খাগড়াছড়ির ৬টি উপজেলাতে পাহাড়-জমি ধ্বংসের নিয়ন্ত্রকরা রাজনৈতিক পল্টিবাজীতে বহাল

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সদর, মহালছড়ি, রামগড়, গুইমারা, মাটিরাঙা, মানিকছড়ির উপজেলাতে পাহাড়-জমি ধ্বংসের নিয়ন্ত্রকরা রাজনৈতিক পল্টিবাজীতে বহাল তবিলয়ত। নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে দল পাল্টে বনে যান নেতা: ম্যানেজ করে চলতো নিয়ন্ত্রণ,পরিবহণ সবরাহ, পাহাড় কাটার ধ্বংসযজ্ঞ মেতে উঠতো।
অবৈধ ভাবে পাহাড়-ফসলি জমি কাটার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে দল পাল্টে বনে যান নেতা। যখন যে দল আসে আওয়ামীলীগ হোক আর বিএনপি’র তখন তিনি সে দলের সাথেই সখ্যতা গড়ে তোলেন। নিয়ন্ত্রণ, ম্যানেজ করে চলতো অবৈধ পাহাড়, মাটিসহ অবৈধসব পরিবেশ ধ্বংসযজ্ঞের মহড়া।
এক চক্রের হাতেই “পাহাড় ধ্বংসের মহা সিন্ডিকেট”। এ সিন্ডিকেট সবরাহ করে পেলোডার, ডাম্প ট্রাক, ব্যাকহো-লোডার, সিজর লিফটসহ সকল প্রকার অধিকাংশ পরিবহণ।
তাদের নিয়ন্ত্রণেই চলে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির অবৈধ পাহাড় সর্বনাশ। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে অনেকের নাম। মহালছড়ির অঘোষিত সিন্ডিকেট চক্রের প্রধান “শুক্কুর” এ চক্রের হোতা। ঐ চক্রের অন্য সদস্যরা হচ্ছে, মহালছড়ির নিয়ন্ত্রক মো: জাহিদুল, মো: রুবেল, মো: কামাল, মো: হামিদ। অন্যদিকে পরিবেশ ধ্বংসের এ লীলায় সঙ্গি হয়েছে নাম না জানা আরো অনেকেই।
তথ্য নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে ম্যানেজ করাসহ বিভিন্ন সেক্টরকে বস মানিয়ে এ অবৈধ কর্মযজ্ঞে ভাগ পেতেন অনেকেই। মাসিক হারে নির্ধারিত চাঁদা, পকেট মানি, খবর প্রেরক, সমন্বয়ক। এই তালিকা থেকে বাদ পরেনি এক শ্রেণীর রাজনৈতিক দূর্নীতিবাজরাও।
তথ্য অনুসন্ধানে খোঁজ মেলে, মহালছড়ি সিন্ডিকেট ছাড়া রামগড়ের-মহিউদ্দিন মেম্বার, রামগড়ের পাতাছড়া ইউপির ইউনুছ মেম্বার, লতিফ মেম্বার, গুইমারার-রাজন, আনন্দ সোম, মাটিরাঙার-আলা উদ্দিন, তাজু সরদার, মানিকছড়ির-ফারুক, কাদের. হাই সাহেব, আনোয়ার, খাগড়াছড়ির উত্তর সবুজ বাগে আজম খানের টিলা ভূমি জোর করে কেটে নেয়া জুয়েল, কামাল, খাগড়াছড়ি শালবাগান এডিসিহিল পূর্ব দয়ানগর এলাকার ট্রাক্টর চালক ও পাহাড় খেকো মো: বক্কর, মো: রানাসহ অনেকের নাম উঠে এসেছে।
অঘোষিত সিন্ডিকেট চক্রের প্রধান মহালছড়ির “শুক্কুর” এ চক্রের হোতা নয় দাবী করে জানান ‘আমার একটি গাড়ি আছে। আমি সরকারি কাজ করি। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার কাজে চলে। এ সময় তিনি নিজেকে সিন্ডিকেট চক্রের মূলহোতা নয় দাবী তার, অন্যদের চেনেন বলে হুংকার ছেড়ে জমির উপরিভাগের মাটি সমান করাসহ বক্তব্যের স্রোতে একাধিক কথা তুলে ধরেন। একই সাথে অন্য উপজেলার পাহাড় খেকোর নাম ধরে নানা ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রতিবেদকের সাথে স্বাক্ষাত করার প্রস্তাব দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক অধিবাসী জানান, পাহাড় কাটার দায়ের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা না নেয়ার কারনে পাহাড় কাটা,জমি ভরাট, ফসলি জমি ধ্বংস, পরিবেশ বিপর্যয় ছাড়াও অপরাধ বেড়েইে চলেছে বলে জানান ভুক্ত ভোগীরাও।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, যারাই পাহাড় কাটছে বা পরিবেশ নষ্ট করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে জড়িতদের ছাড় নেই বলে তিনি কঠোরভাবে জানান।
উল্লেখ্য ৯টি উপজেলাতে ভারী বর্ষণ অব্যাহত, নদীতে বাড়তে শুরু হয়েছে। তীরবর্তী বসবাসকারী বাসায় পানি উঠে যাওয়ায় আত্মস্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার। এতে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসীদের ধসের শঙ্কায় আতংকে আছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক ভারী বর্ষণের ফলে জেলার ৯টি উপজেলাতে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি পাহাড়ের ওপরে, পাহাড়ের পাদদেশে ও পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী লোকজনকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। জেলার ৯টি উপজেলাতে পাহাড় ধস এড়াতে প্রশাসনের মাইকিং করা হচ্ছে। জেলায় পাহাড় ধসের সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা গুলোতে সচেতনতা মূলক কার্যক্রম ও সরেজমিন পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করেছে জেলা প্রশাসন।
খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: হাসান মারুফের নেতৃত্বে একটি টিম গত বৃহস্পতিবার(২৯শে মে) বিকেলে শহরের শালবন, কলাবাগানসহ বিভিন্ন উপজেলা পাহাড়ি এলাকা ঘুরে দেখেন, মাইকিং এবং স্থানীয়দের সতর্ক করেন। পরিদর্শন কালে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন যেন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কেউ বসবাস না করেন এবং প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং ও সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।
খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় লক্ষাধিক লোক পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করে। বর্ষা এলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সতর্কতা থাকলেও বর্ষা শেষ হলে আর কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়না।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন