খালেদার মামলা নিয়ে বিএনপিতে আতঙ্ক কেন?
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত ১৫টি মামলার কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে দুর্নীতির দুটি মামলার কার্যক্রম শেষের দিকে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায়ের জন্য যেকোনো দিন ধার্য হতে পারে। আর এই দুটি মামলা নিয়েই বিএনপিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দলটির নেতাদের অভিযোগ, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে অযোগ্য ঘোষণা করার জন্যই এই দুটি মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হবে। সেটি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই হবে। সেজন্যই তড়িঘড়ি করে মামলার কার্যক্রম শেষ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আরেকটি একতরফা সংসদ নির্বাচন করতে চাইছে।
ইদানিং বিএনপি নেতাদের কথাবার্তাতে বিষয়টি স্পষ্ট। যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার বিচার সরকার কিংবা আওয়ামী লীগ করছে না। এটি আদালতের বিষয়। বিএনপি নেতাদের উচিত হবে, আদালত যে রায় দিবেন, তার প্রতি সম্মান দেখানো।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলা সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘শেখ হাসিনা নিজে চান, আগামী নির্বাচনের আগেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সাজা হোক। সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে নিম্ন আদালত- শেখ হাসিনার কথায় সেভাবেই এগিয়ে চলেছে।’
তবে তিনি এও জানান, আদালতে খালেদা জিয়ার সাজা হলে তার বিরুদ্ধে আপিল করে জামিন নিয়ে তিনি আগামী নির্বাচনে লড়তে পারবেন।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ভাষ্যে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা অনেকগুলো থাকলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম ‘বিস্ময়কর’ গতিতে এগোনো হয়েছে। এ দুটি মামলার কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে।
এই দুটি ছাড়াও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরক ও নাশকতার অভিযোগে চারটি এবং মানহানি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ মিলে ১৫টি মামলা চলমান রয়েছে।
এর মধ্যে দুর্নীতির দুই মামলা নিয়েই বিএনপি নেতারা বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। এই দুই মামলায় নিম্ন আদালতে সাজা হলে আইনি লড়াইয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন খালেদা জিয়া, এমনও জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
গতকাল রোববার নয়াপল্টনে বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই আসুন, সবাই মিলে সরকারি এই অপচেষ্টা রুখে দাঁড়াই।’
তবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আনীত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আদালতে ন্যায়বিচার চেয়েছেন খালেদা জিয়া।
গত ৫ ডিসেম্বর এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে খালেদা জিয়া আদালতকে বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিশেষ করে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য প্রায়ই আমাকে জড়িয়ে জনসম্মুখে মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের তহবিল সংগ্রহ, বণ্টন এবং কোনো রকম ব্যাংকিং লেনদেনের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত ছিলাম না। কাজেই এর মাধ্যমে নিজের লাভবান হওয়া বা অন্য কাউকে লাভবান করার কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না।’
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি সরকার একজন বিচারপতির নেতৃত্বে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন প্রণয়ন করে। সাক্ষী হারুণ অর রশীদকে কমিশনের সেটআপে অন্তর্ভুক্ত না করায় পরে তিনি আমার বিরুদ্ধে মামলা করেন। আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার জন্য তাকে আবার কমিশনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সাক্ষী একজন অনুসন্ধানকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে কোনো দালিলিক প্রমাণ ছাড়া আমার ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে এরূপ মনগড়া সাক্ষ্য দিয়েছেন।’
খালেদা জিয়া বর্তমানে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অস্থায়ী জামিনে রয়েছেন। আগামী ১৯, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর এই দুটি মামলায় যুক্তিতর্কের দিন ধার্য রয়েছে।
রাজধানীর বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে মামলা দুটির বিচারকাজ চলছে।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
অন্যদিকে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। খালেদা জিয়া ছাড়া মামলার অপর আসামিরা হলেন- হারিছ চৌধুরী, জিয়াউল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম খান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন