খাগড়াছড়িতে ৪দিন ব্যাপি বৈসাবি উৎসব’র উদ্বোধন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে ৪দিন ব্যাপি পাহাড়ের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব বৈসাবি আয়োজনের উদ্বোধন করা হয়েছে।

বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু উদযাপন-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত মেলার উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রী সমমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষ বসবাস করছে। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের আলাদা আলাদা সংস্কৃতি রয়েছে। সকল সংস্কৃতির মাঝেই আমরা ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি করি। আগে চৈত্র সংক্রান্তি যার যার মতো করে পালন হতো।

১৯৯৭সাল থেকেই বৈসাবি(বৈ-বৈসু, সা-সাংগ্রাই, বি-বিজু) ত্রিপুরা চাকমা মারমা তিন সম্প্রদায়ের উদযাপিত উৎসবকে এক সাথে বৈসাবি পালন করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চায় বঙ্গবন্ধু যা স্বপ্ন দেখেছিলেন সকল জাতি গোষ্ঠির সম্প্রদায়ের মানুষ একই ছাতার নিচে থেকে সকলেই সকলতরে উন্নয়নে হিতাকাঙ্খি হই। এখন বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু তাঁর সুযোগ্য কন্যা তিনি চান সকল সম্প্রদায়ের মাঝে যেন একটা ঐক্যের বন্ধন আরও সু-দৃঢ় হয় সেই লক্ষ্যে তিনি নিরন্তন ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জননেত্রীর প্রচেষ্টার ফসল আজ আমরা পাচ্ছি। আগে ক্ষুদ্র জাতি সত্তা তাদের ধর্মীর অনুষ্ঠান পালনে একটু সংকিত বা ভয় ছিল তা আজ নেই। আমরা সকলেই নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করছি যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন, জাতি ধর্ম বর্ণ মিলেই আমরা বাংলাদেশী। দেশের আঠার কোটি মানুষের ছত্রিশ কোটি হাতকে তিনি কাজে লাগিয়ে আগামী ৪১সালের মধ্যেই এদেশ উন্নত সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করতে চান। তিনি বলেন-অসম্প্রদায়িক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবো এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট’র আয়োজনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রুু চৌধুরী অপু এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: জাহাঙ্গীর আলম, খাগড়াছড়ি ডিজিএফআই ডেট কমান্ডার কর্নেল সরদার ইসতিয়াক আহমেদ, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ প্রমুখ।

ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট’র উপ-পরিচালক জিতেন চাকমার উপস্থাপনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, বশিরুল হক ভূঞা, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের জিটুআই মেজর মো: জাহিদ হাসান, জেলা পরিষদ সদস্য শতরূপা চাকমা, নিলোৎপল খীসা, শুভ মঙ্গল চাকমা, শাহিনা আক্তার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ, জনসংযোগ কর্মকর্তা চিংলামং চৌধুরী প্রমূখ। প্রথমে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি ফিতা কেটে চার দিনে মেলার উদ্বোধন করেন।

বৈসাবি বাংলাদেশে প্রধান ৩ পাহাড়ী জাতিগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব। বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু এই তিন নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে বৈসাবি নামের উৎপত্তি। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করে বাংলা নববর্ষ। পুরনো বছরের কালিমা আর জীর্ণতাকে ধুয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। ত্রিপুরা,চাকমা ও মারমারা বর্ষবরণ উৎসব পালন করে বিভিন্ন নামে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ বসবাস করছে। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের আলাদা আলাদা সংস্কৃতি রয়েছে। সকল সংস্কৃতির মাঝেই আমরা ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি করি।আগে চৈত্র সংক্রান্তি যার যার মতো করে পালন হতো। গত ১৯৯৭সাল থেকেই বৈসাবি(বৈ-বৈসু, সা-সাংগ্রাই, বি-বিজু) পাহাড়ের তিন সম্প্রদায়(ত্রিপুরা,চাকমা ও মারমা)কে প্রাধান্য দিয়ে উদযাপিত উৎসবকে এক সাথে বৈসাবি পালন করা হয়ে থাকে।কেউ বৈসু, কেউ সাংগ্রাই আবার কেউ বিজু। বর্ষবরণ উৎসবকে ত্রিপুরারা বৈসু, মারমারা সাংগ্রাই ও চাকমারা বিজু বলে অভিহিত করে থাকে এবং এগুলো বৈসাবি নামে পরিচিত। এর বাইরেও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীরা বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। সাধারণত বছরের শেষ দুইদিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি পালিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায়(খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান)।

ত্রিপুরাদের বর্ষবরণ উৎসবের নাম বৈসু। বৈসু উৎসব এদের জীবনের সবচেয়ে বড় উৎসব। বৈসু উৎসব একটানা তিন দিন পালন করা হয়। এই তিন দিনের অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে রয়েছে হারি বৈসু, বিসুমা বৈসু ও বিসিকাতাল। বৈসু উৎসবের প্রথম দিন হারি বৈসু। এই দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তারা ঘরদোর লেপেপোঁছে, বসতবাড়ি কাপড়-চোপড় পরিস্কারপরিচ্ছন্ন করে। ত্রিপুরারা যুবক-যুবতীরা বিশেষ করে বৃদ্ধ মা-বাবা ও বড়দের গোসল করিয়ে নতুন বছরের আর্শ্বিাদ নিয়ে থাকে। ফুল দিয়ে ঘরবাড়ি সাজায়। কেউ কেউ পুষ্পপূজা করে। এদিন মহিলারা বিন্নি চাউলের পিঠা তৈরি করে থাকে। এদিন এরা দাং, গুদু, চুর, সুকুই, উদেং ও ওয়াকারাই খেলায় অংশগ্রহণ করে।হারি বৈসু উৎসবের দিন থেকে এরা গরয়া নৃত্য পরিবেশন শুরু করে। কিন্তু এখন ফুল ভাসানো(নদীতে ফুল নিবেদন করা) এবং গরয়া নৃত্য যুগের পরিবর্তনের ফলে উদ্বোধন করা হয়।

আলোচনা সভা পরপরেই ইনস্টিটিউটের শিল্পী ও স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।