খাগড়াছড়িতে ভোট জালিয়াতি পরিকল্পনার অভিযোগ, অস্বীকার
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় আগামী ১৬ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল আলমের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতি, কালো টাকা ছড়িয়ে ভোট কেনা, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ভোট প্রভাবিত ও কেন্দ্র দখলের পরিকল্পনার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ওয়াদুদ ভূইয়া।
বৃহস্পতিবার(১৪ই জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তার খাগড়াছড়িস্থ বাসভবন বৈঠকে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করে বলেন, মোবাইল প্রতীকের এই মেয়র প্রার্থীর লোকজন ধানের শীষের এজেন্ট ও ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে এখনই হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। এছাড়া রফিকুল আলমের সমর্থিত সন্ত্রাসীরা এলাকায় এলাকায় অবস্থান নিলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গড ফাদার খ্যাত ওয়াদুদ ভূইয়া অভিযোগ করেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্রে ঢুকে ভোটারদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের পছন্দের বা নিজেদের প্রার্থীকে বোতাম টিপে অবৈধ ও জোর পূর্বক ভোট প্রদানের পরিকল্পনা করছে।
এ সময় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে মেয়র প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল অভিযোগ করেন, শহরের মুসলীম পাড়ায় উঠান বৈঠক করার সময় ককটেল ফাটিয়ে ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। কেন্দ্রে সন্ত্রাসী ঢুকিয়ে দিয়ে জোরপূর্বক ভোট প্রদানের গোপন পাঁয়তারা করছে। মোবাইল প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল আলম নির্বাচনে অসৎ উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে বহিরাগতদের এনেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
মেয়র প্রাথী ইব্রাহিম খলিল আরো বলেন, রফিকুল আলম নির্বাচনী প্রচারণাসহ ধারাবাহিকভাবে চলমান নির্বাচনী কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে অপ্রত্যাশিত ও সন্ত্রাসী আচরণ করে যাচ্ছে। যা কখনই একটি নির্বাচনের জন্য সুখকর নয় এবং সৃষ্ট ভোটের অন্তরায়।
খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র রফিকুল আলমের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি খাগড়াছড়ি পৌরসভার অসমাপ্ত কাজ শেষ করে পরিবেশবান্ধব, যানজটমুক্ত, পরিচ্ছন্ন পর্যটন নগর গড়ার অঙ্গীকার করেছেন বর্তমান মেয়র ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো: রফিকুল আলম। পৌরসভার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি সবার সহযোগিতা চেয়েছেন। গত শুক্রবার(১লা জানুয়ারি) সকালে পানখাইয়া পাড়ায় নিজ বাসায় আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ অঙ্গীকার করেন। দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১৬ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী মো: রফিকুল আলম ইভিএম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশে জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তার বিজয় নিশ্চিত দাবি করে ভোট গ্রহণে স্বচ্ছতার মানদন্ড নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন।
মো: রফিকুল আলম বলেন, খাগড়াছড়ি পৌরসভা জরাজীর্ণ প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখান থেকে উন্নয়নমুখী একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয়েছে। পরিকল্পিত আধুনিক শহর করতে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী উন্নয়ন কাজ চলছে। অন্য প্রার্থীরা পৌর কর নিয়ে মিথ্যাচার করছে জানিয়ে তিনি বলেন, পৌর কর আদায়ের হার নিম্নে ৭৫শতাংশ থাকতে হবে। এর নিচে হলে পৌর পরিষদ বাতিল হয়। তাই বার্ষিক মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ কর নির্ধারণ করতে হয়। দেশি-বিদেশি সব প্রতিষ্ঠান প্রকল্প দেওয়ার আগে পৌরসভার কর আদায়কে গুরুত্ব দেয়। ইভিএম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে প্রশাসনকে সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন আয়োজনের অনুরোধ জানান রফিকুল আলম।
তিনি বলেন, কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। আমি দায়িত্বে আছি, এ কারণে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে। তিনি নিজেকে আবারও সম্মিলিত নাগরিক কমিটির মনোনীত প্রার্থী দাবি করে বলেন, ২০৩৭সালে খাগড়াছড়ি পৌরসভা কি হতে পারে সেই মাস্টার প্লান নিয়ে এগুচ্ছে। খাগড়াছড়ি পৌরসভার অসমাপ্ত কাজ শেষ করে পরিবেশবান্ধব, যানজটমুক্ত এবং পরিচ্ছন্ন পর্যটন নগরী গড়ার অঙ্গিকার করেছেন। খাগড়াছড়ি পৌরসভা জরাজীর্ন প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখান থেকে উন্নয়নমুখী একটি প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করা হয়েছে। পরিকল্পিত আধুনিক শহর করতে মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী উন্নয়ন কাজ চলছে। পরপর দুইবার পৌরবাসী আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার পর এ পৌরসভাকে একটি আস্থার ঠিকানা ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছি।
এ সময় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব হোসেন আহম্মেদ, প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এডভোকেট আকতার উদ্দিন মামুন, সম্মিলিত নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব হোসেন আহম্মদ চৌধুরী, সদস্য তাজুল ইসলাম বাদল, আব্দুল মোমিন, আব্দুল জব্বার ও নুরুন্নবীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ প্রমুখরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বর্তমান পৌর মেয়র মো: রফিকুল আলম নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশি থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে পাল্টা শো-ডাউন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তিনি এবার মোবাইল ফোন প্রতীক পেয়েছেন। গত ২০১৫সালের ৩০ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে পাঁচ প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বর্তমান মেয়র মো: রফিকুল আলম সম্মিলিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে মোবাইল প্রতীক নিয়ে ৯হাজার ৪শ ১৪ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আর এ পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়িতে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় পাল্টা-পাল্টি হামলা-মামলা। মো: রফিকুল আলমের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগে তারই বড় ভাই খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম দলীয় পদ হারান। গত বছরের ৫ই ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি সদরসহ জেলার তিন পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর প্যানেল তৈরি করতে বিশেষ বর্ধিত সভা হয়েছে। ওই সভায় খাগড়াছড়ি সদর পৌরসভায় মেয়র পদে ৭জনের নাম প্রস্তাব আসে। পরে ওই প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী, বর্তমান পৌরসভার মেয়র মো: রফিকুল আলম ও জেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য পার্থ ত্রিপুরা জুয়েলের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ১৮ই ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ মনোনয়ন চুড়ান্ত করা হয়।
১৬ই জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী-বর্তমান মেয়র মো: রফিকুল আলম, আওয়ামীলীগ-নির্মলেন্দু চৌধুরী, বিএনপি-ইব্রাহিম খলিল, জাতীয় পার্টি-মো: ফিরোজ আহম্মেদসহ মোট চারজন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডের ১৬ই জানুয়ারি ভোট গ্রহণ হবে। এবার মোট ভোটার ৩৭হাজার ৮৭জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২০হাজার ৩৫১জন ও নারী ভোটার ১৬হাজার ৭শ ৩৬জন। খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ভোট কেন্দ্র ১৮, আর বুথ ১০৯টি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন