গণহত্যার স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঘটা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি নিয়ে বাংলাদেশে শুক্রবার শুরু হচ্ছে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন।

দু’দিনব্যাপী এই সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশের মোট ২৬ জন গবেষক, বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক যোগ দেবেন বলে কথা রয়েছে।

কিন্তু স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও গণহত্যার বিষয়টি নিয়ে কেন বাংলাদেশীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট-এর সভাপতি ড. মুনতাসীর মামুন বলছেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের বিষয়টিকে যতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে গণহত্যা এবং মানুষের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে ততটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

স্বাধীনতার পর আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় এই বিষয় নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য হয়নি, বলছেন তিনি, কারণ সে সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়ে কোন দেশ কী ভূমিকা পালন করেছিল, তাহলে সেই বিষয়টা সামনে চলে আসতো।

ফলে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষ যে আত্মত্যাগ করেছিল সেই প্রসঙ্গটিও আড়ালে পড়ে যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ড. মামুন বলছেন, ইতিহাসের এই ভারসাম্যহীনতা দূর করার স্বার্থেই গণহত্যার বিষয়টির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রয়োজন।

ঐসব গণহত্যার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচারের স্বার্থেও এই স্বীকৃতির প্রয়োজন রয়েছে।

গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী কাজল আব্দুল্লাহ বলছিলেন, ১৯৭১ সালের গণহত্যা ও নির্যাতনের বিষয়টি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার প্রয়োজন রয়েছে সচেতনতা তৈরির জন্য আর এক ধরনের চাপ বজায় রাখার জন্য।

“আপনি দেখবেন স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য এবং বিচারের দাবি না তোলার ফলে বিশ্বের কোন না কোন দেশে গণহত্যার ঘটনা ঘটছে, বলছেন তিনি, “এর সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা।”

গণহত্যার প্রসঙ্গটিকে যদি বিশ্ব-দরবারে তাজা রাখা যেত, তাহলে এধরনের ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত বলে তিনি বলছেন।

তবে মি. আব্দুল্লাহ জানান, বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি নিয়ে তাদের আন্দোলনের নেতারা যখন বিশ্বের নানা দেশের সরকারের সাথে যোগাযোগ করেছে, সেই দেশগুলো তখন জানিয়েছে যে দীর্ঘদিন পরে হলেও তারা এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবের অপেক্ষা করে আছে।

তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানে অন্তত ৫০,০০০ বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারান।

এরপর থেকে সে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাসে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়। যদিও পাকিস্তান বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

এই ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতনের বিষয়টিকে সামনে এনে বাংলাদেশের সরকার গত বছর থেকে ২৫শে মার্চকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালন করে আসছে।

-বিবিসি বাংলা