খাগড়াছড়িতে মৌসুমের শেষদিকে এসেও কাঁঠালে ঠাসা বাজার

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে মৌসুমের শেষদিকে এসেও কাঁঠালে ঠাসা বাজার। জেলার ৯টি উপজেলাতে ম—ম গন্ধ ছড়াচ্ছে কাঁঠাল। মৌসুমের শেষদিকে এসেও কাঁঠালে ঠাসা বিভিন্ন হাট—বাজার। আর এ কাঠাঁলের চাহিদা রয়েছে সারা দেশে। পাহাড়ের এ কাঠাঁল বিক্রি করে লাভমান হচ্ছেন অনেক ব্যাবসায়ী।

খাগড়াছড়িতে সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট বসে গুইমারা ও মাটিরাঙ্গায়। মঙ্গলবার গুইমারা আর শনিবার মাটিরাঙ্গা। শনিবার হাট হলেও বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা কাঁঠাল নিয়ে আসতে শুরু করেন।
অন্যদিকে সোমবার সকাল থেকে গুইমারা বাজারে আসতে শুরু করে কাঁঠাল। এ দুদিন মাটিরাঙ্গা ও গুইমারায় ঢাকা—চট্টগ্রাম—খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশের বিশাল অংশজুড়ে বসে কাঁঠালের হাট।

শনিবারের হাটকে সামনে রেখে মাটিরাঙ্গায় এসে জড়ো হন ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা। তারা ট্রাকে ট্রাকে কাঁঠাল নিয়ে যান সমতলের জেলায়। সমতলের জেলাগুলোতে পাহাড়ের কাঁঠালের চাহিদা ব্যাপক বলে জানান পাইকাররা মাটিরাঙ্গার কাঁঠালের হাট ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় পাইকার ও বাগানিরা কাঁঠালের স্তুুপ সাজিয়ে বসে আছেন। প্রতিটি স্তুুপে আছে শত শত কাঁঠাল। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকাররা দরদাম করে কিনছেন।

স্থানীয় বিক্রেতা আর পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমতলে পাহাড়ের কাঁঠালের চাহিদা থাকায় তারা অনেকটা চড়া দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে সমতলের চাহিদা থাকলেও কাঁঠালের দাম অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে।

মাটিরাঙ্গা বাজারে কাঁঠাল নিয়ে আসা খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার সবচেয়ে বড় এ কাঁঠালের হাটে উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদ ছাড়াও পানছড়ি, লোগাং, পূজগাং, তাইন্দং, তবলছড়ি, মাইসছড়ি , মহালছড়ি ও জেলা সদরের ভুয়াছড়ি থেকে ট্রাক ও চাঁদের গাড়ি বোঝাই করে কাঁঠাল নিয়ে আসেন স্থানীয় খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৩০—৫০টাকা দরে। সমতলের জেলাগুলোতে এ কাঁঠালের দাম তিনগুণেরও বেশি।
মাটিরাঙ্গার কাঁঠাল বিক্রেতা মো: নুর নবী, পানছড়ির মো: রফিকুল ইসলাম জানান, মৌসুমের শুরুতেই তারা বিভিন্ন বাগান কেনেন। মে মাসের শেষ থেকে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বিক্রি করে থাকেন। এ বছর কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন।

গুইমারা বাজারের পাইকার আনোয়ার গাজী বলেন, ‘কলা—আম—লিচুর পরে পাহাড়ি জেলার কাঁঠালের ব্যাপক চাহিদা আছে সমতলের বিভিন্ন জেলায়। কাঁঠাল এখানকার অর্থনীতির চাকা সচল করেছে।’
মাটিরাঙ্গা বাজারের ইজারাদারের প্রতিনিধি মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, এ মৌসুমে প্রতি সপ্তাহে মাটিরাঙ্গা বাজার থেকে শতাধিক ট্রাক কাঠাঁল সমতলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। যা থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় করছে সরকার। এছাড়া গাড়িতে কাঁঠাল লোড—আনলোডসহ অন্য কাজে অন্তত দুইশ শ্রমিক নিয়োজিত থাকায় শ্রমিকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরেছে।

মাটিরাংগা পৌর কাউন্সিলর মো: শহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন খাগড়াছড়িতে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার প্রতিষ্ঠা করা গেলে চাষিরা তাদের উৎপাদিত ফল সংরক্ষণ করে আরও ভালো দাম পেতেন।
মাটিরাঙ্গা পৌর মেয়র মো: শামছুল হক ও মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল বলেন, ‘একটি হিমাগার প্রতিষ্ঠা স্থানীয় বাগানিদের দীর্ঘদিনের দাবি। তা বাস্তবায়নে একটু দেরি হলেও সরকার কাজ করে যাচ্ছে।