খাগড়াছড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ইউপিডিএফ’র আন্তানার সন্ধান, প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম ও গুলি উদ্ধার

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে অপহৃত যৌথ বাহিনীর অভিযানে ইউপিডিএফ’র আন্তানার সন্ধান, প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম ও গুলি উদ্ধার করেছে নিরাপত্তাবাহিনী। জেলাতে অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্বারে যৌথ বাহিনীর ইউপিডিএফ’র প্রসিত গ্রæুপের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমার গোপন আস্তানায় অভিযানে বিপুল পরিমাণ প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম, গুলি ও দলিল উদ্ধার করেছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) অপহরনকৃত ৫জন শিক্ষার্থীর সন্ধানে ভোর ৫টার দিকে ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের পূর্ণ চন্দ্র কার্বারী পাড়ায় যৌথবাহিনী অভিযান চলাকালে ইউপিডিএফ’র এ গোপন আস্তানার সন্ধান পায়।
নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভোর রাতে যৌথ বাহিনীর ঐ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইউপিডিএফ’র প্রসিত গ্রুপের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমার গোপন আস্তানার সন্ধান পায়।
তালা বন্ধ দেখে সেনাবাহিনীর সন্দেহ হয় ও পাড়ার লোকজনের সাহায্যে তালা ভেঙ্গে ঘর তল্লাশি চালায়। এ সময় চাঁদার রশিদ, ল্যাপটপ, মোবাইল, সামরিক ইউনিফর্মসহ বিপুল পরিমাণ প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম উদ্বার করা হয়।
খবর পেয়ে খাগড়াছড়ি ২০৩ব্রিগেডের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনালে শরীফ মো: আমান হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
অভিযানে নেতৃত্ব নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে জানান, অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে প্রয়োজনে প্রতিটি ইঞ্চি জমি তল্লাশী করা হবে এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে ভাইবোনছড়া ইউনিয়নে সেনা অভিযানে ঘরবাড়ি তল্লাশি-ভাঙচুর-লুটপাট ও গ্রামাবসীদের হয়রানির নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছে। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের পূর্ণ চন্দ্র কার্বারি পাড়া এলাকায় সেনা অভিযানে ঘরবাড়িতে তল্লাশি-ভাঙচুর-লুটপাট ও নিরীহ গ্রামবাসীদের হেনস্থা-হয়রানির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)।
সোমবার (২১ এপ্রিল) ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, পিসিজেএসএস সন্তু গ্রæুপের ছাত্র সংগঠনের অভিযোগের ভিত্তিতে কথিত অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের নামে সেনাবাহিনী কয়েকদিন ধরে খাগড়াছড়িতে অভিযানের নামে ঘরবাড়িতে তল্লাশি, হয়রানি করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার ভোররাত থেকে ব্যাপক সংখ্যক সেনা সদস্য ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের পূর্ণ চন্দ্র কার্বারি পাড়া ঘেরাও করে অভিযান চালায়।
এ সময় তারা একটি বাড়ি থেকে বইপত্র, ইউপিডিএফের পতাকা, পোস্টার-ব্যানারসহ ইত্যাদি উদ্ধার করেছে মর্মে “এটাকে ইউপিডিএফের গোপন আস্তানা” উল্লেখ করে সাংবাদিক ডেকে নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় অপপ্রচার চালায়। সেনারা বাড়িটিতে ভাঙচুর করে, জিনিসপত্র তছনছ ও বইপত্রসহ বিভিন্ন জিনিস পুড়িয়ে দেয়। চলে যাবার সময় সেনারা গ্রামবাসীদের রোপনের জন্য রাখা আদা, হলুদ, কচুসহ ধান কাটার কাঁচি, কম্বল, কাপড়-চোপড়, চাল, হাড়িপাতিল, চেয়ার-টেবিল, খাট, বাদ্যবাজনার সরঞ্জাম ইত্যাদি লুট করে নিয়ে যায়।
সেনারা নিরীহ ৭জন গ্রামবাসীকে কিছু সময়ের জন্য আটক রেখে মানসিক নির্যাতন, হেনস্থা ও হয়রানি করে। পরে তাদেরকে ছেড়ে দিলেও আগামীকাল সকালে ক্যাম্পে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে যায়।
ইউপিডিএফ নেতা বলেন, ইউপিডিএফ একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে গণতান্ত্রিকভাবেই তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইউপিডিএফের গোপন আস্তানা বলে কিছুই নেই। আর মিছিল-মিটিং সভা-সমাবেশ ও পার্টি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ইউপিডিএফ তার দলীয় পতাকা উত্তোলন-প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে থাকে।
এসব ডকুমেন্ট বা কাগাজপত্র, বই কোন কিছুই গোপনীয় ও নিষিদ্ধ নয়। আর বই-পুস্তক রাখাতো কোনভাবেই অবৈধ কাজ হতে পারে না। বর্তমানে পাড়া-গ্রামে, শহরে প্রত্যেকের বাড়িতে ব্যক্তিগত ও পাড়া-গ্রামে সামাজিক লাইব্রেরি করা হয়ে থাকে এবং সেসব লাইব্রেরিতে নানা ধরনের বই-পুস্তক রাখা হয়।
বিবৃতিতে তিনি সন্তু গ্রæুপের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ৫জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের নামে যেভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ইউপিডিএফের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। এ অভিযানের আড়ালে সন্তু গ্রæুপের সাথে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বোঝাপড়ার সুষ্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।
তিনি অবিলম্বে এ অভিযান বন্ধ করে সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
গত বুধবার(১৬ই এপ্রিল) সকালে বৈসাবি উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রামে ফেরার পথে ৫জন শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক তুলে নেয়া হয়। এঘটনায় শুরু থেকে ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রæুপকে দায়ী করে আসছে সন্তু লারমার পিসিজেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি নিপন ত্রিপুরা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা। অপরদিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের শিবমন্দির এলাকা থেকে সেনাবাহিনী অন্তত: ৭জন গ্রামবাসীকে আটক করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার(২১শে এপ্রিল ২০২৫) ভোরে বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্য শিবমন্দির এলাকার পূর্ণ চন্দ্র কার্বারী পাড়ায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় তারা গ্রামবাসীদের জিম্মি করে ঘরবাড়ি ব্যাপক তল্লাশিসহ নানা হয়রানি করে।
এ সময় সেনারা অন্তত: ৭জন গ্রামবাসীকে আটক করেছে বলে অভিযোগ এসেছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত এখনো জানা সম্ভব হয়নি এবং আটককৃতদের পরিচয়ও পাওয়া যায়নি। তবে নিরাপত্তাবাহিনী ৭জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওযা হয়েছে।
শিবমন্দির ছাড়াও বাউরা পাড়া বৌদ্ধবিহারসহ আশে-পাশের এলাকায়ও সেনা সদস্যরা অভিযান চালায় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। পিসিজেএসএস সন্তু গ্রুপের ছাত্র সংগঠনের অভিযযোগের ভিত্তিতে কথিত “অপহরণ” হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের নামে সেনাবাহিনীর এমন অভিযানে এলাকার জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য অপহৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে খাগড়াছড়িস্থ আদিবাসী ছাত্র সমাজের ব্যানারে। রোববার(২০শে এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়ি মহাজনপাড়ার সূর্যশিখা ক্লাব থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। পরে শাপলা চত্বর হয়ে খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে সমাবেশ করে তারা।
এ সময় বক্তারা অপহরনের জন্য ইউপিডিএফ’কে দায়ী করে অবিলম্বে অপহৃত ৫শিক্ষার্থীকে সুস্থ অবস্থায় মুক্তির দাবি জানান। এছাড়া অপহৃতদের উদ্ধারে যথাযথ প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহণের আহŸান জানানোর পাশাপাশি অপহরকারীদের শাস্তির আওতায় আনারও দাবি জানান বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা।
একই সাথে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশে রাঙামাটির কাউখালিতে এক মারমা তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষক মো: ফাহিমকে গ্রেফতার করে বিচারে আওতায় আনারও দাবি জানানো হয়।
অরো উল্লেখ্য, বুধবার বিঝু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রামে ফেরার পথে ৫শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক তুলে নেয়া হয়। এ ঘটনায় শুরু থেকে ইউপিডিএফকে দায়ী করে আসছে পিসিজেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি নিপুন ত্রিপুরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা।
এদিকে অপহৃতদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে যৌথ বাহিনী। সেনাবাহিনীর ব্যাপক অভিযান, ঘরবাড়ি তল্লাশিসহ নানা হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। পিসিজেএসএস সন্তু গ্রুপের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে কথিত “অপহরণের” শিকার হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের নামে জেলা ব্যাপীী চলছে সেনাবাহিনীর ব্যাপক অভিযান। গত ১৬ই এপ্রিল বিকেল থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান এখনো চলমান রয়েছে।
অভিযানকালে সাধারণ লোকজনের ঘরবাড়ি তল্লাশি, গাড়ি আটকিয়ে তল্লাশিসহ নানা হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার (১৬ই এপ্রিল ২০২৫) বিকেলের দিকে হঠাৎ করে পিসিজেএসএস সন্তু গ্রæুপের সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ৫জন শিক্ষার্থীকে(যারা সবাই তাদের ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত) খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে ‘অপহরণের” অভিযোগ করে এবং এর জন্য ইউপিডিএফকে দায়ি করে। আর বিভিন্ন মিডিয়া দ্রæুত এ খবরটিকে লুফে নেয় ও ছড়িয়ে দেয়। যদিও ইউপিডিএফ শুরু থেকে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
এরপর বিকেল থেকে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে। তারা শিবমন্দিরসহ আশে-পাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাতে থাকে। গতকাল(১৮ই এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়া পাড়া, মধুপুরসহ আশে-পাশে এলাকায় কর্ডন দিয়ে পুলিশসহ সেনাবাহিনীকে অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়।
এ সময় তারা ঘরবাড়ি ও গাড়িতে তল্লাশি পরিচালনা করে বলে জানা গেছে। এরপর বিকেলে দক্ষিণ খবংপুজ্জে এলাকায় অভিযান চালানোর তথ্য পাওয়া যায়। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি। গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) ভোর থেকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের সুরেন্দ্র মাষ্টার পাড়া, হেডম্যান পাড়া এলাকায় ব্যাপক সেনাবাহিনী উপস্থিতি ও ঘরবাড়ি তল্লাশি চালানোর খবর পাওয়া গেছে।
খাগড়াছড়ি ছাড়াও গতকাল রাঙামাটির কুদুকছড়ি এলাকায়ও সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তারা রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি আন্ত: প্রধান সড়কের বিভিন্ন স্থানে চলাচলকারী গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালায়। অপরদিকে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কেও তল্লাশি কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে সেনাবাহিনী-পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
অভিযানকালে সাধারণ জনগণের ঘরবাড়িতে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের নামে জনগণকে নানা হয়রানি করা হচ্ছে বলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে ভুক্তভোগী লোকজন অভিযোগ করেছেন। সেনাবাহিনীর ব্যাপক অভিযান সত্তে¡ও “অপহৃত” শিক্ষার্থীরা এখনো উদ্ধার না হওয়ায় জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে উক্ত ৫জন শিক্ষার্থী কী আসলে অপহরণের শিকার হয়েছেন, নাকি আত্মগোপনে রয়েছেন?
কারণ তারা বাঘাইছড়িতে বিঝু উৎসবে যোগ দেয়ার নাম করে সন্তু গ্রæুপের সশস্ত্র ও ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথে মিলিত হয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র মতে, পিসিজেএসএস সন্তু গ্রæুপ রাষ্ট্রীয় একটি বিশেষ মহলের সাথে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে খাগড়াছড়িতে কার্যক্রম শুরুর চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যেই শিক্ষার্থী ‘অপহরণ’ ঘটনা সাজানো হয়েছে কি-না সে প্রশ্ন উঠছে সচেতন মহলে।
সচেতন মহল বলছেন, অতীতে স্বনিভর বাজারের মতো জনসমাগম স্থানে প্রকাশ্যে দিবালোকে ব্রাশফায়ারে ছাত্র-যুব নেতাসহ ৬জন জনকে হত্যার ঘটনায় রাষ্ট্রীয় কোন বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। অপরাধীরা প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরলেও তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়নি। কিন্তু এখন একটি পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় যৌথ বাহিনী যেভাবে তৎপরতা শুরু করেছে, অভিযান পরিচালনা করছে তা রীতিমত সন্দেহজনক।
অপরদিকে চবি ৫শিক্ষার্থী অপহরণের ৫দিন পরও যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খাগড়াছড়ি শহরের সদর উপজেলার গিরিফুল এলাকা থেকে অপহৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা যায়নি ঘটনার ৫দিন পার হলেও। উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত শুক্রবার(১৮ই এপ্রিল) ভোর থেকে মধুপুর, পানখাইয়া পাড়া, চাবাই সড়ক ও নোয়াপাড়া এলাকায় টহল ও ব্যাপক তল্লাশি কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “অপহৃতদের উদ্ধারে আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি-ঢাকা ও খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে।”
অপহরণের জন্য ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-কে দায়ী করেছে পিসিজেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপুন ত্রিপুরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা।
অপহৃত শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ি শিক্ষার্থী ও তাঁদের স্বজনেরা।
অপহৃত চবি’র নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমার মা ভারতী চাকমা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সন্তানকে ফেরত চেয়ে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ভারতী চাকমা লিখেছেন- “প্লিজ কারো মায়ের বুক খালি না করে দোষ থাকলে উপযুক্ত শাস্তি দিন, তবুও সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারো বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন আমাদের সন্তানদের।
তিন দিনেও উদ্ধার হয়নি খাগড়াছড়িতে অপহৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের(চবি) ৫শিক্ষার্থীসহ ছয় জন। এ নিয়ে পরিবারে উদ্বেগ বাড়ছে।
সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্ট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি’র) সভাপতি নিপুন ত্রিপুরা এক বিবৃতিতে রিশান চাকমাকে তাদের ছাত্র সংগঠনের চবি শাখার সদস্য দাবী করে বলেন, তারা গতকাল(মঙ্গলবার) রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বৈসাবি উৎসব শেষ করে খাগড়াছড়ি হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বাসে টিকেট না পাওয়ায় মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার কুকিছড়া এলাকায় মৈত্রীময় চাকমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেছিল।
সকাল ৭টার গাড়িতে তাদের চট্টগ্রামে ফেরার কথা। কিন্তুু গিরিফুল এলাকা থেকে তাদেরকে জোরপূর্বক তুলে নেয়া হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের বহনকারী টমটম চালককেও অপহরণ করা হয়। এই ঘটনার জন্য আমরা ইউপিডিএফ(প্রসীত) কে দায়ী করেন তিনি। তবে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউপিডিএফের প্রসীত গ্রæুপের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা।
এই ঘটনার জন্য আমরা ইউপিডিএফ (প্রসীত) কে দায়ী করেছেন। তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’ তবে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউপিডিএফের প্রসীত গ্রæুপের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য হচ্ছে অপহরণের সাথে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। এই ধরনের প্রতিহিংসা পরায়ন রাজনীতি আমরা করি না। আমরা সবসময় ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের পক্ষে। কোন মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অপহরণের ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছে। ’
খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো: আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, “ঘটনার পর এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল জানান, চবি’র ৫জন শিক্ষার্থীসহ ৬জনকে অপহরনের ঘটনায় পাহাড়ের আঞ্চলিক একটি সংগঠন জড়িত থাকতে পারে। আমরা মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের অবস্থান সনাক্ত করে উদ্ধারের চেষ্টা করছি।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল আরো জানান, অপহৃতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান চলছে। আমার অপহৃতদদের উদ্বারে সব ধরনের চেষ্টা করছে। সে সাথে বিভিন্ন সড়কে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৈসাবি উৎসব শেষে ফেরার পথে গত বুধবার(১৬ই এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের ভোর সাড়ে ৬টার সময় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে সন্তু লারমা সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সদস্য চবি শাখার রিশান চাকমাসহ ৫জন শিক্ষার্থীসহ ৬(ছয়) জনকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয়। রিশান চাকমা চবি’র আন্তজাতিক সর্ম্পক বিভাগের শিক্ষার্থী।
খবরে প্রকাশ গত বুধবার সকালে খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রামে ফেরার পথে ৫শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়। অপহৃতরা হলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য রিশন চাকমা এবং তার চার বন্ধু চারুকলা বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী। অপহৃতরা সকলে রাঙামাটি ও বান্দরবানের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন