খাগড়াছড়ি জেলা আঃলীগের বর্ধিত সভা, কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার বর্জন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (৯ এপ্রিল) বিকেলে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। সভা বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। তবে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী নেতা এ বিশেষ বর্ধিত সভা বর্জন করেছেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, এডভোকেট নাসির আহমেদ চৌধুরী, সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চাইথোঅং মারমা, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য জাফর আহম্মদ, জেলা পরিষদ সদস্য এমএ জব্বার, এড আশুতোষ চাকমা, মংক্যাচিং চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম, মো: শফিকুল ইসলাম রহমান ফারুক, জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটি সদস্য ও নয় উপজেলা ও তিন পৌরসভার আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদক। তবে সভায় কি সিদ্ধান্ত হয়েছে জানা যায়নি।

এদিকে বর্ধিত সভার বিরোধিতা করে গত শুক্রবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে পর্যটন মোটেলের হলরুমে গোপনীয়তা রক্ষা করে এক সভা করেন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন সহ-সভাপতি, উপদেষ্টাসহ অনেক নেতাকর্মীরা। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রণ বিক্রম ত্রিপুরা সভার সভাপতিত্ব করেন। এ সময় জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মো: জাহেদুল আলম, অ্যাডভোকেট নাসির আহমেদ উদ্দিন, খগেশ্বর ত্রিপুরা, সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমা, তপন কান্তি দাশ, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র শামছুল হক ও জেলা কমিটির সদস্য জয়নাব দেব সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

তবে সেদিনের (৭ এপ্রিলের) বৈঠকে উপস্থিত জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা এডভোকেট নাসির আহমেদ চৌধুরী ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মনির হোসেন খান আজকের জেলা আওয়ামীলীগের বিশেষ বর্ধিত সভায়ও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা বলেন, কোনও এজেন্ডা ছাড়া বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। মনগড়াভাবে সংগঠন চলতে পারে না। জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি ও কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি নিজের মতো করে সংগঠন চালাতে চাচ্ছেন। তাই সমমনা অনেকে মিলে আমরা ৯ই এপ্রিলের বিশেষ বর্ধিত সভা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও মাটিরাঙা পৌরসভার মেয়র শামসুল হক বলেন, বর্ধিত সভা মানে, সেখানে একজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রধান অতিথি থাকবেন। যার কাছে আমরা অভাব-অভিযোগ করবো, বিচার দেবো। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের কাছে বিচার দিয়ে লাভ নাই। তাই এমন বর্ধিত সভায় যাইনি।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল বলেন, এজেন্ডাবিহীন বর্ধিত সভা। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দলীয় কার্যালয় থাকতে জেলা পরিষদের বাংলোতে এমন সভা ডাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, কয়েক জন বসে মিটিং করেছে শুনেছি। মূলত, জাহেদুল আলম পরিবারকে আওয়ামীলীগে আনার জন্য তারা সভা করেছে। তিনি গঠনতান্ত্রিক নিয়মে সংগঠন চলছে জানান।
একটি সূত্র জানায়, গত ৭ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত সভায় আগামী জুন মাসের মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল সম্পন্ন করতে এবং পার্বত্য জেলা পরিষদের নানা অসঙ্গতি ও জেলা আওয়ামীলীগের অসাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন সভায় অংশগ্রহণকারী অনেকে।

উল্লেখ্য, ২০১৪সালের নির্বাচনের আগে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। পরবর্তীতে ২০১৯এর সবশেষ কাউন্সিলেও দ্বিতীয় বারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন।

২০১৫সালে পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগে দলীয় কোন্দল চরমে পৌঁছে। কোন্দলকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম বহিস্কৃত হন। কিন্তু কোন্দল থামেনি। এ কোন্দলে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘাত, সংঘর্ষ হামলা-পাল্টা হামলায় দলীয় কর্মীর প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে কোন্দল নিরসন হয়।

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সামনে রেখে আবারও সে কোন্দল দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন সচেতন পর্যবেক্ষক মহল।