‘খালেদা জিয়া ভোট করতে পারবেন না, এ রায় মানি না’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হাইকোর্ট খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে যে রায় দিয়েছেন, তা আমরা মানি না। জনগণও মেনে নেবে না।

মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপাসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদেরর তিনি একথা বলেন।

এর আগে সকালে দুর্নীতির মামলায় প্রাপ্ত সাজা (কনভিকশন অ্যান্ড সেন্টেন্স) স্থগিত চেয়ে বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানসহ পাঁচজনের করা আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, বিচারিক আদালতে দুই বছরের বেশি দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি নির্বাচনের অংশ নিতে পারবেন না। তবে আপিল বিভাগে দণ্ড স্থগিত এবং জামিন হলেই তিনি কেবল নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।

এই পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিল বিভাগ ওই রায় বাতিল বা স্থগিত করে তাকে জামিন দেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।’

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও সংবাদ সম্মেলন করে একই কথা বলেন।

বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. মশিউর রহমান ও মো. আব্দুল ওহাবের পক্ষে দণ্ড ও সাজা বাতিলের এ আবেদন করা হয়েছিল। আবেদন খারিজ হওয়ায় এই পাঁচ নেতাও নির্বাচনে অযোগ্য হলেন।

হাইকোর্টের রায়ের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই মুহূর্তে এ ধরনের রায় জনগণের মাঝে নানা প্রশ্নের উদ্রেগ করবে। জনগণ এই রায় মেনে নেবে না।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ ঠেকাতে দেয়া হাইকোর্টের রায় অগ্রহণযোগ্য। এতে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে প্রতিহত করার অংশ হিসেবেই সরকারের ইচ্ছায় হাইকোর্ট এ রায় দিয়েছেন বলেও দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

বিকল্প প্রার্থী রেখে গতকাল সোমবার কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জন্য ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে মনোনয়ন চিঠি ইস্যু করেছে বিএনপি।

বগুড়া-৬ (সদর উপজেলা ও পৌরসভা) আসনে কোনো কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলে বিকল্প হিসেবে পৌরসভার মেয়র একেএম মাহবুবর রহমান ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাকেও মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে।

বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর) আসনেও কোনো কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলে তার বিকল্প হিসেবে গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটন এবং গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিনুর ইসলাম তালুকদারকে মনোনয়ন দিয়ে রাখা হয়েছে।

একইভাবে ফেনী-১ (পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলা) আসনেও বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলে এখানে ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে মনোনয়ন দেয়া হবে বলে জানা গেছে।

যদিও এখন পর্যন্ত তাকে এই আসনে দলীয় মনোনয়নের চিঠি ইস্যু করা হয়নি। তবে সোমবার প্রথম দিনে আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে ফেনী-৩ (সোনাগাজী ও দাগনভূঁইয়া উপজেলা) আসনের মনোনয়ন চিঠি ইস্যু করা হয়।