খুমেক হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে চাঞ্চল্য
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্প্রতি সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি ও পরবর্তীতে তা প্রত্যাহারের ঘটনায় এক নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, নার্স ও তথাকথিত দালালচক্র প্রথম আদেশে খুশিতে ফুরফুরে মেজাজে কাজ করলেও, আদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণার পর সেই একই মুখগুলোতে দেখা গেছে গভীর উদ্বেগ আর চিন্তার ভাঁজ। কারণ সাংবাদিকদের প্রবেশ বন্ধ থাকলে যেভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির পর্দা নেমেছিল, তা আবার খুলে গেছে জনদৃষ্টির সামনে।
গত ৯ অক্টোবর হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী মো. আইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়— পরিচালকের লিখিত অনুমতি ব্যতীত কোনো মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হাসপাতালের ইনডোর বা আউটডোরে ছবি তুলতে বা সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন না।
ওই আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, সাংবাদিকদের আনাগোনায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে এবং রোগী ও চিকিৎসক উভয়ের হয়রানি ঘটছে। একটি সরকারি হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে সাংবাদিকদের ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণার এমন সিদ্ধান্তে সাংবাদিক সমাজ ও নাগরিক মহল হতভম্ব হয়ে পড়ে।
পরদিনই খুলনা টেলিভিশন রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা জামালের পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার হাসপাতাল পরিচালকের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
নোটিশে উল্লেখ করা হয় আপনার আদেশ সংবিধান, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নাগরিকের তথ্য জানার অধিকার লঙ্ঘন করছে। এটি স্বেচ্ছাচারী, অবৈধ এবং জনস্বার্থবিরোধী। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদেশ প্রত্যাহার করুন, অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মুখোমুখি হবেন।
এরপর খুলনা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ১২ অক্টোবর এক জরুরি সভা হয় হুমায়ূন কবির বালু মিলনায়তনে, যেখানে সাংবাদিক নেতারা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। সেখানে বক্তারা বলেন সরকারি হাসপাতালের পরিচালক হয়ে কেউ গণমাধ্যমকে ইথিক্স শেখাতে পারেন না। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি সংবিধান লঙ্ঘনের সামিল।
সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক, সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুল, সাংবাদিক মোস্তফা সরোয়ার, মিজানুর রহমান মিলটন, হাসান আহমেদ মোল্লা, আশরাফুল ইসলাম নূরসহ খুলনার বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পরিচালক কর্তৃক প্রথম আদেশ জারি হওয়ার পর হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, নার্স ও তথাকথিত দালালচক্র “ফুরফুরে মেজাজে” কাজ করতে থাকে।
তারা মনে করেছিল সাংবাদিকদের প্রবেশ বন্ধ থাকলে রোগী হয়রানি, কমিশন বাণিজ্য ও নানা অনিয়ম আর প্রকাশ্যে আসবে না। কিন্তু সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে আদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা আসতেই সেই একই মুখগুলোতে দেখা যায় উদ্বেগ ও আতঙ্কের ছাপ।
চরম সমালোচনা, লিগ্যাল নোটিশ ও সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের মুখে ১৩ অক্টোবর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে আগের আদেশ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেয়।
নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়— সাংবাদিকরা ইনডোর ও আউটডোরে কর্তৃপক্ষ বা কর্তব্যরত চিকিৎসককে অবহিত করে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত না হয় এবং হাসপাতালের শৃঙ্খলা বজায় থাকে, সে বিষয়ে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিক সমাজের মধ্যে বিদ্যমান সহানুভূতিশীল সম্পর্ক ভবিষ্যতেও অটুট থাকবে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে তা প্রত্যাহার পর্যন্ত এই পুরো ঘটনাপ্রবাহ খুলনায় গণমাধ্যমের ঐক্য, সাংবাদিকদের পেশাগত মর্যাদা ও জনগণের জানার অধিকার রক্ষার এক বাস্তব উদাহরণ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
অন্যদিকে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের নামে তথ্যপ্রবাহে হস্তক্ষেপের যে প্রবণতা তৈরি হচ্ছিল, সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তা প্রতিহত করেছে যা গণতন্ত্র ও মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতি আস্থার প্রতীক বলেই মনে করছেন সচেতন মহল। অসাধু কর্মকর্তা, নার্স ও দালালচক্রের ছায়ায় ঢাকা হাসপাতালটি আজ নতুনভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু কারণ, সত্যকে চিরকাল ঢেকে রাখা যায় না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন




