খাগড়াছড়িতে স্কুল শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, হামলার ঘটনায় নিন্দা তিন সংগঠনের

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নে সেটলার বাঙালি কর্তৃক ৮ম শ্রেণির পাহাড়ি শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ ও ভাইবোনছড়ায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে সেনাবাহিনীর হামলার প্রতিবাদে এবং ধর্ষণকারীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জেলাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন(এইচডব্লিউএফ), খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৩টার সময় স্বনিভর থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জেলা পরিষদ, রেডস্কয়ার, কলেজ গেইট হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ারে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি অনিমেষ চাকমা, সাধারণ সম্পাদক তৃষ্ণাঙ্কর চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা আহŸায়ক এন্টি চাকমা।
অনিমেষ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে নারী ধর্ষণসহ দমন-পীড়নের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাইবোন ছড়ায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা তারই অংশ। পাহাড়ে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের নামে ধর্ষক, অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে পরিস্থিতি অবনতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আজকে পাহাড় ছাড়াও সারাদেশে অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। আজকে ভাইবোনছড়ায় ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থী ও যুব সমাজের আয়োজিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে সেনাবাহিনী অতর্কিত হামলা চালিয়েছে, লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের আহত করেছে।
সাংবাদিকসহ কয়েকজনের ওপর অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে। অনেকের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই হামলার ঘটনা প্রমাণ করে সেনাবাহিনী ধর্ষকদের রক্ষা করতে চায়। যার কারণে পাহাড়ি নারীরা ধর্ষণের শিকার হলেও সুষ্ঠু বিচার হয় না, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়া হয় না।
তিনি বান্দরবানে চিংমা খেয়াং নামে এক গৃহবধুকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িতদের এখনো গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাহাড়ে সেনাশাসন বলবৎ থাকায় এমন পাহাড়িরা এমন বিচারহীনতার পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এন্টি বলেন, পাহাড়ি নারী ধর্ষণের ঘটনার বিচার পাহাড়ের মানুষ কোনদিন দেখেনি, বিচারও পায়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরবর্তী সেটলার বাঙালিদের অনুপ্রবেশ ঘটানোর পর থেকে পাহাড়ি নারী-শিশুরা ধর্ষণ-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
বিচার ও সাজা না হওয়ার কারণে সেটলাররা পাহাড়ি নারীদের দানবের মতো ঝাপিয়ে পড়ছে। ভাইবোনছড়া ঘটনায় যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে হয়তো কয়েকদিনের মধ্যেই তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হবে। অতীতেও এমন বহু উদাহরণ রয়েছে। এ যাবত পাহাড়ি নারী ধর্ষণের ঘটনায় কোন ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও সাজা হয়নি।
এন্টি চাকমা আরো বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে পাহাড়ে বিএনপি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পাহাড়ে সা¤প্রদায়িক হামলা ও নারী ধর্ষণ-নিপীড়ন চলছে তাদের নেতৃত্বে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর এখন তারাই ফ্যাসিস্ট হয়ে দেখা দিয়েছে।
সমাবেশে থেকে বক্তারা অবিলম্বে ভাইবোনছড়ায় পাহাড়ি শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সকল ধর্ষককে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া; ভাইবোনছড়ায় শিক্ষার্থী ও যুব সমাজের আয়োজিত শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলাকারী সেনা সদস্যদের বিচার এবং নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে আবারো চেঙ্গী স্কোয়ার থেকে একটি মিছিল স্বনির্ভরে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়ায় সেটলার বাঙালি মুনির ইসলাম ও আরমান ইসলাম গং কর্তৃক ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক পাহাড়ি ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে ভাইবোনছড়া বাজারে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী ও যুব সমাজ ভাইবোনছড়ার’ উদ্যোগে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে সেনাবাহিনীর অতর্কিত হামলা ও সাংবাদিকসহ কয়েকজনকে পাশবিক নির্যাতনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশনে ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম।
বৃহস্পতিবার (১৭ই জুলাই) পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যৌথ বিবৃতিতে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ২৭শে জুন ২০২৫ ভাইবোনছড়া বাজারস্থ উন্নয়ন বোর্ড ভবনের পাশে একটি বাসায় স্বেচ্ছাসেবক দলের ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন সভাপতি মো: আরমান হোসেন(৩২), সদস্য মো: ইমন হোসেন (২৫) ও এনায়েত হোসেন(৩৫) এবং শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মো: সাদ্দাম হোসেন(৩২), বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: মুনির ইসলাম(২৯) ও ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো: সোহেল ইসলাম(২৩) কর্তৃক এক পাহাড়ি স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে শত শত শিক্ষার্থী ভাইবোনছড়া বাজারে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। কিন্তু শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলাকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর বিনা উস্কানিতে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে পালাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এছাড়া সংবাদ সংগ্রহ করার সময় ডিবিসি নিউজের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়।
সেনাবাহিনীর এই হামলাকে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও অপরাধী ধর্ষকদের রক্ষার অপচেষ্টা মন্তব্য করে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বাংলাদেশে সেনাবাহিনী এক বছর ধরে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারকে অপব্যবহার করে নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে। ‘গতকাল গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর গুলিতে কয়েকজন হতাহত হয়েছে।’
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বর্তমান সরকার পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মতোই পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন জারী রাখার কারণে পাহাড়িদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সেনাশাসন প্রত্যাহারপূর্বক পতিত সরকারে আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য জারীকৃত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১দফা নির্দেশনা বাতিল করে পাহাড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতসহ অবিলম্বে শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলাকারী সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভাইনোনছড়ায় স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনার বিচারের দাবি জানান।
এছাড়াও নিজেদের ন্যায্য দাবি ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ন্যায়ের পক্ষে অবিচল থেকে শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও রুখে দাঁড়ানোর জন্য ছাত্র-যুব-নারী সমাজের প্রতি আহŸান জানান।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন