খাগড়াছড়ির ৩৭টি বৌদ্ধ বিহারে মধু পূর্ণিমা উৎসব পালন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ৯টি উপজেলায় যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে ৩৭টি বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় তিথি-শুভ পবিত্র মধু পূর্ণিমা উৎসব পালন করা হয়েছে। জেলা সদর উপজেলা শতবর্ষে য়ংন্ড বৌদ্ধ বিহার, পানখাইয়া ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহার, শান্তিপুর অরন্য কুটির বৌদ্ধ বিহার, আপারপেরাছড়া বৌদ্ধ বিহারসহ ৯টি উপজেলা বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ মধু পূর্ণিমা উৎসব ৩৭টি বৌদ্ধ বিহারে পৃথকভাবে উদযাপিত হয়েছে। ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে প্রতিবছরে ন্যায় এ বছরেও এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
এ উপলক্ষে শনিবার(৬ই সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাগড়াছড়ির বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে শুরু হয় দিনব্যাপী নানান অনুষ্ঠানমালা।
এলাকার ঘুরে দেখা যায়, শনিবার সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন বিহারে শুরু হয়েছে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। ফুল, ফলমূল, মধু ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে বিহারে আসছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নর-নারীরা। শতবর্ষে য়ংন্ড কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার, মিলনপুর মৈত্রি বৌদ্ধ বিহার, পালিটোল পানখাইয়া পাড়া বৌদ্ধ বিহারসহ প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারেই সারাদিন আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ধর্মীয় এ আচার-অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার সকাল থেকে বিহারে বিহারে চলছে নানা আনুষ্ঠানিকতা। জেলা শহরের প্রাচীন য়ংড় বৌদ্ধ বিহারে নানা বয়সী নর-নারী ও শিশুরা বিভিন্ন রঙের ফুল, মিষ্টান্ন, মধু, ফল, পানীয় ও ছোয়াইং নিয়ে বুদ্ধের বন্দনায় উপস্থিত হন।
অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পঞ্চশীল অষ্টশীল গ্রহণ বুদ্ধপূজা, ফুলপূজা, বুদ্ধ মূর্তিদান, অষ্ট পরিস্কারদান, সংঘদান, মধুদান, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিন্ডসহ নানা বিধ দান ও স্বধর্ম শ্রবণ। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধু পূর্ণিমা উৎসব। বুদ্ধের সামনে এসব দানীয় বস্তু দিয়ে পূজা শেষে বিহার প্রাঙ্গণে ধর্মীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। শীল গ্রহণের পাশাপাশি বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা চলে বিহারগুলোতে। সন্ধ্যায় হাজার বাতি প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মধু পূর্ণিমার আনুষ্ঠানিকতা।
এ পূর্ণিমা তিথিতে গৌতম বুদ্ধকে মধু উপহার দিয়েছিল একটি বানর, বুদ্ধের প্রতি মানবজাতির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাণী বন্দনা করত সে স্মৃতিবিজড়িত পূর্ণিমাকে মধু পূর্ণিমা হিসেবে পালন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
ত্রৈমাসিক বর্ষাবতের দ্বিতীয় পূর্ণিমা তিথি হিসেবে মধু পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, ভগবান গৌতম বুদ্ধের সময়ে এই পূর্ণিমা দিনে বারন নামক এক ব্যক্তি তাঁকে মধু দান করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে প্রতিবছর এই তিথি পালন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে মধু পূর্ণিমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিথি। ভিক্ষুসংঘের ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রতের দ্বিতীয় পূর্ণিমা তিথি মধু পূর্ণিমা। দিনটি উপলক্ষে সকাল থেকে বিহারগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে সমবেত প্রার্থনা, পঞ্চশীল গ্রহন, বুদ্ধ মূর্তি দান, সংঘ দান, অষ্ট পরিষ্কার দান এবং ভিক্ষুদের পিন্ড দানের মতো নানা দানানুষ্ঠান। দেশ ও জাতির হিতসুখ ও মঙ্গল কামনায় আয়োজিত এসব ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মানুষ।
এই দিনে সকালে দেশ জাতি তথা সকলের হিতসুখ ও মঙ্গল কামনায় সমবেত প্রার্থনা করা হয়। এছাড়া পঞ্চশীল গ্রহণের পর বুদ্ধ মূর্তি দান, সংঘ দান, অষ্ট পরিষ্কার দান ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিন্ড দানসহ নানাবিধ দানানুষ্টান করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
এদিকে মানিকছড়ি উপজেলা পুরাতন রাজবাড়ি রাজ জেতবন বৌদ্ধ বিহারে পবিত্র মধু পুর্নিমা উপলক্ষে বুদ্দ পুজা, নানাবিধ দানের আয়োজন করে। পরে এক কেজি শামুক নদীতে অবমুক্ত করা হয়। এই দিনটি গৌতম বুদ্ধের উদ্দেশ্যে ভক্তি নিবেদন ও মধু দানের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা নানা আয়োজন ও পূজাঅর্য্য নিয়ে মহান সংঘদান, পিন্ডদান এবং বিভিন্ন দানীয় বস্তু নিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘকে মধু ও অন্যান্য জুমের উদপাদিত নতুন ফলমূল দান করা হয়। বৌদ্ধ বিহারে সমবেত হয়ে প্রার্থনা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। এতে সকলের সমাবেত হয়ে ভিক্ষুসংঘ নিকট থেকে পঞ্চশীল গ্রহণ, অষ্টশীল গ্রহণ এবং হাজারো প্রদ্বীপ জালিয়ে দেশে শান্তির কামনার্থে প্রার্থনা করা হয়।
এছাড়া সন্ধ্যা হাজার প্রদীপ প্রজ্জলন ও আকাশ প্রদীপ(ফানুস) উড়ানো হয়। এ দিনে বৌদ্ধ নর-নারীরা দেশ জাতি, বিশ্ব শান্তি তথা সকলের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা ও শুভ কামনা করেন।
উল্লেখ্য, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ এই মধু পূর্ণিমা। ভগবান গৌতম বুদ্ধের সময়ে পারল্য বনে ভগবান গৌতম বুদ্ধ যখন বর্ষাবাস ধরেছিলেন, তখন সেখানে এক হস্তী ভগবান গৌতমকে সেবা করতে দেখে বানর। পরে সেই বানর একটি মৌচাক থেকে মধু এনে ভগবান বুদ্ধকে দান করে তার পূর্ণ্যতা লাভ পায়। তখন থেকে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা এই পূর্ণিমাকে মধু পূর্ণিমা বলে এবং গুরুত্ব ও শ্রদ্ধার সাথে দিনটি উদযাপন করে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন