খাগড়াছড়ির শহরের বাইরের স্কুলেই বাজিমাত, এসএসসি পাসের হার ৬০.৪৯%

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার শহরের বাইরের স্কুলেই বাজিমাত, খাগড়াছড়ির এসএসসি পাসের হার ৬০.৪৯%, ভাইবোনছড়ার দুটি স্কুলে দৃষ্টান্ত স্থাপন, জিপিএ-৫পেয়েছে ২৫জন।
খাগড়াছড়ি জেলায় এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার সামগ্রিক ফলাফলে মিশ্র চিত্র দেখা গেলেও, শহরের বাইরের কয়েকটি স্কুল যেন ব্যতিক্রম এক আলো ছড়িয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ির তিন বোর্ড মিলে মোট পরীক্ষার্থী ৮৯৫৭জন, যার মধ্যে পাস করেছে ৫৭৮৫জন। পাসের গড় হার ৬০.৪৯শতাংশ, আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৩১জন শিক্ষার্থী।
বোর্ডভিত্তিক ফলাফল এক নজরে-শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষার্থী পাশ পাশের হার জিপিএ-৫, সাধারণ শিক্ষাবোর্ড থেকে মোট পরীক্ষার্থী ৮হাজার ৭৬জন ৪হাজার ৯০৪জন, পাসের হার ৬০.৭২% এবং জিপিএ-৫পেয়েছেন ২১৯জন। মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড থেকে ৬৮৩শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪০৯জন, পাসের হার ৫৯.৮৮% এবং জিপিএ-৫পেয়েছেন ৯জন এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে থেকে ৭৯৮জনের মধ্যে পাস করেছেন ৪৭২জন, পাসের গার ৫৯.১৪% এবং জিপিএ-৫পেয়েছেন ৩জন।
তিন ক্যাটাগরিতে সর্বমোট পরীক্ষার্থী ৮হাজার ৯৫৭জনের মধ্যে পাস করেছেন ৫হাজার ৭৮৫জন, পাসের হার ৬০.৪৯% এবং সর্বমোট জিপিএ-৫পেয়েছেন ২৩১জন।
শহর কেন্দ্রীক স্কুলগুলোয় বিস্ময়কর ফল-শহরের কিছু স্কুল যেখানে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনে ব্যর্থ, সেখানে জেলা সদরের বাইরের বিদ্যালয়গুলো নিজেদের যোগ্যতা ও প্রস্তুতি দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
বিশেষ করে ভাইবোনছড়া মুনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬৯জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৫জন শিক্ষার্থী পেয়েছে জিপিএ-৫।
অন্যদিকে মিলেনিয়াম ভাইবোনছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৪৯জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৪৮জন পাস করেছে, যা প্রায় শতভাগ। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০জন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে, যা জেলার মধ্যে অন্যতম সেরা।
তবে শহর কেন্দ্রীক স্কুলগুলোর মধ্যে খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে ১৬৮জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করে ১৬৬জন, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭৪জন।
এ বিষয়ে মুনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল মিত্র চাকমা বলেন, আমাদের স্কুল থেকে এবার মোট পরীক্ষার্থী ৬৯জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলো। সবাই পাস করেছে। জিপি-এ ৫পেয়েছে ৫জন। আমরা গর্বিত।
মিলেনিয়াম ভাইবোনছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক তাতু মনি চাকমা বলেন, আমাদের স্কুলের এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ১৪৯জন পরীক্ষা দিয়ে ১৪৮জন পাস করেছে। জিপিএ-৫পেয়েছে ২০জন। আমি শিক্ষার্থীদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। তারা যেন এই ধারা অব্যাহত রাখে।
খাগড়াছড়ি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, খাগড়াছড়ি জেলায় এ বছর সাধারণ শিক্ষাবোর্ড থেকে ৮হাজার ৭৬জনের মধ্যে ৪হাজার ৯০৪জন, পাসের হার ৬০.৭২% এবং জিপিএ-৫পেয়েছেন ২১৯জন মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড থেকে৬৮৩জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছেন ৪০৯জন, পাসের হার ৫৯.৮৮% এবং জিপিএ-৫পেয়েছেন ৯জন।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থী মোট ৭৯৮জনের মধ্যে পাস করেছেন ৪৭২জন, পাসের গার ৫৯.১৪% এবং জিপিএ-৫পেয়েছেন ৩জন। তিন ক্যাটাগরিতে সর্বমোট পরীক্ষার্থী ৮হাজার ৯৫৭জনের মধ্যে পাস করেছেন ৫হাজার ৭৮৫জন, পাসের হার ৬০.৪৯% এবং সর্বমোট জিপিএ-৫পেয়েছেন ২৩১জন।
বিশ্লেষণে যা উঠে এসেছে-এসব সফল বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক, সময়মতো ক্লাস, নিয়মিত পরীক্ষা ও অভিভাবকদের তত্ত¡াবধান ছিল প্রশংসনীয়। অন্যদিকে শহরাঞ্চলের কিছু প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পড়াশোনা ও সঠিক পরিকল্পনার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলায় শিক্ষার হার বাড়লেও ফলাফলে এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে। তবে শহরের বাইরের স্কুলগুলোর চমকপ্রদ সাফল্য দেখিয়ে দিয়েছে, প্রতিকূল পরিবেশেও যদি মনোযোগ, অধ্যবসায় ও সঠিক দিকনির্দেশনা থাকে তাহলেই জয় সম্ভব।
জিপিএ-৫প্রাপ্ত রাকিবুল: দারিদ্রতাকে পেছনে ফেলে হতে চান ডাক্তার-খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার এপিবিএন আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী কাটিং টিলা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো: রাকিবুল ইসলাম। চারদিকে দারিদ্র্যের ছাপ নিয়েই থেমে ছিলো না সে। পিতা টমটম চালিয়ে সন্তানের সুদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে সন্তান রাকিবুল ইসলামকে পাঠিয়েছে স্কুলে।
দারিদ্র্যকে শুধু চ্যালেঞ্জ নয় রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সে ছেলেই অর্জন করেছেন মহালছড়ি উপজেলার মাধ্যমিকের শ্রেষ্ঠ সাফল্য বিজ্ঞান বিভাগ হতে জিপিএ ৫। বাড়িতে নেই সাফল্য অর্জনের ন্যূনতম আনন্দ। অথচ হতে পারত ভিন্ন চিত্র মেতে থাকতে পারত চুড়ান্ত সাফল্যের আনন্দে।
যেখানে শিক্ষা জীবনে প্রথম সাফল্য নীরবতায় বড় সাফল্যতেও নেই কোন উৎসাহ। টাকার অভাবে নিয়মিত প্রাইভেট পড়া হয়নি তার। বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত, কোনোমতে শিক্ষকদের সহায়তায় এবং নিজের প্রচেষ্টায় পড়াশোনা করে এত কষ্টের সাফল্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।
প্রতিবেশীরা জানান, রাকিবের সাফল্যে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এই অদম্য মেধাবী এগিয়ে যাবে অনেক দূর।
রাকিবুল জানান, আমি ডাক্তার হয়ে ফ্রিতে গরিব মানুষের সেবা করতে চাই। টাকার অভাবে আমি কলেজে ভর্তি হতে পারব না মনে হচ্ছে। গরিব হয়ে জন্মেছি বলেই হয়তো টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। বাবা অটো রিকশা চালক। সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে বইয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া শেষ করতে পেরেছি। কিন্তু উচ্চশিক্ষা লাভে অর্থের জোগান কোথা থেকে আসবে, কীভাবে আসবে, এ চিন্তা সারাক্ষণ ভাবিয়ে তুলছে আমাকে।
প্রতিবেশী এবং মহালছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি দীপক সেন জানান, রাকিবুল মেধাবী ছাত্র হওয়ায় পড়াশোনার বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেক সহযোগিতা করেছেন।
এপিবিএন স্কুলের সহকারী শিক্ষক মিলটন চাকমা কলিন বলেন রাকিবুল অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। এসএসসিতে ভালো ফলাফলও করেছে। কিন্তু এখন ভালো কলেজে ভর্তি করতে ও কলেজের পড়ালেখা চালাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সেটা জোগাড় করা তাদের পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
রাকিবুল ইসলাম এর বাবা শুকুর আলী জানান, আমার ছেলে জিপি-৫ পেয়েছে, আমরা অত্যন্ত খুশি। স্কুলের স্যারেরা ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন কারণ আমি সামান্য অটো রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন