খুলনার কয়রায় গেওয়া পোকার উপদ্রবে অতিষ্ঠ জনজীবন

সুন্দরবন বেষ্টিত উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার কয়রা উপজেলার বি‌ভিন্ন এলাকার গেওয়া গা‌ছে ব‌্যাপক পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এই পোকা প্রতি‌দিন শত শত গেওয়া গা‌ছের পাতা খে‌য়ে ফেল‌ছে। রাস্তা দি‌য়ে চলাচ‌লের সময় গাছের পোকা মানু‌ষের শরী‌রে লে‌গে যা‌চ্ছে।

এছাড়া বা‌ড়ির আঙ্গিনায় এমনকি ঘরের ম‌ধ্যেও ঢুক‌ছে শত শত পোকা। আক্রমণ থে‌কে রক্ষা পে‌তে গেওয়া গাছ কেটে ফেলার হি‌ড়িক পড়েছে। পোকার উৎপা‌তে এক‌দি‌কে ক্ষ‌তিগ্রস্ত হ‌চ্ছে প‌রিবেশবান্ধব গাছ, অন্যদিকে অতিষ্ঠ হ‌য়ে উঠে‌ছে জনজীবন।

স‌রেজ‌মিন উপ‌জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, শাকবা‌ড়িয়া খা‌লের দুই পাড় দি‌য়ে ক‌য়েক হাজার গেওয়া গাছ র‌য়েছে। প্রায় সব গেওয়া গা‌ছে পোকার আক্রমণ ঘটেছে। কিছু কিছু গা‌ছের সম্পূর্ণ পাতা খে‌য়ে ফে‌লে‌ছে। পাতা না থাকায় গাছ মরে যা‌চ্ছে। হাজার হাজার পোকা গা‌ছে ঝু‌লে থাকায় দুই পা‌ড়ের রাস্তা দি‌য়ে মানুষ চলাচলের সময় শরী‌রে লে‌গে যা‌চ্ছে।

পোকার ভ‌য়ে অনেকে বাইরে বের হচ্ছে না। রাস্তার পা‌শে কিংবা বা‌ড়ির আঙ্গিনা‌র গেওয়া গাছ নি‌র্বিকা‌রে কেটে ফেল‌ছে। কেউ কেউ আবার আগুন জ্বা‌লি‌য়ে পোকা ও গাছ পু‌ড়ি‌য়ে দি‌চ্ছি। এক একটা গা‌ছে শত শত জো‌ঁকের মতো দেখ‌তে কালো রঙের চিকন পোকা ঝুল‌ছে।

এদিকে পোকায় আক্রা‌ন্তের খবর পেয়ে কয়রা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্ত‌রের কয়েকটি টিম গতকাল বি‌ভিন্ন এলাকা প‌রিদর্শন ক‌রে‌ছে।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের মো: দিদারুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, হঠাৎ করে এক ধরনের কালো রঙের নরম পোকা গাছে লাগে। একদিনের মধ্যেই পোকায় গাছের পাতাগুলো খেয়ে সাদা করে ফেলছে এবং গাছগুলো শুকিয়ে মারা যাচ্ছে।

তারা আরও জানান, প্রতি‌দিন পোকার আকৃ‌তি বড় হ‌চ্ছে ও সংখ্যা ক‌য়েকগুণ বৃ‌দ্ধি পা‌চ্ছে। তা‌দের ঘরের ম‌ধ্যেও শত শত পোকা ঢুক‌ছে। খুব সমস্যায় র‌য়ে‌ছেন তারা। বি‌শেষ ক‌রে শিশু‌দের নি‌য়ে আতং‌কে রয়েছে।

কয়রা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, এটি সেমিলুপার জাতীয় পোকা। বিষয়টি কৃষি বিভাগ অবগত হওয়ার প‌র তাৎক্ষ‌ণিক উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসারের নেতৃত্বে একাধিক টিম বি‌ভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছে এবং স্থানীয় জনগণকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে। এটি সামাজিক বনায়নের আওতাধীন গেওয়া বনজ বৃক্ষে দেখা যাচ্ছে। এটি ফসলের জন্য ক্ষতিকর নয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর স্থানীয় জনগণকে সচেতন করে স্প্রে করার ব্যবস্থা নিচ্ছে।

ত‌বে কয়রা উপ‌জেলার সামা‌জিক বনায়‌নের দা‌য়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রবীর দত্ত ব‌লেন, পাইকগাছা ও কয়রা দুই উপ‌জেলার দা‌য়িত্ব পালন কর‌ছি। আমা‌দের জনবল নেই। আগামীকাল স‌রেজ‌মিনে দে‌খে তারপ‌র করণীয় বল‌তে পার‌ব।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। কৃ‌ষি দপ্তর‌কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।