খুলনার খালিশপুর থানার এসআই’র বিরুদ্ধে জোরপূর্বক টাকা আদায় ও মামলার হুমকির অভিযোগ

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) খালিশপুর থানার এসআই পলাশের বিরুদ্ধে ঘের ব্যবসায়ীর কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় এবং মামলার ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি একটি ওয়ারেন্টভুক্ত মামলায় অভিযুক্ত সারোয়ারের ছেলে লিটনকে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন এসআই পলাশ। তবে পরবর্তীতে আবারও তাকে আটক করে মাদক মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, একইসাথে তিনি ঘের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসানকে ফোনে হুমকি দিয়ে বলেন, তোমার বিরুদ্ধেও মাদক মামলা দেওয়া হবে।

এই ফোনালাপের একটি কল রেকর্ড এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে, যেখানে স্পষ্টভাবে শোনা যায় মেহেদী হাসান বারবার বলেন— স্যার, আমার নামে তো কোনো মাদক মামলা নেই… তবুও এসআই পলাশ কথার মাঝেই ফোন কেটে দেন।

মেহেদী হাসান দাবি করেন, আমি একজন ঘের ব্যবসায়ী। আমার বিরুদ্ধে কোনো মাদক মামলা নেই। সম্প্রতি আমার বাড়িতে দুর্বৃত্তরা ৯ রাউন্ড গুলি চালায়। সেই ঘটনার ন্যায়বিচার চাইতে গিয়েই এখন পুলিশ আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।

গ্রেপ্তার লিটনের স্ত্রী রেহেনা বেগম বলেন, আমার স্বামী বাচ্চাদের জন্য খাবার কিনতে গিয়েছিলো। সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে আমি থানায় গেলে ওরা বলে, সে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, এবার তাকে ছাড়বে না। তার কাছে ২০ হাজার টাকা ছিলো, সেই টাকা এসআই পলাশের সঙ্গে সঙ্গেই নিয়ে নেয়।

মোটরসাইকেল আর মোবাইল আনতে গেলে বলে, চাবি নিতে হলে আরও ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। এজন্য আমাকে রাত ১২টা পর্যন্ত থানার সামনে বসিয়ে রাখে। সারা রাত টাকার জন্য ঘুরেছি—আমার সঙ্গে কুকুরের মতো ব্যবহার করেছে। আমি এসআই পলাশের বিরুদ্ধে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাবো।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, এসআই পলাশ হুমকি দিয়েছে এই টাকা নেওয়ার কথা যদি কারও কাছে বলি, তাহলে লিটনকে পুরনো পেন্ডিং মামলায় আসামি বানিয়ে জেলে পাঠাবে।

স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, মেহেদী হাসানকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে এবং এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরি।

স্থানীয়রা বলেন, যে পুলিশ জনগণের নিরাপত্তা দেবে, তারা যদি অন্যায়ভাবে কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?

এ বিষয়ে খালিশপুর থানার এসআই পলাশের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর আতাহার আলী বলেন, একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানা আছে। তবে কাউকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে আমার জানা নেই।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেলে বিষয়টি তদন্ত করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট সদস্যের চাকরি পর্যন্ত চলে যেতে পারে। পুলিশ বাহিনীতে শৃঙ্খলাভঙ্গের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, কোনো অনিয়ম বা অপব্যবহার বরদাস্ত করা হবে না।

নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার কর্মীরা ঘটনাটির বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত ও অভিযুক্ত এসআই পলাশের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।