খাগড়াছড়িতে ভারী বর্ষণ, পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে ৩ হাজার পরিবার

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে ভারী বর্ষণ অব্যাহত, পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় ৩সহ¯্রাধিক পরিবার, পাহাড়ে ধসের শঙ্কা ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের ধস এড়াতে প্রশাসনের মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে খাগড়াছড়িতে থেমে থেমে চলছে মাঝাড়ি মাত্রার বর্ষণ। এতে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কার। দুর্যোগ মোকাবেলায় নেয়া হয়েছে প্রস্তুতি। সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নিতে সচেতনতামূলক মাইকিং মাধ্যমে প্রজচারণা চালাচ্ছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন।
এদিকে বৃহস্পতিবার(২৯শে মে) বিকেলে খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মারুফ’র নেতৃত্বে প্রশাসনের কর্মকর্তা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের বাড়ীতে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে অনুরোধ করেন। সে সাথে জেলা প্রশসন উদ্যোগে খাগড়াছড়ি শহরের সবুজ বাগ, কুমিল্লাটিলা, শালবন মোহাম্মদ পুর, শালবান শাপলা মোরসহ পাহাড় ধসের সম্ভাবনা এলাকায় সচেতনতা মূলক মাইকিং করা হয়েছে।
এদিকে পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধ ভাবে বসতি স্থাপনকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার গ্রহনের পাশাপাশির, এই দুর্যোগে যাতে একটিও প্রাণহানীর না ঘটে সেই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার কথা জানান খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার ।
খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় ৩সহ¯্রধিক পরিবার। সে সাথে থামছে না পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন। প্রতি বছর বর্ষা এলেই প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও সারা বছর পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন নিয়ে প্রশাসন নির্বিকার থাকেন এমন অভিযোগ রয়েছে। ফলে এ বর্ষা মৌসুসে খাগড়াছড়িতে আবারও পাহাড় ধসে জানমালের ক্ষতির শংকা প্রবল হয়ে উঠেছে।
এদিকে খাগড়াছড়ি পৌর শহরে থেমে থেমে ভারী বর্ষনের কারনে স্থানীয় প্রশাসন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহন করেছে । ইতিমধ্যে পাহাড় ধস প্রবন এলাকায় চলছে সচেতনতা মূলক প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। যেখানে যোগ দিয়েছেন জেলার শীর্ষকর্তারা। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ও প্রস্তাবিত অশ্রয় কেন্দ্র সমূহ করছেন পরিদর্শন। ভারী বর্ষণ শুরু হলে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে বাসিন্দাদের।
খাগড়াছড়ি জেলায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৩সহ¯্রাধিক পরিবার। বর্ষা মৌসুম আসায় পাহাড়ে বসবাসকারী এ সব পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। খাগড়াছড়ি শহরের বিশেষ করে শহরের কলাবাগান, নেন্সিবাজার, মোল্লাাপাড়া, রাজ্যমনি পাড়া, দক্ষিন গোলাবাড়ি, গন্জ পড়া, কৈবল্যপিঠ, আঠারো পরিবার, শালবন ও মোহাম্মদপুরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এভাবে পাহাড়ের ঢালে ঢালে এইভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে সহ¯্রাধিক পরিবার।
এদিকে বিগত বছরগুলোতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এদিকে শহরের বেশ কয়েকটি স্পটে পাহাড় কেটে বা পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ বেড়েই চললেও পাহাড় কেটে বাড়িঘর নির্মাণ বন্ধে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
অপর দিকে পাহাড়ে পাদদেশে বসবাসকারীরা বলছে, থাকার জায়গা না জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে তারা পাহাড়ের পাদদেশে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। সরকার পুনর্বাসনের উদ্যোগে নিলে সরে যেতে রাজি তারা।
খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি, পরিবেশ কর্মী সাংবাদিক এডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার জানান পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের অন্যত্র পুনর্বাসনের উদ্যোগ না নিলে ভয়াবহ প্রাণহানির আশংকা রয়েছে । খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান সম্মিলিত উদ্যোগে পাহাড়ে পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাসকারীদের পুনর্বাসনে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে পৌর এলাকায় ৩০টি ঝুঁকি পূর্ণ স্থানে ৩হাজার ৫শত পরিবারসহ পুরো জেলায় ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় ৩৫হাজার পরিবার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্ষা মৌসুম আসায় পাহাড়ে বসবাসকারী এ সব পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মারুফের নেতৃত্বে একটি টিম বৃহস্পতিবার(২৯শে মে) বিকেলে শহরের শালবন, কলাবাগানসহ বিভিন্ন উপজেলা পাহাড়ি এলাকা ঘুরে দেখেন, মাইকিং এবং স্থানীয়দের সতর্ক করেন।
পরিদর্শন কালে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন যেন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কেউ বসবাস না করেন এবং প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং ও সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এই অভিযানে ৯টি উপজেলা টিএনও, এসি ল্যান্ড ম্যাজিষ্ট্রেড, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায়, সহকারী কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
৯টি উপজেলাতে ভারী বর্ষণ অব্যাহত, নদীতে বাড়তে শুরু হয়েছে। তীরবর্তী বসবাসকারী বাসায় পানি উঠে যাওয়ায় আত্মস্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার। এতে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসীদের ধসের শঙ্কায় আতংকে আছে। গত বৃহস্পতিবার(২৯শে মে) সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার(৩০শে মে) সারাদিন খাগড়াছড়ি ৯টি উপজেলাতে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। ক্রমাগত ভারী বর্ষণের ফলে খাগড়াছুড় চেংগী নদী, দীঘিনালা মারিশ্য মাইনী-কাচলং নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবনের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এতে নদী উপকূলীয় বিভিন্ন নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাহাড়ী ¯্রােতে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়ে বিভিন্ন গ্রাম ব্যাপকভাবে প্লাবিত হওয়ায় পরিস্থিতি দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, ভারী বর্ষণের ফলে খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলাতে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি পাহাড়ের ওপরে, পাহাড়ের পাদদেশে ও পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী লোকজনকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন, সেজন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না থেকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে হবে।
অতি বৃষ্টির সময় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান না করা, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা, জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ বা স্থানীয় প্রশাসনের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ঘণ্টায় ২৮৫মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গভীর নিম্নচাপের কারণে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় ৩নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত বলবৎ রয়েছে। আগামীকাল(শনিবার) পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে নোয়াখালীতে গত ২৪ঘণ্টায় ২৮৫মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় চলতি মৌসুমে একদিনে এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড।
খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় লক্ষাধিক লোক পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করে। বর্ষা এলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সতর্কতা থাকলেও বর্ষা শেষ হলে আর কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়না।