খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলাতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ৯টি উপজেলাতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দেশি গরু, মহিষ, ছাগলে সয়লাব জেলার হাটবাজারগুলো। পাহাড়ে সবুজ ঘাসে প্রাকৃতিক উপায়ে কোরবানির পশু মোটা তাজা করণ করছেন খামারিরা। এসব গবাদিপশু মোটা তাজা করণে ব্যবহার করা হচ্ছে না কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধ। ফলে পাহাড়ের খামারে বেড়ে ওঠা গরুর কদরও বেশি।
কোরবানিকে ঘিরে জেলার ছোট-বড় প্রায় ৩হাজার খামারির কাছে ১৯হাজার ১৬০টিরও বেশি পশু মজুত রয়েছে। বৃহস্পতিবার ও শনিবার হাট বাজারের ৬০থেকে ৮০হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে পছন্দনীয় গরু। এতে করে কোরবানির পশুর হাটে খামারি, ক্রেতা, বিক্রেতা ও ব্যবসায়ী সবার মাঝেই সন্তুষ্টি বিরাজ করছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে খাগড়াছড়িতে জমজমাট হয়ে উঠেছে পশুর হাটবাজার।
জেলার ৯টি উপজেলা ২৬টি কোরবানির পশুর হাটে পুরোদমে চলছে বেচাকেনা। হাটে রয়েছে পর্যাপ্ত দেশি গরু, মহিষ ও ছাগল। ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরব হয়ে উঠেছে হাটবাজারগুলো।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৩হাজার ছোট-বড় খামারির কাছে কোরবানি উপযোগী ১৯হাজারের বেশি পশু রয়েছে। তবে হাটবাজার গুলোতে পশুর দাম নিয়ে রয়েছে ভিন্ন চিত্র খামারিরা বলছেন তারা দাম পাচ্ছেন না, আবার ক্রেতারা বলছেন দাম বেশি। এর পরও বাস্তবতার নিরিখে সবাই মোটামুটি খুশি।
খাগড়াছড়িতে ছোট আকারের গরু ৫০ থেকে ৬০হাজার, মাঝারি আকারের গরু ৬০ থেকে ৮০হাজার এবং বড় গরু ৩ থেকে ৬লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃত্রিম কোনো ওষুধ ব্যবহার না করে এখানে প্রাকৃতিকভাবে গরু পালন করা হয় বলে সমতল জেলাগুলোর তুলনায় খাগড়াছড়ির গরুর বাড়তি আকর্ষণ রয়েছে। এ কারণে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ীর আগমন ঘটে খাগড়াছড়িতে।
তবে এবার সমতলের ব্যবসায়ীরা তেমন আসেনি।
চলতি বছর জেলার ৯টি উপজেলায় ১৯হাজার ১৬০টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুুত করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ১২হাজার ৮১০টি, মহিষ ১৫টি, ছাগল ৬হাজার ১১০টি এবং ভেড়া ৮০টি। আসন্ন কোরবানিতে জেলার চাহিদা মেটানোর পরেও প্রায় ১হাজার ১৬০টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। পাহাড়ে প্রাকৃতিক খাবারের উপর নিভরশীল এসব পশু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও সরবরাহ করা হচ্ছে।
খামারি আব্দুল মান্নান, মফিজুর রহমান, আবুল কালাম ও অমিত চাকমা জানিয়েছেন, পশুখাদ্যের দাম কম হলে ভালো হতো। তারা প্রাকৃতিক লতা-পাতা, ঘাস ও ভূষি দিয়ে গরু লালন-পালন করেছেন। সেই হিসেবে গরুর উপযুক্ত দাম পেলে তারা খুশি। তবে কম দামে বিক্রি করলে লোকসান গুণতে হবে।
এদিকে সব খামারেই কোরবানির জন্য গরু ও ছাগল প্রস্তুুত করার শেষ মুহূতের কাজ চলছে। খাগড়াছড়ির খামারগুলোতে নিরাপদ খাদ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে গবাদিপশু লালন-পালন করা হয়।
গরু ব্যবসায়ী মো: আব্দুল মান্নান, মো: আলী হোসেন ও মো: রহমত উল্লাহ বলেন, এবার কোরবানিকে সামনে রেখে বড় বড় খামারের পাশাপাশি গ্রামের কৃষক পরিবারগুলোও বাড়িতে গড়ে ৩থেকে ৪টি করে গবাদিপশু প্রস্তুুত করেছেন।
স্থানীয় খামারি ও গবাদিপশুর ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর জেলার স্থানীয় বাজারে কোরবানির জন্য পশুর সংকট হবে না। বরং স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও অন্তত: ২-৩হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে। ফলে এসব পশু দেশের অন্যান্য জেলার পশুর হাটে সরবরাহ করা যাবে।
ইজারাদার জামাল হোসেন জানিয়েছেন, কোরবানির হাট জমে উঠেছে। চাহিদা থাকায় দেশের সমতল অঞ্চলেও খাগড়াছড়ির গরু যাচ্ছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ময়নুল ইসলাম জানান, এ বছর রোগাক্রান্ত ও অতিমাত্রায় মোটাতাজাকরণ করা গরু চিহ্নিত করতে জেলার ২৬টি কোরবানির পশুর হাটে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম। তিনি আরও বলেন, জেলার খামারিরা প্রাকৃতিকভাবে গরু হৃষ্টপুষ্ট করেন, কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাবার ছাড়া কোনো প্রকার বিষাক্ত জিনিস ব্যবহার করেন না।
প্রতিটি হাটেই মেডিকেল টিম রয়েছে যাতে কেউ অসুস্থ গরু বিক্রি করতে না পারে। নিরাপদ গবাদিপশু পালনের মাধ্যমে খামারিরা মাংস উৎপাদনে অনন্য ভূমিকা রাখছেন। জেলায় ৩হাজারেরও বেশি খামারি রয়েছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে তাদের নিয়মিত পরামর্শ ও চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, খাগড়াছড়ি জেলায় আসন্ন ঈদুল আযহায় কোরবানির জন্য ১৮হাজার পশুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু জেলার খামারগুলোতে স্থানীয় চাহিদার চেয়ে বেশি পশু প্রস্তুুত রয়েছে। এসব পশু ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী জেলায় সরবরাহের প্রস্তুুতি নিচ্ছেন খামারিরা।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো: আরিফিন জুয়েল প্রতিবেদককে জানান, কোরবানির পশুর হাটকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোরবানির পশুবাহী ট্রাকসহ বিক্রেতাদের যাতে চাঁদাবাজি ও হয়রানির শিকার না হতে হয়, সেজন্য পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে। ব্যবসায়ীরা চাইলে অতিরিক্ত নিরাপত্তাও দিতে প্রস্তুুত পুলিশ এমনটিই জানিয়েছেন তিনি।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, জেলার ২৬টি কোরবানির হাটে কাজ করছে। জেলায় আসন্ন ঈদুল আযহায় কোরবানির জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম, ব্যাংক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত আছে।
এছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি) ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরুর চোরাচালান রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ১৮হাজার।
এ কারণে এবার কোরবানির পশুর হাটে পশুর ভালো দাম পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী স্থানীয় খামারি ও পশু ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে, শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশুর হাট-বাজারগুলোতে দাম আরও বাড়বে, লাভবান হবেন এমন প্রত্যাশা করছেন খামারি ও বাজার ইজারাদাররা।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন