পটুয়াখালীর কলাপাড়ার
খুদে শিক্ষার্থী ফাতিমার কাধে সংসারের বড় দায়িত্ব; খিলি পান বিক্রিতেই চলে সংসার
অন্য সব শিশুর মত স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার তীব্র ইচ্ছা থাকলেও দারিদ্রতাই যেন পথের কাঁটা। অভাবের সংসারে জন্ম নিয়ে শিক্ষালাভের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে পরিবারের গুরু দায়িত্ব।
দুই বছরের ছোট বোনের খাবার আর বাবার চিকিৎসা খরচ যোগাতে তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি রোজগার করতে হয় তৃতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী ফাতিমাকে। এ যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায় ৯ বছর বয়সী খুদে শিক্ষার্থীর বাস্তব জীবনের গল্প।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউপির মস্তফাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর শিশু শিক্ষার্থী ছোট্র ফাতিমা (রোল নং ১৮)। ওই গ্রামেরই বাসীন্দা বৃদ্ধ ফজলু গাজীর কন্যা শিশুটি। দরিদ্র কৃষক ফজলু গাজী গত দুই বছর ধরে প্যারালাইসিস আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না তিনি।
একটি হাত সম্পূর্ণ অবশ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দুই পা দিয়েও ঠিক ভাবে পথ চলতে কষ্ট হয় তার। ফলে সংসারের অভাব ঘোচাতে বাবার পাশে দাঁড়িয়েছে ফাতিমা। ছোট শরীর নিয়ে ভাড়ি কাজ করতে না পাড়ায় বাধ্য হয়ে হাতে তুলে নিয়েছে খিলি পান বিক্রির থালা। এখন হাটে ঘুরে খিলি পান বিক্রি করেন ফাতিমা।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে কলাপাড়া পৌর শহরে পানের থালা হাতে ভ্রামমান দোকানীদের কাছে ৫ টাকার খিলি বিক্রি করার সময় দ্যাখা মেলে তার । জানান, সকাল থেকে ঘুরে ১ শত ৩৫ টাকার খিলি বিক্রি হয়েছে তার। সংসারে অভাবের তারনায় স্বল্পপুজির ব্যবসা করছেন তিনি। এর থেকে যা রোজগার হবে তাই দিয়ে তরি—তরকারী (সবজী) কেনার পাশাপাশি ছোট বোনের জন্য মজার খাবার কিনে বাড়ি ফিরবে ফাতিমা। আর পাশেই একটি চায়ের দোকানে বাজারের থলে হাতে বসে আছেন তার বৃদ্ধ বাবা।
এই শিশুটি জানায়, সপ্তাহে বিভিন্ন হাটে ঘুরে ঘুরে পান বিক্রি করে অসুস্থ বাবাকে আর্থিক সাহায্য করা এখন তার দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। কিন্তু হাটের দিন ছাড়া স্কুলেও যান তিনি। পান বিক্রিতে কষ্ট হয় কিনা জানতে চাইলে মিষ্টি হাসি দিয়ে ফাতিমা জানান, তার এক ভাই অনেক আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেছেন। তাই এখন তিনিই সংসারে বাবার ভরসা। ফাতিমার বাবা জানান, তিনি অসুস্থ হওয়ায় বিকল্প কোন পথ না পেয়ে মেয়েকে হাতে পানের থালা তুলে দিয়েছেন। মেয়ে যাতে হাটের ভিড়ে হারিয়ে না যায় তাই চোখে চোখে রেখে পাহারা দিচ্ছেন। তার হাত স্বাভাবিক থাকলে মেয়েকে কষ্ট দিতেন না বলে দুচোখ ভিজিয়ে কান্না করেন তিনি।
মস্তফাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা কুলসুম জানান, এই শিক্ষার্থীর পরিবার খুবই একটি অসহায় পরিবার। তবে সপ্তাহে কয়েকদিন স্কুলে আসে ফাতিমা। তিনি বলেন, মেয়েটি মেধাবী হলেও অর্থাভাবে পায়ে জুতা পর্যন্ত পরতে পারে না। ওর বাবা মা বৃদ্ধ। কিন্তু মেয়েটির লেখাপড়ার জন্য যথেষ্ট ইচ্ছা আছে।
এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ওর কথা শুনে খুব খারাপ লাগছে। আমি খোঁজ নিচ্ছি। যতটুকু সম্ভব শিশুটির পাশে থাকার চেষ্টা করবো।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন