আরএসও ও কেএনএফের কিভাবে হলো?
খাগড়াছড়ি তিন পার্বত্য জেলার ও চট্টগ্রামে আটককৃত ইউনিফর্ম আরসা

খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলার ও চট্টগ্রামে আটককৃত ইউনিফর্ম আরসা, আরএসও ও কেএনএফের হলো কিভাবে সাধারন নিরাপত্তা বিশ্লেকদের কঠিন-কঠোর হুুমকির অশনি সতর্ক বার্তা ও মতামত দিয়েছেন।
নিরাপত্তা বেষ্টনী ভিতরেই খাগড়াছড়ি রাংগামাটি বান্দরবান পুনবাসিত সেটেলার বাংগালী গুচ্ছগ্রামে আরসা, আরএসও আসা-যাওয়া মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠা বিষয়টি জনমনে ভাবিয়ে তুলছে।
ঙ১৯৮১-৮৬-৮৭তে জিয়া ও এরশাদ সৈর সামরিক শাসন আমলে পুর্নবাসিত করা খাগড়াছড়ি জেলা সদর কমলছড়ি ইউনিয়নের ভূয়াছড়ি এলাকাতে পাহাড়ি জায়গা অবৈধ দখল করে রোহিংগা ৩০পরিবার সেটেলার সরকারি রেশনসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ইতি মধ্যে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেছে।
অতিসম্প্রতি চট্টগ্রামে পুলিশ কর্তৃক উদ্ধারকৃত ২০হাজার ৩০০খানা সামরিক পোশাক(ইউনিফর্ম) সত্যিই কি কেএনএফের বা কেবল কেএনএফের? নাকি আরসা’র(আরাকান রোহিঙ্গ্যা স্যালভ্যাশন আর্মি)? কিংবা আরসা, আরএসও(রোহিঙ্গ্যা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) ও কেএনএফের? এই প্রশ্ন আজ অনেকের।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সার্জেন্ট অবসরপ্রাপ্ত নিরাপদ তালুকদারসহ অনেকে মনে করছেন, এত ব্যাপক পরিমাণ ইউনিফর্ম জনসংখ্যায় অল্প কেএনএফের নয় বা হলেও কেবল কেএনএফের হতে পারে না। তাদের অভিমত, এইসব ইউনিফর্ম মিয়ানমারের আরাকানে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে আরসা বা আরএসও’র জন্য প্রস্তুুত হচ্ছিল। এটি কঠিন-কঠোর হুুমকির অশনি সতর্ক বার্তা পাহাড়িদেরকে আতংক করছে।
কাপ্তাই নিবাসী মংহ্লাচিং মারমা জানান, ইদানিং বাংলদেশ-সুইডেন পলিটেকনিক ইনষ্টিাটউটসহ উচ্চতর প্রতিষ্টানে আরএসও(রোহিঙ্গ্যা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) ও আরসা’র(আরাকান রোহিঙ্গ্যা স্যালভ্যাশন আর্মি) ম্যাগাজিনসহ ইসলামী সংগঠনের আড়ালে নানা লিপলেট প্রচারে উদ্ববুদ্ধ করতে দেখা গেছে। এটি উঠতি বয়সী ছাত্র-যুব সমাজকে জামায়াতের ধর্ম আড়ালে সাংগঠনিক অব্যাহত রেখেছে।
খাগড়াছড়ির মাটিরাংগা উপজেলা নিবাসী উগ্যজাই মারমা জানান, আমরা সহিংসতায় পুরো পরিবার সর্বশান্ত হয়ে গেছে। ১৯৮১-৮৬সালে ২বার সেনাবাহিনী-তৎকালীন শান্তিবাহিনীর যুদ্ধের পাহাড়ি-বাংগালীর সহিংসতায় সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব অবস্থায় যা-যাবরের মতো বসবাস করতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৭ মে ২০২৫ চট্টগ্রামের পুলিশ গভীর রাতে বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস নামক কারখানা থেকে এই পোশাকগুলো জব্দ করে এবং একই সাথে উক্ত পোশাক কারখানাটির মালিকসহ তিন বাঙালিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
উক্ত ঘটনাটি দৈনিক সমকালসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় গতকাল ২৫শে মে ২০২৫। উক্ত সংবাদে মংহ্লাসিং মারমা প্রকাশ ওরফে মং নামের এক ব্যক্তি কেএনএফের পক্ষে ২কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্ম তৈরির অর্ডার দেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
উক্ত সংবাদ প্রকাশের পর অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, এত ব্যাপক পরিমাণ ইউনিফর্ম কেএনএফের হতে পারে না। তারা সংখ্যায় বড়জোড় ১শ হতে ২শ হতে পারে। সমগ্র বম জনগোষ্ঠীও মাত্র ১৩হাজারের মত।
তাছাড়া বম জনগোষ্ঠীর লোকজন একই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন যে, তাদের কারোর পক্ষে এই ইউনিফর্ম অর্ডার দেওয়া সম্ভব নয় এবং এমনকি জেলেবন্দি নারী-শিশুসহ সাধারণ বমদের মুক্তির জন্য কোনো আইনজীবীর সাথেও যোগাযোগ করতে পারছেন না বলে জানায় একটি সূত্র।
অপরদিকে একাধিক সূত্র জানায়, এইসব জব্দকৃত ইউনিফর্ম আরসার অথবা আরসা ও আরএসও উভয়ের জন্যই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সূত্র জানায়, আরাকানে সাম্প্রতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর থেকে বান্দরবানে কিছু কিছু এলাকায় বিশেষ করে আরসার ব্যাপক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেসব এলাকায় জনসাধারণের চলাচল তো দূরের কথা, সাংবাদিকদের প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেনাপ্রশাসন। সেখানে কী চলছে তা সম্পূর্ণ আড়াল করে রেখেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
বিশেষ সূত্র আরও জানায়, আরসা ও আরএসও-এর মধ্যে পূর্বে সশস্ত্র সংঘাত হলেও, বর্তমানে তাদের মধ্যে কোনো হানাহানি নেই।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্থানি হাইকমিশনার এর উদ্যোগে উক্ত দুই সশস্ত্র রোহিঙ্গা সংগঠনের মধ্যে একটা সমঝোতা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের লেমুছড়ি, বাহির মাঠ, পাইনছড়ি, কুরিক্ষ্যং সীমান্ত এলাকা, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা, আমতলীর মাঠ, হামিদিয়া পাড়া, আশার তলী, জামছড়ি, ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমরু, বাইশফাঁড়ি, ভাজাবনিয়া, গর্জন বনিয়া সীমান্ত এলাকা ইত্যাদি এলাকায় আরসার তৎপরতা জোরদার হয়েছে।
তবে এসব এলাকায় আরসার স্থায়ী ক্যাম্প নেই এবং তাবু টাঙিয়ে অবস্থান করে, ঘুরে ঘুরে স্থান পরিবর্তন করে অবস্থান করে কার্যক্রম চালায় বলে জানায় সূত্রটি।
অপরদিকে রোহিঙ্গাদের আরেকটি সশস্ত্র দল আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি রয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়নে ২৭৭নং ক্রোক্ষ্যং মৌজার আলিয়ানঝিরি নতুন চাকপাড়া গ্রামের ক্রোক্ষ্যং চাকপাড়া বনে এবং ২৭৪নং দোছড়ি মৌজার ওয়াছাখালী ঝিরি আগার গহীন জঙ্গলে। সেখানে তারা দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে জানা যায়।
সূত্রে আরও জানা যায়, এখন চট্টগ্রামের বিভিন্ন গার্মেন্টসে এমডিসহ বিভিন্ন উচ্চপদে রোহিঙ্গারা চাকরি করছে। স্থানীয়দের ধারণা, যেখানে কাপড় ইউনিফর্ম পাওয়া গেছে, সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকৃত ঠিকানা বা তাদের বায়োডাটা পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে আসলে কারা এই ইউনিফর্মগুলো অর্ডার দিয়েছিল।
এছাড়া দেখা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে যে ইউনিফর্মগুলো জব্দ করা হয়, সেগুলোর সাথে ইতোমধ্যে আরসার সশস্ত্র সদস্যদের কর্তৃক ব্যবহৃত ইউনিফর্মের প্রায় হুবহু সাদৃশ্য রয়েছে। তবে, কেএনএফের কাছে সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া জঙ্গী সংগঠন ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’এর সদস্যদের পোশাকের সাথেও মিল রয়েছে।
অপরদিকে, কেএনএফের বর্তমান ইউনিফর্ম এর মিল রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম এর সাথে।
এদিকে গুইমারা উপজেলায় এখনো আতঙ্ক কাটেনি, সাধারন মানুষের জনজীবন চরম স্থবির হয়ে পড়েছে। গত ২৮শে সেপ্টেম্বর থেকে রামসু বাজারের প্রবেশ মুখে সেনাবাহিনী ১৪৪ধারা উঠে গেলেও যুদ্ধের বাঙ্কার বানিয়ে অবস্থান করে চেকিং চলছে।
গত ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২৫রামসু বাজারে সেনা-সেটলার হামলা, অগ্নিসংযোগ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে তিন মারমা যুবক নিহতের ঘটনায় গুইমারায় জনমনে এখনো চরম আতঙ্ক কাটেনি। স্বাভাবিক হয়নি সাধারন মানুষের জনজীন। গুইমারা থানা পুলিশের অজ্ঞাতনামা আসামি করে দায়ের মামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ আরো বেশী আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সেনাবাহিনীর সদস্যরা গত ২৮শে সেপ্টেম্বর থেকে রামসু বাজার প্রবেশ পথে বালুর বস্তা দিয়ে বাঙ্কার বানিয়ে রাতদিন পাহারায় নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া তারা আকাশে ড্রোন উড়িয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করে থাকে।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালায় মারমা কিশোরী ধর্ষণে জড়িত সকল ধর্ষককে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে জুম্ম ছাত্র জনতার আহ্বানে গুইমারা রামসু বাজার এলাকায় অবরোধ পালনকালে সেনাবাহিনী ও সেটলার বাঙালিরা হামলা চালায়।
এতে সেনাবাহিনীর গুলিতে আখ্রক মারমা, থোয়ইচিং মারমা ও আথুইপ্রæু মারমা নামে তিন মারমা যুবক নিহত হন। সেটলাররা রামসু বাজারের দোকানপাটসহ আশে-পাশের পাহাড়িদের বসতবাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়।
অন্যদিকে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সংলগ্ন গর্জন বনিয়া থেকে সুমন তঞ্চঙ্গ্যা(৩৮), পীং রাশিঅং তঞ্চঙ্গ্যা নামে এক জুমচাষীকে রোহিঙ্গা জঙ্গী সংগঠন আরাকান সলিডারিটি অর্গারেশন(আরএসও) ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মী(আরসা) কর্তৃক অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বুধবার (৮ অক্টোবর) অপরাহ্ন ২টায় নিজ পাড়া(গর্জনবনিয়া) থেকে ২-২৩ কলোমিটার পূর্বে জুমের বেগুন ক্ষেত দেখতে গেলে তিনি নিখোঁজ হন। সন্ধ্যা হওয়ার পরও ঘরে ফিরে না আসার গ্রাম থেকে ১০-১২জন লোক সুমন তঞ্চঙ্গ্যাকে খোঁজ করতে যান। সুমন তঞ্চঙ্গ্যার জুম ক্ষেতে গিয়ে জুমের চারদিকে ডাকাডাকি করেও কোন হদিস পাননি। পরে গ্রামবাসীরা জুমের দক্ষিণ দিকে ১০-১২জনের জুতার পায়ের চিহ্ন দেখতে পান।
তখনই এলাকাবাসী সন্দেহ হয় যে, সুমন তঞ্চঙ্গ্যাকে সেখানকার এলাকায় অবস্থান করা আরএসও ও আরসা সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। সুমন তঞ্চঙ্গ্যাকে না পেয়ে গ্রামবাসীরা পাড়ায় এসে ৭-৮টার দিকে গর্জনবনিয়া বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।
বিজিবি ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ সুমন তঞ্চঙ্গ্যার নাম ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে দায়সারাভাবে বলেন যে, সুমন তঞ্চঙ্গ্যাকে খোঁজ পেলে তারা গ্রামবাসীদেরকে জানাবেন।
আরো উল্লেখ্য, গত ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ঘুমধুম ইউনিয়নের ভালুকিয়া থেকে ওয়ামং তঞ্চঙ্গ্যা নামে আরেক গ্রামবাসীকে অপহরণ করে আরএসও ও আরসা জঙ্গীরা। ওয়ামং তঞ্চঙ্গ্যাকে এখনো কোন খোঁজ মেলেনি।
এর আগে গত ১৬ই মে ২০২৪ তারিখে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং নাফ নদ ৫নম্বর সুইসগেট এলাকা থেকে ছৈলামং চাকমা(২৯) ক্যমংখো এ তঞ্চঙ্গ্যা (২৫) নামে দুইজন তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসঅকে রোহিঙ্গ্যা জঙ্গী গোষ্ঠী কর্তৃক অপহরণ করা হয়।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন