খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলাসহ পার্বত্য এলাকায় প্রবারণা পূর্ণিমা ঘিরে ব্যস্ত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ৯টি উপজেলাসহ পার্বত্য এলাকায় প্রবারণা পূর্ণিমা ঘিরে ব্যস্ত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সম্প্রদায়রা। আর কয়েকদিন পরেই পাহাড়ের আকাশে দেখা যাবে রঙ-বেরঙের হাজারো ফানুস। অশুভকে বিদায় জানিয়ে শান্তির প্রার্থনায় মুখর হয়ে উঠবে পুরো পাহাড়।
আগামী ৬ই অক্টোবর পালিত হবে বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। এই উৎসবকে ঘিরে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
বৌদ্ধদের মতে, আষাঢ়ের পূর্ণিমা থেকে শুরু হওয়া তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষে আসে প্রবারণা পূর্ণিমা। প্রতিবছর পূর্ণিমা তিথিতে তারা এই ধর্মীয় উৎসব পালন করেন।
মারমা সম্প্রদায়ের মানুষ প্রবারণাকে বলেন ‘মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’। এই দিনটি উপলক্ষে প্রার্থনা করা হয় সমগ্র মানবজাতির শান্তি ও মঙ্গল কামনায়।
বিশ্বাস করা হয়, রাজকুমার সিদ্ধার্থ গৌতম সন্ন্যাস গ্রহণের সময় চুল কেটে আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই স্মরণে ‘চুলামনি’ উদ্দেশ্যে আকাশে ফানুস উড়িয়ে প্রবারণা উদযাপন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
এই উৎসব ঘিরে পাহাড়ের প্রতিটি কোণজুড়ে তৈরি হয় প্রাণের মিলনমেলা। উৎসবে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রথযাত্রা, পিঠা তৈরি, ফানুস ওড়ানো এবং হাজারো প্রদীপ প্রজ্বালনসহ নানা আয়োজন। এবারের উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে বাঁশ দিয়ে তৈরি রাজহংসী সদৃশ একটি রথ।
মারমা তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ভাষায় উৎসব সংগীত গেয়ে রথ টেনে বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার প্রদক্ষিণ করবেন এবং পরে রথ বিসর্জন দেওয়া হবে খাগড়াছড়ির মারমারা চেংগী নদী, রাংগামাটির মারমা কাপ্তাই বাধ কর্নফুলী নদী, বান্দরবান মারমা সাঙ্গু নদী, কক্্রবাজার রাখাইনরা মহাসমূদ্র সৈকতে।
ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষের য়ংন্ড বৌদ্ধবিহার প্রাংগনে ও ছোট রাজার মাঠে ইতোমধ্যে বাঁশ ও কাঠের কাঠামোয় রথ তৈরি শুরু হয়েছে। রথ ও ফানুস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কারিগর হ্লাশৈ ও অং হ্লা শৈ মারমা।
তারা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে কাজ করছেন তারা।
এবারের মূল আকর্ষণ রাজহংসী রথ ছাড়াও থাকবে কাল্পনিক ভূত। ফানুসের মধ্যেও থাকছে নতুনত্ব—ড্রাগন, বালিশ, হাতির মতো বিভিন্ন আকৃতির ফানুস বাতি প্রবারণার দিন আকাশে উড়ানো হবে।
বাজারেও লেগেছে উৎসবের আমেজ। পানখাইয়া পাড়া সড়ক বার্মিজ দোকান, পুরবী ও শৈশৈ বার্মিজ মার্কেট এখন জমজমাট। নতুন ডিজাইনের থামি ও লুঙ্গি কেনায় ব্যস্ত পাহাড়বাসী। ছোয়াইং(বিহারে আহার) এর জন্যও থামি কেনা হয়েছে।
বিক্রেতা ও ক্রেতা উথোয়াই লেই ও হ্লানেউ মারমা জানান, এবারের প্রবারণা ঘিরে বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, এবারের প্রবারণা উৎসবে প্রায় হাজারখানেক ফানুস আকাশে ওড়ানো হবে। দুপুর ৩টায় রাজগুর বৌদ্ধ বিহার থেকে রথযাত্রা শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন পার্বত্য উপদেষ্টা সু-প্রদীপ চাকমাসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
প্রবারণা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চনুমং মারমা জানান, উৎসব ঘিরে নেওয়া হয়েছে নানা আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এবারের প্রবারণা উৎসব সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হবে।
এদিকে নিরাপত্তার দিকটিও সুনিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রশাসন। বান্দরবান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম জানান, উৎসবকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা।
বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্টাতা চেয়ারম্যান ¤্রাসাথোয়াই মারমা জানান, অনাকাংখিত মারমা ৮ম শ্রেনী পড়–য়া ধর্ষিত হওয়া প্রতিবাদের ফলে সহিংসতায় নিহতদের প্রতি সম্মান সহানুভুতি ও আর্থিক সাহায্য হাত দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রবারনা পুর্নিমা কর্মসূচী সীমিত পরিসরে পালন করা হবে।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল জানান, সহিংস ঘটনার পর অবরোধ তুলে নেওয়ায় যথাযোগ্য মর্যাদায় ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুসারে পালন করবে। তবে আইন শৃংখলা বাহিনী গুরত্বপুর্ন জায়গায় কঠোর অবস্থানে থাকবে।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন