খাগড়াছড়ি পাহাড়ে জুমের বদলে বেড়েছে রসালো আনারস চাষ
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মহালছড়ি উপজেলাসহ ৯টি উপজেলাতে আগাম জাতের রসাল ও সুমিষ্ট আনারসের চাহিদা সমতলে বেড়েছে। পার্শ্ববর্তী রাংগামাটির নানিয়াচর বগাছড়ি এলাকায় একটা সময় পাহাড়ের টিলা ভূমিতে জুম চাষ নিয়ে ব্যস্ত থাকত সাধারণ জুমিরা। কিন্তু সেই টিলাতে এখন আগাম আনারস চাষ হচ্ছে। এতে করে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। টিলা ভূমিতে চাষ করা আনারস রসাল ও সুমিষ্ট হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে সমতলে।
জানা গেছে, পাহাড়ি জেলাগুলোতে আনারসের মৌসুম ছাড়াই বিগত কয়েক বছর ধরে আগাম ফলনের আনারস চাষ হচ্ছে। এতে করে মৌসুমে উৎপাদিত আনারসের থেকে আগাম আনারসে বাড়তি লাভ করছেন চাষিরা।
মহালছড়ির মধ্য আদাম গ্রামের চাষি সুলক্ষণ চাকমা জানান, আগাম ১৬হাজার আনারসের চারা লাগিয়েছি। এর মধ্যে প্রায় ১৪হাজারের বেশি ফল পেয়েছি। এই আনারসগুলো রসাল এবং সুস্বাদু হওয়ায় বাগান থেকেই ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আগাম আনারস চাষে খরচ অনেক বেশি। প্রতি পিস আনারস ১৪-২০টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারি। এতে আমার বেশি লাভ হয় না।
আনারস চাষি রিপন চাকমা বলেন, এই এলাকায় এখন অনেকেই আগাম আনারসের চাষ শুরু করেছে। আগাম ফল আসলে ভালো লাভে বিক্রি করা যায়। এই আনারসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে সমতলে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে কিনে নিয়ে যায়। এতে চাষিদের কোনো প্রকার ঝামেলা পোহাতে হয় না। আনারস চাষিরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় আনারস নিয়ে যাচ্ছেন মহালছড়ি ভাসমান পাইকারি বাজারে।
নোয়াখালী থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম জানান, আমি মহালছড়িতে এসে মৌসুমি ফল নিয়ে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। বাগান থেকে কেনার কারণে একটু কম দামে কিনে নিতে পারি। মৌসুমে প্রতি পিস আনারস ৪-৫টাকায় কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে ১৪-২০টাকায়। সব খরচ দিয়ে খুব বেশি লাভ করতে পারি না।
ব্যবসায়ী মো: সোহেল জানান, আগাম আনারসের দাম মৌসুমের থেকে অনেক বেশি। বাগান থেকে আনারস কিনে চট্টগ্রামে নিয়ে যায়। আনারস রসাল ও সুস্বাদু হওয়ায় ভালো চাহিদা আছে।
নানিয়ারচরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আনারস চাষিরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় আনারস নিয়ে যাচ্ছেন মহালছড়ি ভাসমান পাইকারি বাজারে নিয়ে আসে। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা আনারস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে।
শ্রমিক জাকির হোসেন জানান, চাষিদের বাগানের আনারসগুলো পাইকাররা কিনে নেওয়ার সময় ট্রাকে উঠানোর কাজটি করে থাকি। এরপর ট্রাকে করে আনারসগুলো দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। শুধু আনারসই নয়, পাহাড়ে উৎপাদিত বিভিন্ন মৌসুমি ফল লোড-আনলোডের কাজ আমরা করে থাকি।
শ্রমিক মো: রশিদ বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই কাজ করে থাকি। ১০০পিস আনারস গাড়িতে লোড করে ৪০টাকা পায়। সারাদিনে ১০থেকে ১২টি গাড়ি লোড করতে পারি।
আনারস বাগানে কাজ করা মো: শফিকুল বলেন, আগাম আনারসের চাষ বেড়ে গেছে পাহাড়ে। যার ফলে আমাদের কাজের তেমন বেশি সমস্যা হয় না। প্রায় প্রতিদিনই কাজ থাকে বাগানে। কাজ করে ভালোভাবে সংসার চালাতে পারছি।
মহালছড়ি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয়ভাবে খুচরা বাজারে প্রতি জোড়া মাঝারি আকারের আনারস বিক্রি হচ্ছে ৪০টাকা দরে। বড় আকারের আনারস বিক্রি হচ্ছে ৬০টাকা জোড়া।
মহালছড়ি কুষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আব্দুল জব্বার জানান, আগাম আনারস চাষে কৃষকরা ভালো লাভবান হচ্ছেন। পাইকারদের কাছে তারা এখন ১৪-২০টাকা দরে আনারস বিক্রি করছেন। পাইকাররা বাইরে নিয়ে সেই আনারস ৩০-৪০টাকা দরে বিক্রি করছেন। এখানকার আনারস এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। এতে করে চাষিরা আনারস চাষে ঝুঁকছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন