত বলবৎ রয়েছে। আগামীকাল(শনিবার) পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় লক্ষাধিক লোক পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করে। বর্ষা এলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সতর্কতা থাকলেও বর্ষা শেষ হলে আর কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়না।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন