‘খালেদার মানসিক সমস্যা দেখা দিলো কিনা পরীক্ষা করা দরকার’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মানসিক সমস্যা দেখা দিলো কিনা, সেটাও বলতে পারছি না। পরীক্ষা করে দেখা দরকার, তার মাথা ঠিক আছে কিনা। পদ্মা সেতু ও সাবমেরিন নিয়ে এতটুকু জ্ঞান তার নেই।

শনিবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্টিত সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন আগে পদ্মা সেতুর বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু করা হচ্ছে। কেউ এই পদ্মা সেতুতে উঠবেন না। আমরা দেখবো, খালেদা এবং বিএনপি নেতারা পদ্মা সেতুতে ওঠেন কিনা।

শেখ হাসিনার সরকারের কেনা ২টা সাবমেরিন উদ্বোধনের পরই ডুবে গেছে। খালেদা জিয়ার এমন মন্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নৌবাহিনীর জন্য সাবমেরিন কিনেছি। খালেদা জিয়া বলেন, তা পানিতে ডুবে গেছে। কিন্তু সাবমেরিন যে পানিতে ডুবে থাকে, এ জ্ঞানটুকুও তার নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রের কথা বলে, গণতন্ত্র হত্যার কথা বলে। পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান কোনো গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় এসেছিলেন? রাষ্ট্রপতি আবু সায়েম এর কাছ থেকে জিয়া কেমন করে বন্দুকের নল ধরে ক্ষমতা নিয়েছিলেন তা সায়েম সাহেবের লেখা বইয়ে বিস্তারিত বলা আছে। তিনি বইটি সবাইকে পড়ার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া মারা যাওয়ার সময় ভাঙা সুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি রেখে গিয়েছিলেন। সেটা থেকে কিভাবে এত দামি গাড়ি, দামি শাড়ি ও দামি দামি লঞ্চ বের হয়। জনগণের টাকা লুটপাট করেই তারা এ গুলো করেছে। খালেদার চরিত্র হলো জনগণের অর্থ সম্পদ লুটপাট, হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে নিজেদের আখের গোছানো।

শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন। যারা পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে চলে গিয়ে ছিলেন তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে তাদের নাগরিকত্ব দেয়, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়। যারা স্বীকৃত খুনি তাদের বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে জিয়া।

তিনি বলেন, একটি দেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে তাদের যোগ্যতা হলো তারা খুনি। জাতির পিতাসহ তার পরিবারের সব সদস্যকে খুন করতে পেরেছে এটাই হলো তাদের বড় যোগ্যতা। এর পর জেনারেল এরশাদও একই পথে হেঁটেছেন। বেগম খালেদা জিয়া এসে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। উনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ভোটারবিহীন ভোটের মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতা বানিয়েছেন। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী করে লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তাদের হাতে ও গাড়িতে তুলে দিয়েছেন।

দশম সংসদ নির্বাচনকে ভোটারবিহীন বলে বিএনপির সমালোচনাকে নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছিল আর জনগণের সমর্থন আছে বলেই সরকার ৪ বছর পূর্ণ করেছে।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায়। আর সেই নির্বাচন ঠেকাতে সহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নেয় বিএনপি-জামায়াত জোট। ভোটের আগে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত পাঁচ শতাধিক স্কুলে আগুন দেয়া হয়। ভোটের দিনও সহিংসতা হয় বেশ কিছু এলাকায়। বিরোধীদের হামলায় প্রাণ যায় একজন নির্বাচনী কর্মকর্তার। আবার বিভিন্ন এলাকায় ভোট দিতে যাওয়ার সময় হামলার শিকার হন ভোটাররা।

বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, তাদের বর্জনের মুখে সেই ভোটে পাঁচ শতাংশ মানুষও অংশ নেয়নি। আর যারা ভোটকেন্দ্রে যায়নি, তারা তাদের আন্দোলনে পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছেন। তবে নির্বাচন কমিশন যে সময় ৩৯.৬৬ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানায়।

দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগই সব সময় আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। সেই বিষয়টিও স্মরণ করে দেন দলটির সভাপতি।

খালেদা জিয়ার ছেলেদের অর্থ পাচারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগকে গালিগালাজ করে কোনো লাভ নেই। আমেরিকা ও সিঙ্গাপুর সরকার এসব বিষয় ভালো জানে।