খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কমিশনের বৈঠক স্থগিত

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাসহ তিন পার্বত্য জেলা গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হল। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রাম উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকামার পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান ভূমি সমস্যা সকলকে সাথে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বলা হলেও ১৯অক্টোবরের গুরুত্বপুর্ন সভাটি ভুন্ডল হয়ে যায়।

সভাটি কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হবে তা জানানো হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি বিরোধ কমিশন সচিবের সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। পার্বত্য জেলা পরিষদ কার্যালয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো।

সভা স্থগিতের বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখা না দিলেও ধারণা করা হচ্ছে সেটেলার বাংগালীদের সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের হুঁশিয়ারিতেই সভা স্থগিত করেছে ভূমি বিরোধ কমিশন।

উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার(১৬ই অক্টোবর) ৮দফা দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ। এই সময় তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের (পিসিসিপি) আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না করে ভূমি কমিশনের বৈঠক করার চেষ্টা করা হলে তা রাঙামাটির শান্তিপ্রিয় জনতাকে নিয়ে কঠোর ভাবে প্রতিহিত করা হবে।

সংগঠনটির দেওয়া আট দফা দাবিগুলো হলো-‘‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশনে জনসংখ্যা অনুপাতে সকল জাতি গোষ্ঠী থেকে সমান সংখ্যক সদস্য নিশ্চিত করতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি এর কার্যক্রম শুরুর পূর্বে, ভূমির বর্তমান অবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভূমি জরিপ সম্পন্ন করতে হবে, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের ভূমির উপর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ভূমি কমিশন সংশোধনী আইন ২০১৬এর ধারা সমূহ বাতিল করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ব্যবস্থাপনা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রবর্তন করতে হবে এবং সমতলের ন্যায় জেলা প্রশাসকগণকে ভূমি বিরোধ নিস্পত্তির অধিকার দিতে হবে, কমিশন কর্তৃক ভূমি বিরোধ নিস্পত্তির কারনে কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হলে তাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারি খাস জমিতে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে,পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ২০০১সালের ভূমি কমিশন আইন অনুযায়ী বলবৎ করতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে তথাকথিত রীতি।

প্রথা ও পদ্ধতির পরিবর্তে দেশে বিদ্যমান ভূমি আইন অনুসারে ভূমি কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, বাংলাদেশ সরকারের আদেশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসক কর্তৃক বন্দোবস্তীকৃত, অথবা কবুলিয়ত প্রাপ্ত মালিকানা থেকে কাউকে উচ্ছেদ করা যাবেনা ”।

রাঙামাটির বৈঠক স্থান পরিবর্তন কওে সুকৌশলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলা এবং খাগড়াছড়ি জেলায়ও এ কমিশন বৈঠক করতে চাইলে সেইসব জেলাও একই কর্মসূচি প্রদান করা হবে। তবে তাদের আট দফা দাবি পূরণ করা হলে সকল প্রকার কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে।

বৈঠক দিন রোববার(১৯শে অক্টোবর) সারা দিনব্যাপি রাঙামাটি শহরের প্রতিটি মোড়ে দেশপ্রেমিক ছাত্র- জনতা অবস্থান নিবে বলে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান।
সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো: নুর হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি তাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো: আলমগীর হোসেন, সাংগঠননিক সম্পাদক পারভেজ মোশারফ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো: হুমায়ন কবিরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিত করা প্রসঙ্গে রাঙ্গামাটিতে একটি উগ্রবাদী সেটলার সংগঠনের হরতাল ও অবরোধের হুমকীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের ১৯শে অক্টোবরের সভা স্থগিত করা হয়েছে।

ভূমি কমিশনের সভা ডাকা, তারপর এক হুমকীতে তা স্থগিত করা আসলে এসবই সাজানো নাটক। ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান ও উগ্র সেটলাররা হলো নট বা অভিনেতা, আর তাদের গুরু বা পরিচালক-নিয়ন্ত্রক হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনা-শাসকগোষ্ঠী। তারাই আড়ালে থেকে প্রয়োজন মাফিক এদের নাচায় বলে সচেতন মহলের মন্তব্য আতংক।

এবারে এদেরকে নাচানোর প্রয়োজন হলো কেন? এর উত্তর হলো এই: গুইমারায় সেনা-সেটলার হামলার পর দেশের জনগণের সামনে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাটি নতুনভাবে প্রকটিত হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে রাজনৈতিক সমাধানের দাবি উচ্চারিত হচ্ছে।

সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি তলানিতে নেমে গেছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রশ্নে ইউনূস সরকারের নির্লিপ্ততাও সবার নজরে পড়েছে। ঠিক এই প্রেক্ষাপটে জনগণের ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রশমিত করার জন্য পুরোন নাটক নতুনভাবে মঞ্চায়নের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে এবং সে কারণে ভূমি কমিশনের সভা ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান আসলে কার ইশারায় কাজ করছেন? কমিশনের আইন মোতাবেক তার তো সভা ডাকার একচ্ছত্র ক্ষমতা আছে। বলতে গেলে একমাত্র তিনিই যখন ইচ্ছা তখন সভা আহ্বান করতে পারেন। এক্ষেত্রে কমিশনের অন্য সদস্যদের কোন ভূমিকা নেই। কিন্তু তারপরও কেন তিনি এতদিন সভা ডাকেননি? গুইমারা হামলার পরই-বা কেন হঠাৎ সভা ডাকলেন?

অপরদিকে যে কারণ দেখিয়ে উগ্র সেটলাররা ভূমি কমিশনের সভার বিরোধীতা করেছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তারা বলছে যে, কমিশনের ১২সদস্যের মধ্যে বাঙালিদের কোন প্রতিনিধিত্ব নেই। প্রথমত, তাদের এই কথার মধ্যে সামান্যতম সত্যতা নেই।

দ্বিতীয়ত, তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার, ২০০৯ সালের ১৯শে জুলাই যখন বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, তখনও এই কমিশনের গঠন-কাঠামো একই ছিল। কই, সে সময় এসব উগ্রৃ সেটলাররা তো তার ডাকা ভূমি কমিশনের সভার বিরোধীতা করেনি। তাহলে এখন বিরোধীতার মানে কী?

ভূমি কমিশনে যাদেরকে সদস্য করা হয়েছে তা যুক্তিসঙ্গত। কারণ তারা হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠান এবং ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট। যেমন তিন সার্কেল চীফ তো ব্যক্তি নন, তারা একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং যুগ যুগ ধরে পাহাড়ে ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত।

পার্বত্য জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সুতরাং কমিশনে পাহাড়ি-বাঙালির প্রতিনিধিত্বের বিষযটি একেবারে অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু তারপরও কতিপয় উগ্রবাদীর এসব অযৌক্তিক ও অন্যায্য দাবিতে দেয়া আন্দোলনের হুমকীর মুখে ভূমি কমিশনের সভা স্থগিত করার মাধ্যমে এটাই প্রমাণ হয় যে, সরকারের শক্তিশালী রাজনৈতিক কমিটমেন্ট না থাকলে এবং রাজনৈতিকভাবে ভূমি সমস্যার সমধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে, এই কমিশনের পক্ষে আদৌ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে না।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যার কারণ, উৎপত্তি ও অন্যান্য বিষয়ের সাথে তার সম্পর্ক জানা না থাকলে আলাদাভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয়, হোমিওপ্যাথি রোগের চিকিৎসা করে না, রোগির চিকিৎসা করে। একজন আদর্শ হোমিওপ্যাথ রোগীর সম্পূর্ণ রোগ লক্ষণ, রোগীর মানসিক লক্ষণ, তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ক্ষুধা-পিপাসা ইত্যাদি সকল লক্ষণ সংগ্রহ করে রোগীর একটা সম্পূর্ণ চিত্র গঠন করেন এবং তারপর ংরসরষরধ ংরসরষরনঁং পঁৎবহঃঁৎ (ষরশব রং পঁৎবফ নু ষরশব) অর্থাৎ সম-লক্ষণের নীতিতে ঔষধ প্রদান করেন।

তিনি বিচ্ছিন্নভাবে একটি রোগ লক্ষণের যেমন চর্মরোগের চিকিৎসা করেন না, তিনি সামগ্রিকভাবে রোগির চিকিৎসা করেন। রোগি যদি সামগ্রিকভাবে সুস্থ হয় তাহলে তার চর্মরোগ আরোগ্য হবে। অপরদিকে তিনি যদি সার্বিকভাবে রোগির চিকিৎসা না করে একটি রোগ লক্ষণকে আদালাভাবে বিচার করে চিকিৎসা করেন, তাহলে তিনি রোগ সারাতে পারবেন না, রোগি সুস্থ হবে না।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হলেও সেটা বিচ্ছিন্নভাবে করার চেষ্টা অবশ্যই ব্যর্থ হতে বাধ্য। কারণ এর সাথে সেটলার ইস্যু, সেনাবাহিনী প্রত্যাহার(ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া), স্বশাসন ইত্যাদি অন্যান্য বিষয়গুলোও জড়িত রয়েছে। অর্থাৎ একটির সাথে অন্যটি অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পর্কিত। সে কারণে কোন একটি সমস্যাকে আলাদাভাবে সমাধান করা যাবে না। ভূমি সমস্যাকে সামগ্রিক রাজনৈতিক সমস্যার অংশ হিসেবে বিচার করে সমাধানের পদক্ষেপ নিতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের অনেক দুর্বলতা রয়েছে। কেবল এই কমিশন দিয়ে পাহাড়ের ভূমি সমস্যাকে সমাধান করা যাবে না। কারণ এখানে ভূমি সমস্যা হলো রাজনৈতিক সমস্যা, তাই কেবল আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর সমাধান আশা করা বাতুলতা মাত্র।

একইভাবে সেনামদদপুষ্ট সেটেলার বাঙালিদের ছাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ(পিসিসিপি) এর হরতালের হুমকিতে ১৯শে অক্টোবর ২০২৫ রাঙ্গামাটিতে আহুত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিত করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার(১৬ই অক্টোবর) পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি বিরোধ কমিশন সচিব(যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সভাটি স্থগিত করা হয়। পার্বত্য জেলা পরিষদ কার্যালয়ে স্থাপিত ভূমি কমিশনের অফিসে এই সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো।

উল্লেখ্য, গত ১৬(অক্টোবর) বৃহস্পতিবার ৮দফা দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পিসিসিপি। এই সময় পিসিসিপি নেতারা বলেন, পিসিসিপি আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না করে ভূমি কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হলে তা ভূমি কমিশনের সভা কঠোরভাবে প্রতিহিত করা হবে। বাহ্যত সেটেলারদের সাম্প্রদায়িক সংগঠন পিসিসিপির এই হুঁশিয়ারিতেই ভূমি কমিশন উক্ত সভা স্থগিত করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

পার্বত্য ভূমি কমিশন কর্তৃক সভা আহ্বান করা হলে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও উগ্র জাতীয়তাবাদী সেটেলার সংগঠন কর্তৃক প্রতিহতের হুমকি দেয়া এবারে প্রথম নয়। এর আগেও সেটেলারদের সাম্প্রদায়িক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের হুমকিতে ভূমি কমিশনের সভা তিনবার স্থগিত করতে হয়েছে।

২০১৯সালের ডিসেম্বর গঠিত হওয়ার সাথে সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ পার্বত্য ভূমি কমিশনের ২৩শে ডিসেম্বর ২০১৯তারিখে বান্দরবানে আহুত বৈঠকের বিরুদ্ধে সড়ক অবরোধ ডাক দেয়। ফলে ভূমি কমিশনের বৈঠক যথাযথভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।

এরপর ২০২০সালের ফেব্রæয়ারিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের পূর্ব-নির্ধারিত বৈঠক ভন্ডুল করার লক্ষ্যে রাঙ্গামাটিতে আহুত ভূমি কমিশনের সভা ঘেরাও করে এই পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। এ সময়ে নাগরিক পরিষদের প্রতিবাদকারীদের প্রতিরোধ না করে আইন-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনী তাদের প্রতি প্রকারান্তরে সমর্থন ও মদদ দেয়।

এরপর পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন ৭ই সেপ্টেম্বর ২০২২তারিখে বৈঠক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিলে উক্ত সভা প্রতিহত করাসহ ৭দফা দাবিতে ৬ই সেপ্টেম্বর(মঙ্গলবার) সকাল ৬টা থেকে ৭ই সেপ্টেম্বর(বুধবার) দুপুর ২টা পর্যন্ত রাঙ্গামাটি শহর এলাকায় টানা ৩২ঘন্টা হরতালের ডাক দেয় সেটেলারদের এই সন্ত্রাসী সংগঠন। ফলে ভূমি কমিশনের উক্ত বৈঠকও স্থগিত করা হয়।

অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত(অব.) সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান ভূমি সমস্যা সকলকে সাথে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে মাস্টার প্ল্যান রয়েছে, যেখানে ভূমির ব্যবহার, মালিকানা ও পরিকল্পনা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত থাকে।

আমাদের দেশেও ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশন জরুরি, বিশেষ করে ভূমির জোনিং ম্যাপ প্রণয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত শনিবার রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের আওতায় পার্বত্য জেলা সমূহের ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশন সংক্রান্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে ল্যান্ড হোল্ডিং অনেকটাই কমিউনিটি ভিত্তিক, যা থেকে বেরিয়ে এসে জমির সত্ত্ব ও অংশ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিশ্চিত করতে হবে। শুধু ইশারা দিয়ে জমি পরিমাপের দিন শেষ বললেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি আরো বলেন, এক জায়গা অনেকের কাছে বিক্রি হয়। হেডম্যান ও কার্বারীদের কাছে প্রতারণা বন্ধের কোনো কৌশল জানা নাই। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি জটিলতার কারণেই এখানে দারিদ্র্যতা বেশি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিবেশ বান্ধব ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। উপদেষ্টা বলেন, ভূমির দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে ডিজিটালাইজেশনের বিকল্প নাই। কর্মশালায় উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আসন্ন দুর্গাপূজা ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান কঠিন চীবর দান নিরাপদ ও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন।

কর্মশালায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এমদাদুল হক চৌধুরী ভূমি ব্যবস্থাপনা সহজীকরণ সংক্রান্ত একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বেশি নাগরিক হয়রানির শিকার হয়। প্রধান উপদেষ্টা চান হয়রানিমুক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা, এবং মন্ত্রণালয় সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সভায় পার্বত্য জেলাসমূহে ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।

কর্মশালা শেষে বিকেলে একই স্থানে তিন পার্বত্য জেলার সার্কেল চীফ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, হেডম্যান ও কার্বারীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভূমি উন্নয়ন কর পুনঃনির্ধারণ, রেকর্ড রুমের তথ্য হেডম্যানদের সাথে সমন্বয় করে স্ক্যানিং করে সংরক্ষণ করা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, বাজার ফান্ড সংক্রান্ত বিষয় আন্ত:মন্ত্রণালয় সভার মাধ্যমে নিষ্পত্তি এবং রাঙ্গামাটি এসি ল্যান্ড অফিস ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষযে আলোচনা হয়।

চট্টগ্রাম বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল(অব.) অনুপ কুমার চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষযক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এমদাদুল হক চৌধুরী, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকগণ, হেডম্যান-কার্বারীগণ, সাংবাদিকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।