খাগড়াছড়ির সহিংসতার ঘটনায় গুইমারায় রামসু বাজারে হামলা ক্ষত সুগভীর ষড়যন্ত্রের অংশ ক্ষতিগ্রস্থরা

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে ধর্ষণের অভিযোগে আটক শয়ন শীলের বাবার দোকান ভাঙচুরের ঘটনায় খাগড়াছড়ি সদর থানায় অজ্ঞাত ৭০-৮০জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: আব্দুল বাতেন মৃধা।
এ ছাড়া তিনি জানান, ১৪৪ধারা এখনো জারি রয়েছে। তবে দিনের বেলা শিথিল থাকবে। খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা সহিংসতায় আক্রান্তের হতাহতের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তরা কোন মামলা, থানায় অভিযোগ দায়ে কেউ করেনি।
এইদিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারা উপজেলায় রামসু বাজারে হামলা ক্ষত সুগভীর ষড়যন্ত্রের অংশ পাথর হয়ে দাড়িয়ে থাকা ক্ষতিগ্রস্থরা। জেলার গুইমারা বাজার থেকে আনুমানিক মাত্র আধা কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে মারমা অধ্যুষিত রামসু বাজার। ১৯৯১সালে বটতলা নামক গ্রাম থেকে রামসু মারমা এক ব্যক্তি প্রথম সেখানে একটি চায়ের দোকান দিয়েছিলেন। তখন ছাত্র-ছাত্রীরা গুইমারা স্কুলে আসা যাওয়ার সময় তার দোকানে বিশ্রাম নিত।
এরপর তাকে দেখে তার দোকানের পাশে মংরে মারমা নামে আরও একজন চায়ের দোকান খোলেন। এভাবে একের পর এক দোকান হলে ক্রমে সেখানে একটি বাজার গড়ে ওঠে। আর বাজারটি প্রথম যিনি চায়ের দোকান দিয়েছিলেন সেই রামসু মারমার নামেই হয়ে যায়।
পুড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে পাহাড়িদের(মারমা) ৫৩টি দোকান ছিল।
হলুদের গোডাউনসহ বাঙালিদের দোকান ৮টি। এসব দোকানে কাপড়-চোপড়, ঔষধ, সার, সবজি, শুটকি, কসমেটিক সবই বিক্রি হতো। সেলুন, মোটর সাইকেল মেরামত ও কম্পিউটার কম্পোজের দোকানও ছিল। আর ছিল চা, খাবার ও মুদির দোকান। এসবই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এমনকি সেখানে শাকসবজি ও তরিতরকারী রাখার জন্য একটি হিমাগারও রয়েছে। সেটা অবশ্য পুড়িয়ে দেয়া হয়নি।
গুইমারা বাজারের একেবারে কাছে হওযায় রামসু বাজারটি অনেক ব্যবসায়ীর ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠেছিল। এই বর্ধিঞ্চু বাজারটিকে তারা প্রতিদ্বন্ধী মনে করত। কারণ আশেপাশের অনেক পাহাড়ি গ্রামের লোকজন তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস এই বাজার থেকে সংগ্রহ করতে পারত। তাদের গুইমারা বাজারে যাওয়া লাগত না।
অপরদিকে অংসাচিং মারমা তারা মনে করেন, গুইমারা সেনা ব্রিগেডের একেবারে কাছে পাহাড়িদের একটি বাজারকে সেনারা ভালো চোখে দেখত না। তারা “নিরাপত্তার” কারণে তাদের ক্যাম্পের চারপাশে কেবল বাঙালিদের বসতি রাখতে চায়।
এ কারণে রামসু বাজারটি এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও সেনাদের চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ায়। তারা মারমা অধ্যুষিত এই বাজারটি ধ্বংস করে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে। গত ২ শে সেপ্টেম্বর সড়ক অবরোধের দিনটিকে তারা হামলার মোক্ষম সময় বলে ধরে নেয়।
রামসু বাজারকে টার্গেট করার উদ্দেশ্য হলো: প্রথমত, গুইমারায় উঠতি মারমা ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে দেয়া। দিতীয়ত্ব, রামেসু বাজারকে গুইমারা বাজারের প্রতিদ্বন্ধী হয়ে ওঠাকে রোধ করা। তৃতীয়ত:, রামেসু বাজার ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে মারমাদের উচ্ছেদ করে তাদের জমিজমা দখল করা এবং এভাবে এলাকাটিকে একটি বাঙালি মুসলিম সেটলার অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত করা। চতুর্থত:, রামেসু বাজার পুড়ে যাওয়া এলাকাটি গুইমারা ব্রিগেডের “নিরাপত্তা ঝুঁকি” কমানো।
ষড়যন্ত্রকারী-হামলাকারীরা মনে করেছিল হামলার দায় ইউপিডিএফের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের অপরাধ আড়াল করা সম্ভব হবে এবং সড়ক অবরোধের সময় আক্রান্ত হওয়ার কারণে এলাকার পাহাড়িরা অর্থাৎ মারমারা ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠবে বা তাদের বিপক্ষে চলে যাবে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারী সেনা সেটলারদের সেই ধারণা ছিল সম্পূর্ণ ভুল, জনগণ তাদের ইচ্ছা পূরণ করেনি।
বরং হামলার পর এলাকার মারমা, ত্রিপুরা ও চাকমারাসহ সবাই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে যে, বাঁচার জন্য নিজস্ব পার্টি ও সংগঠনের কোন বিকল্প নেই। আর ইউপিডিএফ-ই হলো তাদের নিজেদের পার্টি। একমাত্র এই পার্টিই জনগণের স্বার্থ ও অধিকারের জন্য বিরামহীন এবং আন্তরিকভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
সাধারণ জনগণের কাছে এখন অনেক দালাল সংগঠনের মুখোশও খুলে পড়েছে। এই সংগঠনগুলো কখনো আওয়ামীলীগের আবার কখনো বিএনপির দালালি করেছে, এখনও করছে। সামান্য কিছু টাকা বা সুবিধা পেয়ে এরা নিজেদের জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দেয় এবং বিএনপি ও আওয়ামীলীগের স্বার্থ উদ্ধার করে দেয়।
কিন্তু জনগণের বিপদের সময় তাদের দেখা মেলে না। যেমন এখন রামেসু বাজারের মানুষদের দুঃসময়ে তাদেরকে জনগণ পাশে পাচ্ছে না। জনগণের এই দুর্দিনে একমাত্র যে পার্টি বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো তাদের পাশে রয়েছে সে হলো ইউপিডিএফ।
বলা বাহুল্য, ইউপিডিএফের এই জনস্বার্থের পাহারাদারের ভূমিকার কারণেই সেনা-শাসকগোষ্ঠী পার্টির ওপর এত উগ্রভাবে আক্রোশ প্রকাশ করে থাকে। ইউপিডিএফের বাধার কারণেই তারা তাদের পাহাড়ি স্বার্থ বিরোধী ঘৃণ্য এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারছে না।
আইচুক ত্রিপুরা বলেন, সঠিক নেতৃত্ব ছাড়া কোন আন্দোলন সফল হয় না, কোন নিপীড়িত জাতি মুক্তি বা অধিকার পেতে পারে না। সেনা-শাসকগোষ্ঠী এই সত্য খুব ভালোভাবে জানে। সে কারণে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম বা পাহাড়ি জনগণকে নেতৃত্বহীন করতে চায়। শরীর থেকে মাথা কেটে দিলে যেমন কোন মানুষ বা প্রাণী বাঁচতে পারে না, তেমনি কোন জাতির নেতৃত্ব বা পার্টিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা গেলে সেই জাতিও টেকে না।
এই কারণে শাসকগোষ্ঠী ইউপিডিএফকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। বিচ্ছিন্ন করার অনেক কৌশলের মধ্যে দু’টি হলো পার্টির বিরুদ্ধে দমনপীড়ন ও অপপ্রচার চালানো। যাতে জনগণ প্রকাশ্যে পার্টিকে সমর্থন করতে ভয় পায় এবং এভাবে পার্টিকে সাধারণ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর পাহাড়ি বিরোধী ষড়যন্ত্র ও কর্মকান্ড পার্টিকে বরং জনগণের আরো কাছাকাছি নিযে যায়। তারা ক্রমে দেখতে পায় একটি সংগ্রামী পার্টি ছাড়া তাদের অধিকার নিয়ে বাঁচার আর কোন উপায় নেই।
মিল্টন চাকমা বলেন, রামসু বাজারের হামলার পর পাহাড়ি জনগণ বুঝেছে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামে কেউ নিরাপদ নয়। ২৮শে সেপ্টেম্বরের হামলার আগের দিনও নিশ্চয়ই রামসু বাজারের পাহাড়ি মানুষ ভেবেছিল তারা “ভালো” ছিলেন। তারা কি ঘুর্ণাক্ষরেও মনে করেছিলেন তাদের ওপর হামলা হবে? আজ যারা মনে করছেন তারা “ভালো” আছেন, তাদেরও বোধোদয় হওয়া উচিত।
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যেক পাহাড়িকে বুঝতে হবে, সংগ্রাাম ছাড়া উপায় নেই। এই কথা বলার পর অনেকে বর্তমান আন্তঃজুম্ম সংঘাত ও অনৈক্যের প্রসঙ্গ তুলবেন। তাদেরকে বলতে চাই, কাজ বা দায়িত্ব ফাঁকি দেয়ার জন্য অলস অকর্মণ্য লোকের অজুহাতের অভাব হয় না।
যে সংঘাত ও অনৈক্যের অজুহাতে নিজের জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে চায় না, বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে চায় না, নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করতে চায় না, সে আসলে শত্রুকেই লাভবান করে। কথাটা কড়া হলেও, না বললেই নয়, সেজন্য বলতে হলো।
শেষে বলতে চাই, ষড়যন্ত্রকারী সেনা-সেটলারের আগুনে রামসু বাজার পুড়ে ছাই হয়েছে সত্য, কিন্তু সেই ছাই সার হয়ে পাহাড়িদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে পরিপুষ্ঠ ও বলবান করেছে। ইউপিডিফের নেতৃত্বে পাহাড়ি জাতিগুলোর মুক্তি আসবেই। এই বিশ্বাস সবার রাখা উচিত।
এই সত্যটি সেনা শাসকগোষ্ঠী আগাম জেনে গেছে। সেজন্য তারা ইউপিডিএফকে ভয় পাচ্ছে। তারা যে ইউপিডিএফকে ভয় পায় তা তাদের বক্তব্যে ও কাজকর্মে স্পষ্ট বোঝা যায়। তারা এখন সবাইকে ইউপিডিএফ মনে করে। সব আন্দোলনে তারা ইউপিডিএফের গন্ধ পায়। গত ২৭বছরের আন্দোলনে এটাই ইউপিডিএফের সবচেয়ে বড় অর্জন।
শত দমনপীড়ন সত্ত্বেও ইউপিডিএফ অন্যায়ের কাছে কখনও মাথা নত করবে না। আপনিও মাথা নত করবেন না। আপনি যদি অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করেন, যারা অন্যায়কারী তারাই আপনার কাছে একদিন মাথা নত করতে বাধ্য হবে।
গুইমারা উপজেলায় মধ্য রাতে ধর্মীয় প্রথা ও সামাজিক রীতি লংঘন করে তিন শহীদকে দাহ করানোর ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে ইউপিডিএফ। গুইমারায় ২৮শে সেপ্টেম্বর শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলাকালে সহিংস হামলায় নিহত তিন জনের মরদেহ মধ্য রাতে ধর্মীয় রীতি ও সামাজিক প্রথা লংঘন করে আত্মীয় স্বজনের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় সংস্থা-সেনা পুলিশের কড়া নজরদারিতে জোর জবর দস্তিমূলক দাহক্রিয়া অনুষ্ঠান করানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে ইউপিডিএফ।
মঙ্গলবার(৩০শে সেপ্টেম্বর ২০২৫) সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে ‘এভাবে দাহক্রিয়া করে ধর্মীয় রীতি ও সামাজিক প্রথা চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত ও গোটা সম্প্রদায়কে অবমাননা করা হয়েছে’ মন্তব্য করে ইউপিডিএফ মুখপাত্র অংগ্য মারমা অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বলেছেন, ‘কোন বিবেকবান সচেতন নাগরিক এ ধরনের চরম অবমাননা মেনে নিতে পারেন না। এ ক্ষত সহজে শুকাবে না’।
বিবৃতিতে অংগ্য মারমা আরও বলেন, ধর্ষণের বিচারের দাবিতে আহূত অবরোধের মতো গণতান্ত্রিক কর্মসূচীতে বাধা প্রদান ও গুলি করে নিরস্ত্র লোককে হত্যা বর্বরোচিত এবং এটি সুস্পষ্ট নাগরিক অধিকার লংঘন। কিন্তু নিহতদের লাশ সামাজিক প্রথা ও ধর্মীয় রীতিতে সৎকার করতে না দেয়ার মাধ্যমে গোটা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুভূতিতে আঘাত দেয়া হয়েছে, এটি হত্যাকান্ডের চেয়েও কম গুরুতর নয়।
উল্লেখ্য, গত পরশু ২৮শে সেপ্টেম্বর সিঙ্গিনালায় কিশোরী ধর্ষণের বিচারের দাবিতে আহূত শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচীতে সেনা ও সেটলাররা গুইমারায় পরিকল্পিতভাবে নিরস্ত্র জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রামেসু বাজারে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। এতে থোয়াইচিং মারমা(২৫), আখ্রক মারমা(২৪) ও আথুইপ্রæু মারমা(২৬) তিন জন ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়। অর্ধ শতাধিককে গুরুতর জখম হয়, অনেকে নিখোঁজ অবস্থায় রয়েছে।
নিহত তিন জনের মরদেহ খাগড়াছড়িতে ময়না তদন্তের নামে ইচ্ছেকৃতভাবে হাসপাতালে ফেলে রাখা হয়। পরে রাতের অন্ধকারে(রাত ১২টার দিকে) সেনা ও পুলিশ প্রহরায় গুইমারায় পাঠিয়ে তড়িঘড়ি করে আত্মীয়স্বজনের অনুপস্থিতিতে ধর্মীয় প্রথা অনুসরণ না করে দাহ করতে বাধ্য করা হয়। এতে জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
সেনাবাহিনীর বিবৃতি মিথ্যাচার ও নিজেদের কৃত অপরাধ আড়ালের ব্যর্থ চেষ্টা-ইউপিডিএফ অপদিকে “খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ২৭ ও ২৮শে সেপ্টেম্বর তারিখে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সম্পর্কে” সেনাবাহিনীর দেয়া বিবৃতিকে ‘মিথ্যার বেসাতি ও নিজেদের অপরাধ আড়াল করার ব্যর্থ চেষ্টা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর মুখপাত্র অংগ্য মারমা।
সোমবার (২৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৫) সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় হামলা সম্পর্কে দেশবাসীকে যেভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে, তাতে পাহাড়ের চলমান পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং হামলাকারীদের উৎসাহিত করবে।”
খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, খুন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি ও গুইমারা রিজিয়নের দুই ব্রিগেড কমান্ডার, তাদের পোষ্যপুত্র ঠ্যাঙাড়ে ‘মোত্তালেব বাহিনী’ ও উগ্র ধর্মান্ধ সেটলারদের দায়ী করে তিনি বলেন, “সিঙ্গিনালায় মারমা কিশোরী ধর্ষণের বিচারের দাবিতে চলমান গণআন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত এবং ধর্ষকদের রক্ষা করতে পরিকল্পিতভাবে সেটলারদের লেলিয়ে দিয়ে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়েছে।”
ঘটনা পরম্পরা তুলে ধরে অংগ্য মারমা বলেন, “গত ২৩শে সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহরের উপকণ্ঠ সিঙ্গিনালায় অস্টম শ্রেণী পড়–য়া এক মারমা কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হন। তার প্রতিবাদে ‘জুম্ম ছাত্র জনতার’ ব্যানারে সাধারণ জনগণ ২৪শে সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহরে সমাবেশের আয়োজন করে এবং এই সমাবেশ থেকে ৩দফা কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। কর্মসূচিগুলো হলো পরদিন(অর্থাৎ ২৫শে সেপ্টেম্বর) অর্ধদিবস খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধ, ২৬শে সেপ্টেম্বর মহাসমাবেশ এবং ২৫-২৭শে সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজে ক্লাশ বর্জন, যা সফলভাবে পালিত হয়।
“২৫ সেপ্টেম্বর আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি সফল হলে রাত সাড়ে আটটায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পান খাইয়া পাড়া মুন্ডি দোকান থেকে ‘জুম্ম ছাত্র জনতার’ নেতা উক্যনু মারমাকে অপদস্থ করে টেনে হেঁচড়ে গাড়িতে তুলে খাগড়াছড়ি সেনা জোন সদর দপ্তরে নিয়ে যায়। তার প্রতিবাদে শহরবাসী তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তায় নামলে সেনাবাহিনী দু’ঘন্টা পর রাত সাড়ে দশটার দিকে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
“২৬শে সেপ্টেম্বর শহরের চেঙ্গী স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশ থেকে পরদিন ২৭শে সেপ্টেম্বরের জন্য জেলাব্যাপী পূর্ণ দিবস সড়ক অবরোধের ডাক দেয়া হয়।
“২৭শে সেপ্টেম্বরের অবরোধ বানচালের হীনউদ্দেশ্যে কতিপয় উগ্র সাম্প্রদায়িক সেটলারদের মাঠে নামিয়ে দেয়া হলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যায়। তারা প্রথমে খেজুরবাগান এলাকায় গায়ে পড়ে অবরোধকারীদের সাথে ঝগড়া বাঁধানোর চেষ্টা করে।
তবে তাতে সফল না হলে সেটলাররা বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে মহাজন পাড়া ও য়ংড বৌদ্ধ বিহার এলাকায় সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়। য়ংড বৌদ্ধ বিহার এলাকায় তারা নৃশংসভাবে কুপিয়ে ৩পাহাড়িকে মারাত্মকভাবে জখম করে। সেটলাররা খোদ য়ংড বৌদ্ধ বিহারে হামলা করতে চাইলে জনৈক সেনা সদস্য অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে সেটলারদের নিবৃত্ত করেন, যা আমাদেরও দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে।
তার শৃঙ্খলা ও পেশাদারি দায়িত্ববোধকে আমরা সম্মান জানাই। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এটি অত্যন্ত বিরল ও ব্যতিক্রমী ঘটনা। উক্ত সেনা সদস্যের মতো যদি বাকিরাও প্রকৃত পেশাদারি সৈনিকের মতো নিরপেক্ষতা বজায় রাখতেন, তাহলে পাহাড়িরা সেটলারদের সাম্প্রদায়িক হামলা থেকে রক্ষা পেত।”
পার্বত্য চট্টগ্রামে মোতায়েনকৃত সেনাবাহিনীর অব্যাহতভাবে পাহাড়ি বিদ্বেষী, সাম্প্রদায়িক মনোভাব, পক্ষপাতমূলক আচরণ ও সেটলারদের প্ররোচিত করে পাহাড়িদের ওপর উগ্র সাম্প্রদায়িক হামলার প্রেক্ষিতে ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’ ২৮শে সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুনরায় সড়ক অবরোধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় বলে অংগ্য মারমা মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “গতকাল ২৮শে সেপ্টেম্বর সকালে অবরোধ চলাকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পেরাছড়া ও ভাইবোনছড়ার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে স্কুল ছাত্রসহ তিন জনকে আটক ও একজন পল্লী চিকিৎসক, একজন সরকারি কলেজের প্রভাষকসহ বেশ কয়েকজনকে মারধর করে।
“এরপর দুপুর ১২টার দিকে গুইমারা উপজেলায় মারমা অধ্যুষিত রামেসু বাজারে সেনাবাহিনী, তাদের পোষ্যপুত্র ঠ্যাঙাড়ে ‘মোত্তালেব বাহিনী’এবং উগ্রবাদী সেটলাররা মিলিতভাবে পাহাড়িদের ওপর বিনা উস্কানিতে হামলা চালায়। সেনা জওয়ান ও ঠ্যাঙাড়ে দুর্বৃত্তরা নির্বিচারে তাদের ওপর গুলি চালায়, অপরদিকে সেটলাররা দোকানপাট ও বসতবাড়িতে ব্যাপক লুটপাট চালানোর পর আগুন ধরিয়ে দেয়।
হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত ৩জন পাহাড়ি নিহত হয়েছে বলে খাগড়াছড়ি প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। নিহতরা হলেন ১) থোয়াইচিং মারমা(২৫) পিতার নাম হ্লাচাই মারমা, গ্রাম বটতলা পাড়া, হাফছড়ি, গুইমারা, তিনি পেশায় একজন ড্রাইভার; ২) আখ্রক মারমা(২৪) পিতার আপ্রæু মারমা, গ্রাম সাইংগুলি পাড়া, বড়পিলাক, গুইমারা; এবং ৩) আথুইপ্রæু মারমা(২৬) পিতার নাম থোয়াইহ্লাঅং মারমা, গ্রাম লিচু বাগান, হাফছড়ি, গুইমারা। এছাড়া কয়েকজন গুরুতর আহতসহ অন্তত ৩০জন পাহাড়ি আহত হয়েছেন। হামলাকারী সেটলাররা পাহাড়িদের অন্তত ১৬টি বসতবাড়ি, ৫০টি দোকান, মাহেন্দ্র গাড়ি ১টি ও ১৬টি মোটর সাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িযে দিয়েছে।
“সেনাবাহিনী তাদের বিবৃতিতে দাবি করে ইউপিডিএফ রামেসু বাজারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত উঁচু পাহাড় থেকে ‘সংঘর্ষে লিপ্ত পাহাড়ি, বাঙালি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত সেনা সদস্যদের লক্ষ্য করে’ গুলি চালায়, যা সর্বৈব মিথ্যা – কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন কেউ এই ধরনের আজগুবি বক্তব্যে বিশ্বাস স্থাপন করবে না।
“সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে আরও বলা হয়: সমসাময়িক সময়ে রামসু বাজার এবং ঘরবাড়িতে ইউপিডিএফএর বহিরাগত দুষ্কৃতিকারীরা অগ্নিসংযোগ করে এবং বাঙালিদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়।”
সেনাবাহিনীর এই বক্তব্যকে দুর্বল চিন্তাশক্তির অধিকারী ব্যক্তির ‘আষাঢ়ে গল্প’ ফাঁদার অপপ্রয়াস অভিহিত করে অংগ্য মারমা প্রশ্ন করে বলেন, “যখন ‘ইউপিডিএফের বহিরাগত দুষ্কৃতিকারীরা’ অগ্নিসংযোগ করছিল তখন আমাদের ’দেশপ্রেমিক’ সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন?’
তাদের নাকের ডগায় কিভাবে ’ইউপিডিএফ সদস্যরা’ বাড়িতে আগুন দেয়ার সময় ও সাহস পায়? আর ইউপিডিএফ সদস্যরা গুলি করার পূর্বেই যদি পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ শুরু হয়ে থাকে, তাহলে তখন সেনা সদস্যরা কী করছিল?”
ইউপিডিএফ নেতা পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য সরকারের কাছে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান:-১) খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় পাহাড়িদের ওপর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা তদন্তের জন্য জাতিসংঘের অংশগ্রহণে একটি উচ্চ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা।
২) সিঙ্গিনালায় কিশোরীকে গণধর্ষণের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার এবং দ্রæুত বিচার আদালতে বিচারের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা।
৩) গুইমারায় রামেসু বাজারে হামলায় জড়িত সেনা সদস্য, ঠ্যাঙাড়ে ‘মোত্তালেব বাহিনীর’ সদস্য এবং সেটলারদের গ্রেফতার ও শাস্তি প্রদান করা।
৪) উক্ত হামলায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারবর্গকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের দ্রæুত সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা।
৫) খাগড়াছড়ির মহাজনপাড়া ও য়ংড বৌদ্ধ বিহার এলাকায় হামলাকারী সেটলারদের গ্রেফতার এবং শাস্তি প্রদান করা। উক্ত হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
৬) গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে ও নিঃশর্তে মুক্তি দেয়া।
৭) জুম্ম ছাত্র জনতার নেতা-কর্মীসহ সাধারণ লোকজনের বাড়িতে নির্বিচারে তল্লাশি, হয়রানি ও গ্রেফতার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করা।
৮) প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাহাড়ি বিদ্বেষী অপপ্রচার বন্ধ করা।
অংগ্য মারমা গতকাল ২৮শে সেপ্টেম্বর বিকালে বিজিবির কাপ্তাই ব্যাটালিয়নের চেকপোস্টে ইউপিডিএফের বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র(রাম দা) উদ্ধারের যে দাবি সেনাবাহিনীর উক্ত বিবৃতিতে করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার বলে মন্তব্য করেছেন।
এছাড়া গত বছর ১৯ ও ২০শে সেপ্টেম্বর দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি শহরে পাহাড়িদের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে সেনাবাহিনীর উপরোক্ত বিবৃতিতে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, “এসব ঘটনায় ইউপিডিএফকে দায়ি করা হলো দিনকে রাত বা সাদাকে কালো বলে প্রচার করার সামিল।”
অংগ্য মারমা বলেন, ২০২৪সালের হামলার তদন্ত হলেও তার রিপোর্ট চাপা দেয়ায় এবং অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি না হওয়ায় সেনাবাহিনীর সদস্য ও উগ্রপন্থী সেটলাররা খাগড়াছড়ি শহরে ও গুইমারার রামেসু বাজারে পুনরায় হামলা করার সাহস পেয়েছে।
“মোট কথা, মুষ্টিমেয় কিছু ব্যতিক্রম বাদে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডার ও সদস্যরা সেটলারদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট, পাহাড়ি বিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িক। এ কারণে তাদের দ্বারা এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়” বলে অংগ্য মারমা মন্তব্য করেন।
তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে উক্ত বিবৃতি প্রত্যাহার এবং খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় হামলার সাথে জড়িত সেনা সদস্যদের শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।
অপরদিকে খাগড়াছড়ির গুইমারার রামেসু বাজার এলাকায় গত রোববার আগুন দেওয়া হয় বেশ কিছু ঘরবাড়িতে। সোমবার সকালেও কিছু ঘর থেকে আগুনের ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। এতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বাসা ব্যাপক ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও মৌজা হেডম্যানের কাগজ পুড়ে তসনস হয়ে কোটি টাকার পরিমানে ক্ষতি হলেও পাশে থাকা ধানের গোলাভর্তি ধান এখনও কালো ধোওয়া উড়তে দেখা গেছে।
একটি ভবনের নিচে পড়ে আছে আগুনে পুড়ে যাওয়া কয়েকটি মোটর সাইকেল। সোমবার সকালে গুইমারার রামেসু বাজার এলাকায় পুড়ে যাওয়া আগুনের ছায়ের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
জেলার গুইমারা উপজেলায় পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনায় চার দিন পর তিন মামলা করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাতে গুইমারা থানায় এ মামলা হয়। তিনটি মামলাতেই পুলিশ বাদী হয়েছে।
পুলিশ জানায়, তিনটি মামলার মধ্যে একটি করা হয়েছে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি কর্মচারীদের আহত করা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে। এতে অজ্ঞাত নামা ৩০০জনকে আসামি করা হয়েছে। আরেকটি হয়েছে হত্যার অভিযোগে। এতেও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের কেউ মামলা করতে রাজি হয়নি।
অন্যদিকে খাগড়াাছড়ি সদরে ১৪৪ধারা ভেঙে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও সহিংসতার অভিযোগেও একটি মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত ৮০০জনকে আসামি করা হয়েছে।
গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: এনামুল হক চৌধুরী মামলার এ তথ্য বৃহস্পতিবার সকালে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জেলা জুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন আছে। গোয়েন্দা নজরদারিও অব্যাহত রয়েছে। সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র সদস্যদের তহল অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ধারা এখনো বহাল। তবে বৃগষ্পতিবার খাগড়াছড়িতে হাটের বাজারদিন হওয়ায় যানবাহন এবং লোকজনের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। জেলা সদর থেকে দূরপাল্লার যান ছেড়ে গেছে। বৃহষ্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলার সাপ্তাহিক হাটের দিন হওয়ায় বাজারেও লোকজনের ভিড় দেখা গেছে।
সাধারন মানুষের লোকমুখে কথা আগে-বাগে বাজার করে না রাখলে আবার ৫ই অক্টোবর পরে লাগাতার জুম্ম ছাত্র-জনতা কর্মসূচী থাকলে পরিবারে বেকায়দা পড়া থেকে কিছুতা লাঘব হবে।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হয়েছে। এরপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি মনে করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক, তাহলে ১৪৪ধারা তুলে দেওয়া হবে।
গত ২৪শে সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে খাগড়াছড়ি সদর সিংগীনালাতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। রাতেই তাকে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন সে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়। এ ঘটনায় শয়ন শীল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর এর প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে গত শনিবার খাগড়াছড়িতে আধা বেলা অবরোধ ডাকা হয়। পরদিন থেকে তিন পার্বত্য জেলায় অবরোধের ডাক দেয় সংগঠনটি। অবরোধের মধ্যেই রোববার বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রণক্ষেত্র পরিণত হয় খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারার রামেসু বাজার। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সেখানে স্থানীয় একটি পক্ষও সংঘর্ষে যোগ দেয়। এ সময় গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়। তাঁরা তিনজনই পাহাড়ি মারমা জনগোষ্ঠীর। সেনাবাহিনীর মেজরসহ আহত হন অন্তত ২০জন। রামেসু বাজার এলাকায় আগুন দেওয়া হয় প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি ও ৪০টির মতো দোকান পাটে।
এর মধ্যে খাগড়াছড়ির ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। তবে এ প্রতিবেদনের বিষয়ে ক্ষোভ জানান কিশোরীর বাবা।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন