খুলনায় অস্ত্র-ইয়াবাসহ বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ আটক-৪

খুলনায় দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র ও মাদকসহ নগরের ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও যুবদলের নেতাসহ চারজনকে আটক করেছে যৌথবাহিনী।
শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে নগরীর টুটপাড়া তালতলা মেইন রোডে চালানো দীর্ঘ অভিযানে এসব উদ্ধার হয়।

এই ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা দিয়েছে আলোড়ন।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন খুলনার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি মো. সালাউদ্দিন মোল্লা বুলবুল এবং একই ওয়ার্ডের যুবদল সভাপতি (সাবেক নগর যুবদল সদস্য) তৌহিদুর রহমান তৌহিদ, তার ছেলে শেখ মো. তাসফিকুর রহমান এবং সাতক্ষীরা জেলার আরিফ মোল্লা।

*অস্ত্র, ইয়াবা ও বিস্ফোরক দ্রব্যসহ গ্রেপ্তার*

যৌথবাহিনীর একাধিক সূত্র ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, রাত দেড়টা থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত চলে টানা অভিযান। অভিযানে একটি নাইন এমএম পিস্তল, একটি ওয়ান শুটার গান, একটি দেশি পিস্তল, সাত রাউন্ড গুলি, তিনটি রামদা, দুটি চাইনিজ কুড়াল, ১০৫ পিস ইয়াবা, ১৭০ গ্রাম গানপাউডার, তিনটি চা-পাতি (বোমা তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় বলে ধারণা), ছয়টি মোবাইল ফোন ও তিনটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে।

*রাজনীতি নাকি অপরাধের আবরণ?*

খুলনা সদর থানার ওসি হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, “আটকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”

তবে রাজনৈতিক পরিচয় ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে—এটা কি কেবলই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সফল অভিযান, নাকি এর পেছনে রয়েছে আরও গভীর রাজনৈতিক বা অপরাধমূলক চক্র?

স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আটক মো. সালাউদ্দিন বুলবুল বর্তমান ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি। অন্যদিকে শেখ তৌহিদুর রহমান যুবদলের সাবেক সদস্য হলেও বর্তমানে কমিটি বিলুপ্ত থাকায় তিনি সংগঠনগতভাবে সক্রিয় নন বলে দাবি করেছেন বিএনপির সদর থানা সভাপতি কেএম হুমায়ুন কবির।

*রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, না বাস্তব অপরাধ?*

রাজনীতির মাঠে এ ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপা আলোচনা। বিএনপি বলছে, এটি হয়তো তাদের দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। অন্যদিকে, সাধারণ মানুষ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি সত্যিই অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ দলীয় নেতারা জড়িত থাকেন, তবে সেটি দলীয় পরিচয়ের উর্ধ্বে গিয়ে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্যই হুমকি।

*নির্বাচনের প্রাক্কালে বার্তা?*

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এমন ঘটনায় রাজনৈতিক মেরুকরণ বাড়তে পারে। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারিতে রাখতেই কি এমন অভিযান, নাকি এটি সত্যিকারের অপরাধমূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ?

একদিকে রাজনীতিক পরিচয়, অন্যদিকে ভয়াবহ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার—এই দুটি বাস্তবতা খুলনার এই ঘটনা নিয়ে তৈরি করেছে দ্ব্যর্থতা। তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটনই হতে পারে এই ঘটনার প্রকৃত মূল্যায়নের একমাত্র পথ।