খাগড়াছড়ির পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী হেডম্যান-কার্বারী নেটওয়ার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত


খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী হেডম্যান-কার্বারী নেটওয়ার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি এবং প্রথাগত ভূমি ব্যবস্থাপনায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে জেলাতে নারী হেডম্যান-কার্বারী নেটওয়ার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য-“পার্বত্য চুক্তির আলোকে ভূমিতে নারীর অধিকার নিশ্চিত করণ”র এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রোববার(১৭ই ফেব্রæুয়ারী) দুপুরে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের অডিটোরিয়ামে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি আয়োজন করে সিএইচটি নারী হেডম্যান-কার্বারী নেটওয়ার্ক।
সম্মেলনে উপস্থিত বিশিষ্টজনরা-সিএইচটি নারী হেডম্যান-কার্বারী নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া ত্রিপুরার সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান আলোচক ছিলেন রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, এবং প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন-মং সার্কেলের রানী উখেংচিং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য রক্তোৎপল ত্রিপুরা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) রুমানা আক্তার, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য শেফালিকা ত্রিপুরা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান, এএলআরডি’র উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি, জেলা হেডম্যান কার্বারি অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা।
নারীদের ভূমি অধিকারের ৭দফা দাবি সমূহ-সম্মেলনে নারী হেডম্যান-কার্বারীরা পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকার ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার নিশ্চিতকরণের দাবিতে ৭দফা প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন: নবনিযুক্ত নারী কার্বারীদের সরকারি সম্মানী ভাতা নিশ্চিত করা।
নারী হেডম্যান-কার্বারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। ২০১৬সালে প্রস্তাবিত রাজা, হেডম্যান ও কার্বারীদের ভাতা দ্রæুত কার্যকর করা। হেডম্যান ও কার্বারীদের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে ধাপে ধাপে অফিস নির্মাণ করা। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
ভূমিতে নারীর উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা। ভিসিএফ (ভিলেজ কমন ফরেস্ট) বন্দোবস্তের জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদ ও প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
নারী নেতৃত্বের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ-সিএইচটি নারী হেডম্যান-কার্বারী নেটওয়ার্ক পার্বত্য অঞ্চলে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি ভূমি অধিকার ও উত্তরাধিকারের স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
এ লক্ষ্যে তারা সম্মেলন, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, প্রচারাভিযান ও লবিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী রাজা, হেডম্যান ও কার্বারী ব্যবস্থা অঞ্চলটির সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা, খাজনা আদায় ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। তবে, নারী নেতৃত্বের অভাব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ না থাকায় নারীরা এখনো পিছিয়ে।
নারী কার্বারী নিয়োগ: একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ-নারী নেতৃত্বকে শক্তিশালী করতে চাকমা ও মং সার্কেলের পক্ষ থেকে প্রতিটি মৌজায় নারী কার্বারী নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে: চাকমা সার্কেলে ৪২৫জন, মং সার্কেলে ১৬৬ জন, বোমাং সার্কেলে ১৯জন নারী কার্বারী কর্মরত আছেন।
নারী নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন-সম্মেলনের আলোচনায় বক্তারা বলেন, শুধু নারী কার্বারী নিয়োগই যথেষ্ট নয়, বরং তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। তাহলে তারা সমাজ উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারবেন।
নারী হেডম্যান-কার্বারীদের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করা গেলে নারীদের ভূমি অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা আরও সুসংহত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন