খালেদা জিয়ার জন্য দৃশ্যমান কোনো বিক্ষোভ বিএনপি করতে পারেনি: ওবায়দুল কাদের

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তারা সব কিছুতে রাজনৈতিক গন্ধ পায়। এই শহরে দৃশ্যমান একটা বিক্ষোভ মিছিল খালেদা জিয়ার জন্য বিএনপি করেছে, এমন প্রমাণ আমাদের সামনে নেই।

মঙ্গলবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভায় এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

প্রধানমন্ত্রী ‘ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে চীন গেছেন’-বিএনপির এমন মন্তব্যের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে প্যারিস কনসোর্টিয়াম বৈঠক তাদের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বার বার ছুটে গেছেন, আমাদের কোনো অর্থমন্ত্রী প্যারিস কনসোর্টিয়াম বৈঠকে জাননি। বাজেটের আগেও যাননি।

শোকের মাসে কর্মসূচি পালনের আহবার জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শোকের মাস আগস্ট আবারও ফিরে আসছে। ১ আগস্ট থেকে আমাদের মাসব্যাপী কর্মসূচি রয়েছে। ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে এই মাসের কর্মসূচি পালনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তাদের অর্থমন্ত্রী বারবার প্যারিস গেছেন, আ.লীগের অর্থমন্ত্রী যাননি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে চীন গেছেন, বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে প্যারিস কনসোর্টিয়ামে বৈঠক তাদের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বারবার ছুটে গেছেন, আমাদের কোনো অর্থমন্ত্রী প্যারিস কনসোর্টিয়ামের বৈঠকে যাননি। বাজেটের আগেও যাননি।

মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যৌথসভার সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কারণে জামিন দেওয়া হচ্ছে না— বিএনপির এমন দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, কারণটা আইনগত রাজনৈতিক নয়। সবকিছুতে রাজনীতির গন্ধ খুঁজে পায়। আইনগত মোকাবিলা তারা খালেদা জিয়ার জন্য করেনি। মাসের পর মাস, এমনকি বছরে কেটে গেছে তারা খালেদা জিয়াকে আদালতে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত রেখেছে, জামিনও চায়নি। আইনি মোকাবিলায় ব্যর্থ। তারা শহরে একটি দৃশ্যমান বিক্ষোভ মিছিল খালেদা জিয়ার জন্য করেছে, এমন প্রমাণ আমরা পাইনি।

তিনি বলেন, বিএনপি নিজেরা আন্দোলনে ব্যর্থ। হেরে যাওয়ার ভয়ে তারা নির্বাচনে যায়নি। তারা ২০১৮ সালেও কোটাবিরোধী আন্দোলনে ভর করেছিল। এখন আবার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করে সরকার হঠাৎ দূর অভিসন্ধি বাস্তবায়ন করতে চায়। শুভ তৎপরতা সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

আগস্ট মাসে কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি পালন করার জন্য নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শোকের মাস আগস্টে আবার ফিরে এসেছি। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১ আগস্ট থেকে আমরা মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবো। নেতাকর্মীদের কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি পালনের আহ্বান করছি।’

কোটাসহ দুই আন্দোলন সরকার পর্যবেক্ষণ করছে

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধিতা এবং পেনশনে ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন সরকার পর্যবেক্ষণ করছে। সময়মত সব সমাধান হয়ে যাবে। দুটি কর্মসূচিকে আমরা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।

মঙ্গলবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভায় এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

এ দুই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ কোন পক্ষে–সেই প্রশ্নের উত্তরে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকার সরকারের পক্ষে, আওয়ামী লীগও সরকারের পক্ষে। যতটুকু জানি, কোটাবিরোধী যে আন্দোলন শিক্ষার্থীরা করছে, তাদের আজকে নির্ধারত কর্মসূচি নেই, সেজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। এমনও শুনেছি, তারা উচ্চ আদালতে যে মামলা, তাদের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করেছে। তারা আদালতে যথাসময়ে হাজির হবেন। এটা একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত, সেজন্য ধন্যবাদ জানাই।

খালেদা জিয়ার জন্য এই শহরে দৃশ্যমান কোনো বিক্ষোভ তারা করতে পেরেছে, প্রশ্ন কাদেরের

সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দেওয়ার পর থেকেই আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা।

তাদের দাবি, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সমস্ত গ্রেডে ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যাতীত) বাদ দিতে হবে। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। আর ‘দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক’ আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

রোববার ও সোমবার ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করে তারা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা। তাদের অবরোধের কারণে শহরজুড়ে ব্যাপক যানজটে নাকাল হতে হয় নাগরিকদের।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে এই আন্দোলন সমন্বয়ের জন্য ৬৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে আন্দোলনকারীরা। দাবি পূরণ না হলে সারাদেশে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও তারা হুঁশিয়ার করেছে।

কোটা নিয়ে সরকারের অবস্থান জানিয়ে কাদের বলেন, আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী পরিপত্র জারি করে কোটামুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এতদিন সরকারি কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ৭ জন একটা মামলা করেন। হাইকোর্ট একটা রায় দেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ আপিল বিভাগে নিয়ম অনুযায়ী আপিল হয়েছে। ফুল কোর্টে আমারা আশা করছি শিগগিরই শুনানি হবে।

তিনি বলেন, কোটার বিরুদ্ধে নয়, কোটা ‘সংস্কারের’ দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। যারা আন্দোলন করছেন, আমাদের বিভিন্ন মিডিয়া কোটাবিরোধী আন্দোলন বলছে, তবে তারা যেটা বলছে কোটা সংস্কার চায়।

এদিকে গত মার্চ মাসে সর্বজনীন পেনশনের আগের চারটি স্কিমের সঙ্গে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামের একটি প্যাকেজ চালু করে অর্থমন্ত্রণালয়। এই স্কিমকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা।

তাদের দাবি, চলতি বছরের ১ জুলাই এবং এর পরে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা ওই স্কিমে যুক্ত হলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। স্কিম বাতিলের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে আছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে ওবায়দুল কাদের কবে বসবেন জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসব আমরা কি বলেছি? আমরা তাদের আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করছি। সময়মত এর সমাধান হয়ে যাবে, এটাই আমরা আশা করি।