খাগড়াছড়ির রামগড় সীমান্ত দিয়ে শিশুসহ ৫জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ, ৮৪জন পুশ ইন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড় সীমান্ত দিয়ে শিশুসহ পাঁচজনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) ভোরের দিকে তাঁদের আটক করে বিজিবি। জেলার রামগড় সীমান্তে নারী ও শিশুসহ ৫জন ব্যক্তিকে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গত বুধবার (২১ মে) গভীর রাতে রামগড় পৌরসভার ফেনীর কূলের কাজীরচর এলাকা দিয়ে ১১৪ব্যাটালিয়নের বিএসএফ তাদের জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।

এর আগে গত ৭মে জেলার মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ির কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ৭৯জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ করেছে বিএসএফ। মাটিরাঙ্গা উপজেলার শান্তিপুর দিয়ে ২৭জন, তাইন্দং দিয়ে ১৫জন ও পানছড়ি উপজেলার লোগাং রুপসেনপাড়া বিওপি’র সীমান্ত দিয়ে ৩০জনকে বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী(বিএসএফ)। এখন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সর্ব মোট ৮৪জন পুশ ইন করা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা ভারতের হরিয়ানার একটি ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রæুম সীমান্তের ফেনী নদীতে গভীর রাতে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেওয়া হয় তাঁদের। ভোরবেলা তাঁরা বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ৪৩ ব্যাটালিয়নের মহামুনি বিওপির বিজিবি বৃহস্পতিবার (২২শে মে) সকাল ৬টার দিকে তাদের আটক করে। আটককৃতরা হলো উমেদ আলী (৪২), তার স্ত্রী সেলিনা বেগম(৩৫), তিন কন্যা সন্তান সুমাইয়া(৮), রুম্পা(১২) ও রুমি(১৫)।

বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া উমেদ আলী বলেন, ভারতের হরিয়ানা থেকে তাদের ধরে এনে হাত-পা বেধে ত্রিপুরা সীমান্তের ফেনী নদীতে ফেলে দেয় বিএসএফ। তারা হরিয়ানায় ইটের ভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

উমেদ আলী আরও বলেন, বুধবার (২১ মে) দিবাগত ১২টার দিকে মারধর করে জোরপূর্বক নদীতে ফেলে দেওয়ার পর সারারাত তারা নদীর পানিতে ভেসে এসে বৃহস্পতিবার (২২শে মে) ভোর ৫টার দিকে নদীর বাংলাদেশ কিনারায় ভিড়ে। পরে তীরবর্তী গ্রামবাসিদের সহায়তায় তারা সোনাইপুল এলাকায় পৌঁছে।

তিনি আরও জানান, এর আগে বিএসএফ তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন ইত্যাদি কেড়ে নেয়। নদীতে ফেলার আগে তাদের কোমরে প্লাস্টিকের খালি বোতল বেধে দেয়া হয়। ফলে তারা নদীর পানিতে ভাসতে ভাসতে এপারে চলে আসে।

রামগড় উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ইসমত জাহান তুহিন বলেন, মানবিক কারণে আটককৃতদের রামগড় হাই স্কুলে বিজিবি ও পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(দায়িত্বপ্রাপ্ত) ইসমত জাহান আরো বলেন, ৫জনকে সাময়িকভাবে রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা হয়েছে।

মানবিক দিক বিবেচনা করে তাঁদের উপজেলা প্রশাসন থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিজিবি, উপজেলা প্রশাসন ও রামগড় থানা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।

এর আগে গত ৭মে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ির কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ৭৯জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ করেছে বিএসএফ। মাটিরাঙ্গা উপজেলার শান্তিপুর দিয়ে ২৭জন, তাইন্দং দিয়ে ১৫জন ও পানছড়ি উপজেলার লোগাং সীমান্ত দিয়ে ৩০জনকে বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী(বিএসএফ)।

গত বুধবার(৭ই মে) ভোরে জোরপূর্বক তাদেরকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানা সম্ভব হয়নি। গত বুধবার (৭ই মে) ভোরে জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার গুমতি ইউনিয়নের দক্ষিন শান্তিপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন ৩টি পরিবারের আনুমানিক ২৭জন ভারতীয় নাগরিক। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।

সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ভারতীয় নাগরিকরা উঠেন সীমান্তবর্তী জনৈক আবু তাহের এর বাড়িতে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবু তাহের ভারতীয়দের উদ্বৃতি দিয়ে জানান, ‘তাদেরকে ভারতের গুজরাট থেকে ত্রিপুরায় নিয়ে আসে বিএসএফ সদস্যরা। পরে সেখান থেকে গভীর রাতে কাটাতারের বেড়া পার করে ছেড়ে দিয়ে যায় তারা। ভোরে আজানের শব্দ শুনে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে তার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে সকালে তাদেরকে স্থানীয় ইউপি সদস্যের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

’আবু তাহের জানান, বর্তমানে ভারতীয় নাগরিকরা আবুল হোসেন মেম্বারের বাড়িতে রয়েছেন।

এছাড়া যামিনী পাড়ার ২৩বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন তাইন্দং বিওপি’র সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ২২জন ভারতীয় (গুজরাট রাজ্যের) মুসলিম নাগরিক মাটিরাঙ্গা অনুপ্রবেশ করে বলে জানা যায়।

এছাড়াও খাগড়াছড়ির ৩২বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন লোগাং রুপসেনপাড়া বিওপি’র সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ৩০জন ভারতীয় (গুজরাট রাজ্যের) মুসলিম নাগরিক পানছড়ি উপজেলায় অনুপ্রবেশ করে বলে জানা যায়।
এসব নাগরিকদের পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশী নাগরিক ছিলেন এমন অজুহাত দেখিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করানো হচ্ছে বলে জানা যায়।

বাংলাদেশে যারা অনুপ্রবেশ করেছে তাদের সাথে আরও ৪০০থেকে ৫০০জন ভারতী মুসলিম বিএসএফের তত্তাবধানে রয়েছে বলে জানা যায়। তাদেরকে বিএসএফ কর্তৃক খেদাছড়া, যামিনীপাড়া, খাগড়াছড়ি ও পানছড়ি সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পুশ ইন করা করা হতে পারে।

এ ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার জন্য গুজরাট রাজ্য হতে বিমান যোগে ত্রিপুরা রাজ্যে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে এখনো বিজিবি বা প্রশাসনের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অবশ্য এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি দায়িত্ব প্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা জানান, মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি সীমান্তে জন ৭৯জন অনুপ্রবেশ করেছে। তারা বিজিবি দায়িত্বে আছেন। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাদের খাওয়ানো থাকার ব্যবস্থা করবে প্রশাসন।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে জেলার রামগড় সীমান্তে নারী ও শিশুসহ ৫জন ব্যক্তিকে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। তবে তাঁদের আটক করে বিজিবি। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাঁদের উপজেলা প্রশাসন থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিজিবি, উপজেলা প্রশাসন ও রামগড় থানা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এই পর্যন্ত ৮৪জন পুশ ইন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ৬ই মে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে ৭৯জনকে বাংলাদেশে পুশইন করে বিএসএফ।