খাগড়াছড়ির সহিংসতার ঘটনায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি প্রত্যাখ্যান

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত্র কমিটি প্রত্যাখ্যান, নারীর ওপর সহিংসতা কিশোরী ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান দুই নারী সংগঠনের, জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্তের দাবি করেছে ইউপিডিএফ।

জেলার গুইমারায় গত ২৮শে সেপ্টেম্বর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা, হত্যাকান্ড, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে জাতিসংঘের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)।

বুধবার(১লা অক্টোবর ২০২৫) সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফের মুখপাত্র অংগ্য মারমা স্থানীয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণাকে জনরোষ প্রশমিত করার জন্য লোকদেখানো প্রচেষ্টা উল্লেখ করে বলেন, “অতীতে এ ধরনের বহু তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও আজ পর্যন্ত কোন হামলায় অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি, এমনকি অনেক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি।”

এ প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “গত বছর ১৯-২০শে সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় সরকার উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও তার কোন রিপোর্ট আজও প্রকাশ করা হয়নি। হামলা ও হত্যাকান্ডে জড়িতদেরও বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি।”

পার্বত্য চট্টপ্রামের বর্তমান বাস্তবতায় স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক কিংবা জাতীয় উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে তার প্রতি জনগণের কোন আস্থা থাকবে না বলে অংগ্য মারমা মন্তব্য করেন এবং বলেন, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত যেভাবে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টতায় করা হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় সেভাবে করা জরুরী।

তিনি অবিলম্বে জাতিসংঘকে জড়িত করে খাগড়াছড়ি ও গুইমারা হামলার ঘটনা তদন্তের দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালায় ৮ম শ্রেণীর মারমা কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ‘ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি’ মর্মে যে মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশ করা হযেছে তা প্রত্যাখ্যান করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিযেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন(এইচডব্লিউএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।

বৃহস্পতিবার (২রা অক্টোবর ২০২৫) হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ান সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যৌথ বিবৃতিতে অবিলম্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা উদঘাটন, সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ও কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং অভিযুক্ত ধর্ষকদের সকলকে গ্রেফতারপূর্বক সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।

বিবৃতিতে দুই নারী নেত্রী রাষ্ট্রীয় বিশেষ সংস্থা কর্তৃক মেডিকেল রিপোর্টের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার কথা তুলে ধরে বলেন, সিঙ্গিনালার ৮ম শ্রেণীর কিশোরীর ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার রিপোর্টটি নতুন নয়। অতীতেও পাহাড়ি নারী ধর্ষণের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে।

ফলে অতীতে বহু ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও জড়িতদের বিচার ও শাস্তি হয়নি। মূলত পাাহাড়ি নারী ধর্ষণের ক্ষেত্রে মেডিকেল রিপোর্টের ওপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণকে হাতিয়ার বানিয়ে জাতিগত নির্মূলীকরণ নীতি বাস্তবাযনের ষড়যন্ত্র চলছে।

যার কারণে পাহাড়ি নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে তা ধামাচাপা দিতে এবং ধর্ষককে রক্ষা করতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা উঠেপড়ে লেগে যায়, যা সিঙ্গিনালায় কিশোরী ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। ধর্ষণের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে ছাত্র জনতার ওপর হামলা, হত্যাকান্ড, অগ্নিসংযোগের মতো বর্বরোচিত ঘটনা সংঘটিত ঘটিত করা হয়েছে।

নেত্রীদ্বয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত মারমা কিশোরী ধর্ষণের মেডিকেল রিপোর্টটি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীর পিতার দায়েরকৃত মামলা, ঘটনাস্থলের সুস্পষ্ট আলামত ও ভুক্তভোগীর জবানবন্দি থাকা সত্ত্বেও মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত না পাওয়া অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। এটি প্রশাসন ও প্রভাবশালী মহল কর্তৃক ধর্ষকদের রক্ষার পদক্ষেপ ছাড়া কিছুই নয়।

আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে নেত্রীদ্বয় অবিলম্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা উদঘাটন, সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ও কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং অভিযুক্ত ধর্ষকদের সকলকে গ্রেফতার করে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।

গুইমারা উপজেলায় মধ্য রাতে ধর্মীয় প্রথা ও সামাজিক রীতি লংঘন করে তিন শহীদকে দাহ করানোর ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে ইউপিডিএফ। গুইমারায় ২৮শে সেপ্টেম্বর শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলাকালে সহিংস হামলায় নিহত তিন জনের মরদেহ মধ্য রাতে ধর্মীয় রীতি ও সামাজিক প্রথা লংঘন করে আত্মীয় স্বজনের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় সংস্থা-সেনা পুলিশের কড়া নজরদারিতে জোরজবরদস্তিমূলক দাহক্রিয়া অনুষ্ঠান করানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে ইউপিডিএফ।