খালেদার কক্ষে ইঁদুর, বেড়াল, তেলাপোকা, বিছা : ফখরুল
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে যে কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটির মান নিয়ে আবারও আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, তার নেত্রীর কক্ষে নানা ধরনের অস্পৃশ্য প্রাণীর বসবাস রয়েছে।
ঈদের পরদিন নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি নেতা।
ফখরুল বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কারাগারে সাবেক এক প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে রাখা হয়েছে, সেটা কোন সভ্য সমাজে করা হয় না। তাকে রাখা হয়েছে একেবারে নিঃসঙ্গ অবস্থায়। তিনি ছাড়া আর কোন বন্দী সেখানে নাই। আর যে কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন তারা সারাদিন তাদের কাজ নিয়ে থাকেন, তারাও বেগম খালেদা জিয়ার থেকে দূরে থাকেন।’
‘তার ওপর কারাগারের ভিতরে বড় বড় ইদুর, তেলাপোকা, ছাড়পোকা, বিছা রয়েছে।’
‘কয়েক দিন আগে ম্যাডামের ঘরের মধ্যে একটি বড় ইদুর ধরেছে বিড়াল। এর পর থেকেই ম্যাডাম আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’
‘আমরা বার বার বলছি, আপনারা (সরকার) কেন তার এই আচরণ করছেন। এটাতো কোন সভ্য আচরণ নয়, ওটা অসভ্য বর্বরদের আচরণ।’
ফখরুল বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, তিনি কোন নির্বাচনে পরাজিত হন নাই। গণতন্ত্র্রের জন্য তিনি দীর্ঘ পথ পারি দিয়েছেন, স্বাধীনতার যুদ্ধে তিনি নিগৃত হয়েছেন। তার এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার পর থেকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি সেখানে যাবেন বলে তার কক্ষ সংস্কার করা হয়েছে, নানা আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংযোজন করা হয়েছে।
কারাগারে বিএনপি প্রধানের সেবায় একজন ব্যক্তিগত পরিচর্যাকারী দেয়া হয়েছে, যা নজিরবিহীন। এ ছাড়া কারা চিকিৎসক ছাড়াও তার চিকিৎসায় গঠন করা হয়েছে মেডিকেল বোর্ড। তার ওষুধ রাখার জন্য ফ্রিজ কিনে দেয়ার কথাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের অন্যতম বৃহৎ দলের নেত্রী হিসেবে সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করেই তাকে নানা সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে।
তবে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া আগে থেকেই অসুস্থ আর কারাগারের ‘অমানবিক’ পরিবেশের কারণে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু সরকার তার পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে দিতে চাইছে না।
দেশের শীর্ষ চিকিৎসালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল এবং সেনা পরিবারের চিকিৎসায় গড়ে তোলা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালকে একেবারেই সাধারণ মানের দাবি করে খালেদা জিয়াকে ‘বিশেষায়িত’ ইউনাইটেডে পাঠাতে আবার দাবি জানান ফখরুল।
গত ৭ এপ্রিল বিএনপি প্রধানকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে এনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। গত ১০ জুন থেকে তিন দিন তাকে এই হাসপাতালে আনার চেষ্টা হয়। কিন্তু তিনি এখানে আসবেন না। এরপর তাকে সিএমএইচে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়, কিন্তু সেখানেও যাবেন না তিনি। আর এরপর সরকার আর কিছুই জানায়নি।
ফখরুলের অভিযোগ, তার নেত্রীকে নিয়ে চক্রান্ত করা হচ্ছে। বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সাথে এমন আচরণ একমাত্র জনগণের কাছে যাতে যেতে না পারে সে জন্য করা হচ্ছে। দেশনেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এসমস্ত কিছু করা হচ্ছে।’
‘এটা তাদের নীলনকশা; দেশনেত্রীকে এবং বিএনপিকে রাজনীতির বাইরে নেয়ার। তথ্যমন্ত্রী সাহেব প্রায়ই জোড়েশোরে বলেন, আমরা সেই কারণেই উদ্বিগ্ন।’
বিএনপি এখন কী করবে-জানতে চাইলে দলের মহাসচিব বলেন, ‘এখানে ম্যাডামের জীবনটা সবচেয়ে বড় জরুরি। বেগম খালেদা জিয়া জনগণের সম্পদ, জনগণের নেতা, জণগনই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
‘আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, জনগণ তাকে মুক্ত করবে।’
আন্দোলন কখন থেকে শুরু হচ্ছে- এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘আন্দোলন ঈদের পরে বা আগে না। যেদিন থেকে এই সরকার ক্ষমতায় আসছে, সেদিন থেকে আমরা আন্দোলন করছি।’
‘আন্দোলন একটা পর্যায়ে এসেছে। আমরা মনে করি এই আন্দোলনে আমাদের বিজয় অবশম্ভাবী।’
অন্য এক এক প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করার জন্য প্রথম থেকেই একে একে নির্বাচনের প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছেন। বিচার বিভাগের প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছেন, একে একে প্রশাসনকে ধ্বংস করেছেন।’
‘ওনার গণতন্ত্র মানে হচ্ছে ওনি একা এবং তার পার্টি। এছাড়া আর কেউ নেই। এই গণতন্ত্র কখনই টিকে থাকতে পারে না, টিকবে না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন