খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ঘিরে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় শুনতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতের পথে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ একপর্যায়ে টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে এবং ঘটনাস্থল থেকে অনেককে আটক করতে দেখা গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাঁর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে বের হন বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা শামসুদ্দীন দিদার এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে গুলশান-১, বনানী, তেজগাঁও হয়ে মগবাজার এলাকা আসে। এ রাস্তায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ছিল। কিন্তু তেজগাঁও এলাকা অতিক্রম করার সময় রাস্তার পাশ থেকে শত শত নেতাকর্মী সেখানে যুক্ত হন। এ সময় রাস্তার পাশেও অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নেতাকর্মীদের আটকানো যায়নি। গাড়িবহর সাতরাস্তা মোড় পেরিয়ে এফডিসি মোড়ে পৌঁছালে প্রথমে কিছু নেতাকর্মী গাড়িবহর ঘিরে ধরে। পরে মগবাজার এলাকায় গেলে আরো বেশি সংখ্যাক নেতাকর্মী বহরে যোগ দেয়। নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সেখানে যুক্ত হন। তাঁরা খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান দিয়ে এগোতে থাকেন। সেখানে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-খান সোহেলকে দেখা গেছে। বিএনপির অভিযোগ ছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁকে আটক করেছে। যদিও ডিএমপির পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়।
নেতাকর্মীদের ভিড়ের কারণে খালেদা জিয়ার বহরের গড়ি কমে যায়। ধীরে ধীরে তা সামনে এগোতে থাকে। একপর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গাড়ি থেকে খালেদা জিয়ার গাড়ি একটু দূরে সরে যায়। কিন্তু মগবাজার হলি ফ্যামিলির সামনে দিয়ে গাড়িবহর যাওয়ার সময় পুলিশ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়।
একপর্যায়ে নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তখন পুলিশও পাল্টা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে নেতাকর্মীদের ছাত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশকে কয়েকজনকে আটক করতে দেখা গেছে। এর মধ্যেই খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
এর আগে সকাল পৌনে ৯টার দিকে এ মামলার অপর দুই আসামি ব্যবসায়ী সলিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদকে আদালতে আনা হয়। এ মামলায় মোট আসামি ছয়জন। তার মধ্যে তিনজন পলাতক।
এ তিনজন হলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
সূত্র জানিয়েছে, সকাল থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসার ভেতরে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাঁর আইনজীবী ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন ভেতরে প্রবেশ করেন। এর পর সেখানে যান খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার, তাঁর স্ত্রী, মরহুম সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ কয়েকজন আত্মীয়স্বজন।
এদিকে, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। মোতায়েন রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন