খালেদা জিয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চায় দুদক
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2018/01/khaleda-zia-bnp-20171105081712.jpg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছে দুদক প্রসিকিউশন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুদক প্রসিকিউশন আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে। এ মামলায় আসামিরা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। এতে আসামিরা সাজা পাওয়ার যোগ্য। রায় দুদকের পক্ষে এলে তা প্রসিকিউশনের সফলতা প্রমাণ হবে।
আর যদি রায় দুদকের পক্ষে না আসে তবে পরবর্তী সময়ে তা দেখে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে বুধবার রাতে তিনি বলেন, সিআরপিসি’র ৪২৬-এর সাবসেকশন-২ এর বিধান অনুসারে, যদি কোনো বিচারিক আদালত ১ বছর পর্যন্ত সাজা দেন, তাহলে ওই আদালত আসামিকে আপিলের শর্তে জামিন দিতে পারবেন। আর যদি সাজা ১ বছরের বেশি হয়, তাহলে ওই আসামিকে বিচারিক আদালত জামিন দিতে পারবেন না।
অপরদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে ৫ আইনজীবী নির্দোষ দাবি করে তার খালাস চেয়েছেন। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। আজ সকালে গুলশানের বাসভবন থেকে বিশেষ আদালতে যাবেন।
আদালতে যাওয়ার পথে বিশেষ নিরাপত্তা দেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রায়কে আইনি ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। দলের হাইকমান্ড ঐক্যবদ্ধ থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতারাও জানিয়ে দিয়েছেন রায়ের দিন বিএনপির কোনো বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। বিএনপির নৈরাজ্য সহ্য করবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও রয়েছে প্রস্তুত।
৩০ জানুয়ারি ঢাকায় পুলিশের ওপর হামলা ও প্রিজন ভ্যান থেকে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার পর উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এরপর থেকে দেশব্যাপী ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে যানবাহন ও যাত্রীদের দেহ তল্লাশি চলছে। বিএনপি অভিযোগ করেছে, গত কয়েক দিনেই তাদের শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সারা দেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
৮ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। রায় সামনে রেখে দুই দলের প্রস্তুতি দেখে সাধারণ নাগরিকরা আতঙ্কিত। তারা বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন। এ পরিস্থিতিতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুদক প্রসিকিউশন আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে। এ মামলায় আসামিরা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। এতে আসামিরা সাজা পাওয়ার যোগ্য। রায় দুদকের পক্ষে এলে তা প্রসিকিউশনের সফলতা প্রমাণ হবে। আর যদি রায় দুদকের পক্ষে না আসে তবে পরবর্তী সময়ে তা দেখে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিআরপিসি’র ৪২৬-এর সাবসেকশন-২ এর বিধান অনুসারে, যদি কোনো বিচারিক আদালত ১ বছর পর্যন্ত সাজা দেন, তাহলে ওই আদালত আসামিকে আপিলের শর্তে জামিন দিতে পারবেন। আর যদি সাজা ১ বছরের বেশি হয়, তাহলে ওই আসামিকে বিচারিক আদালত জামিন দিতে পারবেন না।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, এ মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়ার সুযোগই নেই। এরপরও আদালত যদি এ মামলায় সাজার রায় ঘোষণা করেন, তবে আদালত যে নিরপেক্ষ নন তা প্রমাণ হবে। আর সরকার নিয়ন্ত্রিত যে বিচারক খালেদা জিয়াকে সাজা দেবেন, সে বিচারক তার জামিন দেবেন- তা আশা করা ঠিক হবে না।
তিনি বলেন, আইনের বিধান অনুসারে ১ বছরের কম সাজা হলে সংশ্লিষ্ট আদালতেই আপিলের শর্তে আসামিকে জামিন দিতে পারেন। তবে বিচারিক আদালত যদি জেলা জজ পদমর্যাদার হন, তাহলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে সে ক্ষেত্রে ৫ বছর পর্যন্ত সাজা হলেও বিচারিক আদালত তাৎক্ষণিক আপিলের শর্তে আসামিকে জামিন দিতে পারবেন। আর উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করতে হলে রায়ের সার্টিফাইট কপি সংগ্রহ করে আবেদন করতে হবে।
মামলা দায়ের, অনুসন্ধান ও চার্জশিট : ২০০৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রথমে অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয় দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. নূর আহাম্মদকে। তার অনুসন্ধানে খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। পরে অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য দুদকের তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক হারুন অর রশীদকে নিয়োগ দেয়া হয়।
অধিকতর অনুসন্ধানে খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এতে ওই বছরের ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা মডেল থানায় খালেদা জিয়াসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন হারুন অর রশীদ। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নামীয় ২ কোটি টাকা সুদসহ ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আÍসাৎ করা বা আÍসাতে সহযোগিতার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়।
তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ ৬ আসামির বিরুদ্ধে মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মমিনুর রহমান, কাজী সলিমুল হক ওরফে কাজী কামাল, শরফুদ্দিন আহমেদ ও ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী। চার্জশিটে মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ও সৈয়দ আহমেদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে চার্জশিটভুক্ত আসামি করা হয়। এরপর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ এ মামলায় চার্জ গঠনের মাধ্যমে আসামিদের বিচার শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষের নেয়া ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে আদালতের ২৩৬ কার্যদিবস সময় লেগেছে। আর সব আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য উপস্থাপনে আদালতের ২৮ কার্যদিবস সময় পার হয়েছে।
গত ১৯ ডিসেম্বর দুদক প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক শেষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। উভয়পক্ষের (দুদক ও আসামিপক্ষ) যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে আদালতের ১৬ কার্যদিবস সময় লেগেছে।
চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণার জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখ ধার্য করেন। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিচারের রায় বাংলাদেশে এটাই প্রথম। মামলায় খালেদা জিয়া অস্থায়ী জামিনে ও অপর দুই আসামি কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ বাকি তিন আসামি পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি রয়েছে।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন