খালেদার সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন চায় দুদক
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2018/10/khaleda-zia-20181023165835.jpg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন চেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী। সাজা বাড়ানোর বিষয়ে করা আবেদনের যুক্তিতে এই দাবি তোলেন দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
তবে বিচারিক আদালতের দেয়া ৫ বছরের সাজা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। পরে আসামিপক্ষের করা সময় আবেদনের বিষয়ে আদেশের জন্য আগামীকাল বুধবার দিন ঠিক করেন আদালত।
মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান, রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
দুদক ও রাষ্ট্র উভয়পক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী সময় চেয়ে আবেদন করলে আদালত সময় মঞ্জুর না করলে তারা আদালত থেকে বের হয়ে যান।
পরে আদালত দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে যুক্তি উপস্থাপন করতে বললে তারা যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। এর আগে মামলার আপিল শুনানির যুক্তিতর্কের জন্য সময় প্রার্থনা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। সে বিষয়ে আদেশের জন্য আগামীকাল বুধবার দিন ঠিক করেন আদালত।
শুনানি শেষ করার পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তিতর্কে দুদকের পক্ষ থেকে আমরা সাজা যাবজ্জীবন চেয়েছি। আইন অনুযায়ী বিচারিক আদালতের ৫ বছর সাজা দেয়া ঠিক হয়নি।
তিনি বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার করা আপিলসহ চারটি আবেদনের ওপর আজকেসহ ২৮ দিনের মতো শুনানি হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ কার্যদিবসে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অতিরিক্ত সাক্ষ্য দেয়ার জন্য একটা দরখাস্ত নিয়ে এসেছিল।
দরখাস্ত শুনে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্কের পরে আদেশ দেবেন বলে আদালত আবেদনটি নথিভুক্ত করে রাখেন। আজকে সকালে তাদের আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন আদালতে এসে বললেন, তাদের সেই দরখাস্তের বিষয়ে আদেশ দেয়ার জন্য। কেননা তারা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবেন। তখন আদালত বললেন, সেটা আপনাদের ব্যাপার। এ সময় তারা যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য সময় চান। আদালত সময় আবেদনের বিষয়ে নামঞ্জুর করলে তারা আদালত থেকে বের হয়ে যান।
অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালত যে সাজা দিয়েছেন তা সঠিকভাবেই দিয়েছেন। ওই সাজা যাতে বহাল থাকে আমি সেই মর্মে আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছি। যেহেতু এই রায়ের বিরুদ্ধে সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করেছে দুদক। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করিনি। সেজন্য সাজা বৃদ্ধির ব্যাপারে কোনো বক্তব্য রাখার সুযোগ আমার ছিল না।
তিনি বলেন, আমি আমার বক্তব্যে বলেছি, বিদেশ থেকে যে অর্থ এসেছে। সে অর্থটা ইয়াতিমদের জন্য এসেছে। সেখানে লেখা ছিল প্রাইমিনিস্টার অরফানেজ ট্রাস্ট। সেই অর্থটা পরবর্তী সময়ে দুইটা এতিমখানায় দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটা হলো বাগেরহাটে জিয়া ম্যামোরিয়াল ট্রাস্ট ও বগুড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে। কাজেই টাকা যে সরকারি টাকা এবং রাষ্ট্রের অর্থ, জনগণের অর্থ এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তারা নিজেরাই তদন্ত কর্মকর্তাকে সাজেশন দিয়েছে বগুড়ার কার্যক্রম ঠিকমতোই চলছে। কাজেই একই সোর্স থেকে যে টাকা এসেছে। সে টাকা দুই জায়গায় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তারা একটা জায়গার কথা স্বীকার করে অন্য জায়গায় দেয়ার কথা অস্বীকার করতে পারেন না।
‘আর এই ধরনের মামলায় যদি প্রসিকিউশন আসামিদের হেফাজতের বিষয়টি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আসামিদের দায়ীত্ব এটা প্রমাণ করা যে তারা আত্মসাৎ করেনি। যেহেতু টাকাটা প্রধানমন্ত্রীর অরফানেজ ফান্ড থেকে তোলা হয়েছে। এবং পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টকে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে টাকা উধাও হয়েছে। সুতরাং, এই আত্মসাতের সঙ্গে যারা যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেকেই অপরাধী। নিম্ন আদালত সঠিকভাবেই সাজা দিয়েছে। এই কারণে এ সাজা বহাল থাকে সেটি আমি প্রার্থনা করেছি’,- বলেন মাহবুবে আলম।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
রায় ঘোষণার ১১ দিন পর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রায়ের সার্টিফায়েড কপি বা অনুলিপি হাতে পান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ২০ ফেব্রুয়ারি তারা এ আবেদন করেন। আগামী ৩১ অক্টোবর আপিল নিষ্পত্তির জন্য সময় নির্ধারিত রয়েছে।
ওই রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন