খালি হাতে আর হতাশায় বাড়ি ফিরেছেন ভোলার জেলেরা

ভোলার উপজেলা চরফ্যাশনে সরকার ঘোষিত লকডাউনে থমকে আছে দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া কর্মঠো মানুষের ভাগ্যের চাকা। জেলে ও কৃষকসহ অন্যান্য কর্মফেরত দিনমজুরেরা ঘরে বসে অলস সময় পাড় করছে। এসব দিন মজুরেরা কাজে যোগ দেয়ার সুযোগ না থাকায় ঘরবন্দি জীবন কাটালেও এখনো পর্যন্ত তারা কোন ধরনের সরকারি সহায়তা পায়নি বলে জানা গেছে।

তবে সারা দেশের ন্যায় চরফ্যাসনের মেঘনা ও তেতুলিয়া নদী উপকূলের ১৯০ কিলোমিটার এলাকা মৎস্য অভয়াশ্রমে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকল প্রকারের মাছ ধরা বা বেচাঁকেনা নিষিদ্ধ করে সরকার। জেলেরা মার্চ থেকে শুরু করে চলতি এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত অবরোধের আওতায় থাকায় প্রকৃত কার্ডধারী অনেক জেলেই পায়নি সরকারি বরাদ্ধকৃত চাল।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী এ অঞ্চলে ৪০হাজার ২৬৪ জন জেলে রয়েছে। কার্ডধারী জেলে রয়েছেন ২১হাজার ২১৫ এবং নতুন নিবন্ধনে (চলমান) জেলে রয়েছেন ১৫ হাজার ২৯০ জন। প্রত্যেক কার্ডধারী জেলে ২মাসে ৮০ কেজি করে মোট ১৫শ ২২.৬৪ মেট্টিক টন চাল বরাদ্ধ পেয়েছেন। তবে ১৯ হাজার ৩৩ জন কার্ডধারী জেলে এ পুনর্বাসনের চাল পেয়েছেন।

চাল না পেয়ে খালি বস্তা হাতে নিয়ে হতাশায় বাড়ি ফিরেছেন কার্ডধারী এবং কার্ড ছাড়া হাজারো জেলে। এসব জেলেদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের কাছে বস্তা বা ব্যাগ নিয়ে চাল আনার জন্য গেলেও নতুন করে নামের তালিকা হলে তখন চাল দিবে বলে কার্ড না থাকায় খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন এসব জেলেকে।

সরকারি হিসেবের ৪০ হাজার জেলের প্রায় ৮০হাজার পরিবার থাকলেও বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী চরফ্যাসনের উপকূলে জেলে রয়েছে প্রায় ১ লাখের মতো। এমন দাবী করেন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলো।

উপজেলার ঘোষেরহাট গ্রামের ইব্রাহীম মাঝি বলেন, সরকারি তালিকায় স্থানিয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানদের রাজনৈতিক সমর্থক এবং পরিচিত স্বজনেরা স্থান বেশি পাওয়ায় প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত রয়েছে গেছে জেলে পুনর্বাসনের বরাদ্ধ থেকে।

উপজেলার মাদ্রাজ, হাজারীগঞ্জ, এওয়াজপুর, নীলকোমল ও নুরাবাদ ইউনিয়নের একাধিক জেলে বলেন, এ অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ১লাখের মতো জেলে থাকলেও জেলে পুনর্বাসন কার্ড দেয়া হয়েছে মাত্র ২১ হাজার জেলেকে। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৩৩ জন জেলে পেয়েছে সরকারি বরাদ্ধ।
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, বাকি জেলেরা কোথায় এবং কার কাছে গেলে পরিবারের খাদ্যের বরাদ্ধ পাবে।

তবে ত্রাণ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, গত ৪ মার্চ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনী তফসীল ঘোষণা হলে ওই ৫টি ইউনিয়নে চাল বিতরণ কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ থাকলেও বর্তমানে তা বিতরণ করা হচ্ছে। এ উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে ১৯ হাজার ৩৩ জন জেলে পুনর্বাসনে ১৫শ ২২.৬৪ মেট্টিক টন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, চরফ্যাসনে ২১ হাজার ২১৫ জন কার্ডধারী জেলে রয়েছেন। বর্তমানে নতুন করে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। আরও ১৫ হাজার ২৯০ জন নতুন জেলেকে কার্ড দেয়া হচ্ছে। তবে চরফ্যাসনের নদী ও সাগর উপকূলে বিভিন্ন জেলা থেকে মৎস্য শিকারে আসা অনেক জেলেই রয়েছে।
এ এলাকায় জেলে কার্ডধারী এবং কার্ড ছাড়া প্রায় ১লাখ জেলে থাকলেও সবাইকে জেলে পুনর্বাসনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছেনা।