খাগড়াছড়ির জমজমাট এই ঐতিহ্যবাহী পুরুষ-নারী বলী খেলায় উচ্ছসিত জেলাবাসী

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে বলী সংগঠনের উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী পুরুষ-নারী বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জমজমাট এই উচ্ছসিত জেলার ৯টি উপজেলাবাসী।
মঙ্গলবার (১০ জুন) বিকেল ৪টায় মর্মসিংহ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বলী খেলার উদ্বোধন করেন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা।

মঙ্গলবার বিকেলে ঐতিহাসিক খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে এক উৎসবমুখর পরিবেশে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি ২০৩পদাতিক বিগ্রেড রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল, খাগড়াছড়ি সদর জোনের জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল খাদেমুল ইসলাম, স্টাফ অফিসার (জিটুআই) মেজর কাজী মোস্তফা আরেফিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) রুমানা আক্তার, খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি তরুণ কুমার ভট্টাচার্য প্রমুখ। এছাড়াও খাগড়াছড়ি বলী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাবুধন বলী ও অন্যান্য সদস্যরা।

আয়োজকরা জানান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পুরুষ ৭৮ ও ১৪ জন নারী বলীসহ মোট ৮২জন বলী খেলায় অংশগ্রহণ করেন। পুরুষদের মধ্যে কুমিল্লার বাঘা মো: শরীফ চ্যাম্পিয়ন এবং দ্বিতীয় হন মো: রাশেদ মাল। নারীদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন খাগড়াছড়ি সদরের পাহাড়ি মেয়ে মাশিনুর মারমা।

খেলা শেষে সন্ধ্যা ৭টায় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ২০৩পদাতিক বিগ্রেড ও রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ বিজয়ীদের মাঝে মেডেল, ট্রফি ও নগদ অর্থ হাতে তুলে দেন।

পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ বলেন, শান্তি ও স¤প্রীতির সঙ্গে মিলেমিশে এখানে আমরা বসবাস করব। আমরা খাগড়াছড়ির স্থানীয়দের সঙ্গে এক হয়ে সামনে আরও অনুষ্ঠান আয়োজন করব।

রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ আরো বলেন, শুধু খেলাধুলা নয়, এই বলী খেলা হচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এই খেলার মাধ্যমে শান্তি-স¤প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় করতে ভূমিকা রাখবে। এটি তরুণ ও যুবসমাজকে শৃঙ্খলা ও শারীরিক সক্ষমতার অনুপ্রেরণা দেয়।

পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা বলেন, নারী বলীদের অংশগ্রহণ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আগামী দিনে মেয়েরা আরও বেশি এই খেলায় এগিয়ে আসবে বলে আশা করি।

৪টি গ্রæুপে ৮২জন বলীর অংশগ্রহণ, চ্যাম্পিয়নদের জয়জয়কার। প্রথমবারের মতো বলী খেলায় নারী ও পুরুষ মিলিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র চারটি বিভাগে ৮২জন বলী অংশ নেন।

সিনিয়র পুরুষ বিভাগে কুমিল্লার বাঘা শরীফ চ্যাম্পিয়ন হন। তিনি বলেন, এই জয়ের পেছনে আছে কঠোর পরিশ্রম, পাহাড়ের দর্শকদের ভালোবাসা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।

জুনিয়র বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন নয়ন। যিনি বলেন, প্রথমবার এখানে খেলতে এসে এমন সাড়া পাবো ভাবিনি, দর্শকদের গর্জনে যেন আমি আরও সাহস পেয়েছি!”

নারী বিভাগে চমক দেখিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন খাগড়াছড়ির মাসিনু মারমা। যিনি বলেন, অনেক কষ্ট করেছি এই খেলায় অংশ নেওয়ার জন্য। নারীরা সব পারে-এই বার্তাই দিতে চেয়েছি।

দর্শকদের মুখেও প্রশংসার সুর:
গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শক শ্রেষ্ঠী চাকা বলেন, “প্রতিটি খেলা ছিল চোখধাঁধানো। সবচেয়ে ভালো লেগেছে নারী বলীদের সাহসিকতা।”

মনিতা ত্রিপুরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছেন খেলা দেখতে, তিনি বলেন“এত বড় আয়োজন আগে কখনো দেখিনি। মেয়েরা যেভাবে খেলেছে, তাতে গর্ব হয় খাগড়াছড়ির মেয়েদের ওপর।”

এদিন দর্শকদের জন্য ছিল আকর্ষণীয় পুরস্কার, তাৎক্ষণিক লটারির চমক ও খাবারের স্টল। পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে তৈরি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
এই আয়োজন শুধু খেলাধুলা নয়, পাহাড়ি সংস্কৃতি, স¤প্রীতি ও স্থানীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণের এক গর্বিত সাক্ষ্য। খাগড়াছড়ির এই ঐতিহাসিক বলী খেলা প্রমাণ করেছে- ভবিষ্যতের পথ দেখাতে পারে অতীতের ঐতিহ্যই।

খাগড়াছড়িতে শক্তি, সাহস, সম্মান আর পাহাড়ি ঐতিহ্যের এক মেলবন্ধনে অনুষ্ঠিত হলো খাগড়াছড়ির বহুল প্রতীক্ষিত ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা। গ্যালারিতে উপচে পড়া হাজারো দর্শকের করতালি, ঢাক-ঢোলের তালে তালে রিংয়ে বলীদের লড়াই। সবকিছু মিলে খাগড়াছড়ি যেন ছিল উৎসবের শহর।