খাগড়াছড়ির ইউপিডিএফ সদস্যকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা উপজেলা দীঘিনালায় পিসিজেএসএস সন্তু লারমা কর্তৃক ইউপিডিএফ সদস্য জীবন ত্রিপুরাকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও এই স্লোগানে দীঘিনালায় পিসিজেএসএস(সন্তু লারমা) মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক ইউপিডিএফ সদস্য জীবন ত্রিপুরাকে হত্যার প্রতিবাদে ও দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম(ডিওয়াইএফ) দীঘিনালা উপজেলা শাখা।
মঙ্গলবার(১২ জুলাই) বেলা ২.৩০টায় মিছিল পরবর্তী অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সদস্য ইয়ান চাকমা ও পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য নিকেল চাকমা।
বক্তারা বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জাতির জন্য অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। যার কারণে ইউপিডিএফ সংঘাত বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য পিসিজেএসএস(সন্তু লারমা)-এর প্রতি বার বার আহবান জানিয়ে আসছে। কিন্তু পিসিজেএসএস সরকারের বিশেষ মহলের ফাঁদে পা দিয়ে ইউপিডিএফের সাথে হওয়া সমঝোতার শর্ত লংঘন করে সংঘাতে লিপ্ত হতে নানা চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ১১ই জুন পিসিজেএসএস’র সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা পানছড়ি ও দীঘিনালায় ইউপিডিএফ সদস্যদের ওপর হামলার পর আবারো মঙ্গলবার সকালে দীঘিনালায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ইউপিডিএফ সদস্য জীবন ত্রিপুরাকে গুলি করে হত্যা করেছে।
বক্তারা পিসিজেএসএস(সন্তু লারমা)-এর এই কাপুরুষোচিত হামলা ও হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
তারা আরো বলেন, শাসকগোষ্ঠী ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত জিইয়ে রেখে ফায়দা লুটতে চায়। এজন্য তারা পিসিজেএসএস-কে উস্কে দিয়ে নতুন করে সংঘাত বাঁধিয়ে দিতে চাইছে। আর পিসিজেএসএস এই ফাঁদে পা দিযে জাতি ধ্বংসী সংঘাতে জড়াচ্ছে।
বক্তারা শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দিয়ে অবিলম্বে জাতির ধ্বংসী ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে অধিকারহারা জনগণের জন্য ইউপিডিএফের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য পিসিজেএসএস-এর প্রতি আহবান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা ইউপিডিএফ সদস্য জীবন ত্রিপুরাকে হত্যার সাথে জড়িত পিসিজেএসএস(সন্তু লারমা) মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)’র খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, সকালে একদল সন্ত্রাসী জীবন ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক কাজে বাবুছড়া যাওয়ার পথে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতিকে(পিসিজেএসএস) এ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য তিনি দায়ী করেন।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস) সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন মূল প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের সজীব চাকমা এ ঘটনা অস্বীকার করেছেন। নিজেদের ভূলের এ হত্যা কান্ড ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আন্দোলনে বিশ্বাসী।
ইউপিডিএফ’র সূত্র জানায়, কোন ধরনের উসকানি ছাড়াই পিসিজেএসএস সন্তু দলের সন্ত্রাসীরা অর্তকিত গুলি বর্ষণ করে। ইউপিডিএফ এই হত্যাকান্ডের নিন্দা জানায়। এলাকাটি খুবই দুর্গম হওয়ায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর কোন সদস্য এখনো ঘটনাস্থলে পৌঁছেনি। মরদেহটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় এলাবাসীরা জানায়, নিহত ইউপিডিএফ সদস্য নয়ন ত্রিপুরার মরদেহ মাইনি নদীর তীরে পরে রয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে জেলা ও দীঘিনালা এলাকায় সেনাবাহিনী টহল জোরদার করা হয়েছে। নিহত জীবন ত্রিপুরা রাঙ্গামাটির রাজস্থলী বটতলি এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
এদিকে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা দীঘিনালা উপজেলাধীন বাবুছড়ায় এক অতর্কিত সশস্ত্র হামলায় জীবন ত্রিপুরা নামে ইউপিডিএফ সদস্যকে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে খুনের রাজনীতি বন্ধের জন্য সন্তু লারমার প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার ১২ই জুলাই সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরও বলেন, সকাল ৯টার দিকে ইউপিডিএফের দীঘিনালা ইউনিটের সংগঠক জীবন ত্রিপুরা সাংগঠনিক কাজে বাবুছড়া যাচ্ছিলেন। এ সময় ধনপাদা নামক এলাকায় ওঁৎ পেতে থাকা পিসিজেএসএসের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে তিনি ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান।’
সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র সদস্য ডা: জ্ঞান, পাভেল, বরুণ ও রমেশের নেতৃত্বে উক্ত সশস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে বলে অংগ্য মারমা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন এবং বলেন ‘নিহত জীবন ত্রিপুরার(২২) বাড়ি রাজস্থলীর বটতলি গ্রামে এবং তিনি দীঘিনালায় একজন সাধারণ সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।’
ইউপিডিএফ নেতা অংগ্য মারমা সন্তু লারমা ও পিসিজেএসএসকে অবিলম্বে ভ্রাতৃ-হত্যার রাজনীতি বন্ধ করে ২০১৮সালে দুই পাটির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সমঝোতার শর্ত মেনে চলার জন্য আহব্বান জানিয়েছেন। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) পেয়ার আহমেদ জানান, এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম। তিনি ঘটনা সম্পর্কে অবগত নন। যদি এমন কিছু ঘটনা ঘটে থাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য দুর্গম বাবুছড়া ইউনিয়নে নাড়াইছড়িতে পিসিজেএসএস-ইউপিডিএফ’র বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছে। জেলার দীঘিনালা নাড়াইছড়ি(জারুলছড়ি)র ভারতের সীমান্তবর্তী ওল্টাছড়ি এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস) মূল সন্তু লারমা ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) মূল প্রসিত দলের মধ্যে ভয়াবহ বন্দুক যুদ্ধ হয়েছে। আধা ঘণ্টাব্যাপী চলা এই যুদ্ধে ইউপিডিএফ প্রসিত দলের পোস্ট কালেক্টর জীবন ত্রিপুরা(২৬) নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করে ইউপিডিএফ। মঙ্গলবার(১২ই জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার বাবুছড়া ইউনিয়নের জারুলছড়ির পাকজ্জাছড়ি গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন