গতি নেই পুলিশের কার্যক্রমে

যাত্রাবাড়ী থানার সামনে চেয়ার টেবিল বসিয়ে দায়িত্ব পালন করছিল আনসারের কয়েক জন সদস্য। তাদের চোখের সামনে কঙ্কালের মতো পড়ে আছে অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হওয়া গাড়িগুলো। থানার কার্যক্রমের জন্য যেসব গাড়ি প্রয়োজন তা সবই জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। এই থানার ভেতর এবং বাইরে সবই পুড়ে গেছে আগুনে। বর্তমানে থানার প্রাথমিক কার্যক্রম জিডি গ্রহণের মাধ্যমে শুরু হলেও যানবাহন না থাকায় বাইরের কার্যক্রম সব বন্ধ রয়েছে।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। একই অবস্থা উত্তরা পূর্ব, ভাটারা, বাড্ডা, খিলক্ষেত ও উত্তরা পশ্চিম থানাসহ ডিএমপির ৫০ থানার বেশির ভাগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যানবাহনের। যার ফলে পুলিশ সদস্যরা থানায় যুক্ত হলেও যানবাহনগুলো ধ্বংসের কারণে গতি কমেছে কার্যক্রমে।

ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানে আলম মুন্সী বলেন, টিকাটুলীতে ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলায় থানার কার্যক্রম চলছে। এ পর্যন্ত ১০/১২টি জিডি গ্রহণ করা হয়েছে। দুই সহদর হত্যার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, থানার ভেতরে এবং বাইরে থাকা সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। যা কিছু নষ্ট হয়েছে সবই জনগণের। মামলার আলামত, পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র, বেসরকারি আগ্নেয়াস্ত্র, কম্পিউটার, টেলিভিশন, সিসি ক্যামেরার মনিটর, কনস্টেবলদের ব্যারাকের ট্রাঙ্ক, মূল্যবান জিনিসপত্র—কিছুই নেই।

ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাসেল বলেন, যানবাহন না থাকায় তদন্তের জন্য কেউ বাইরে যেতে পারছেন না।

রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হাই বলেন, গত ৯ আগস্ট থেকে রমনা থানার কার্যক্রম শুরু হয়। সোমবার পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জিডি হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি মামলাও হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার। রাতে পুলিশের নিয়মিত টহল ডিউটি দেওয়া হচ্ছে। তবে কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

গতকাল বাড্ডা থানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, থানার সামনে কেউ পোশাক পরে আবার কেউ সিভিল পোশাকে বসে আছেন। থানার ভিতরে অগ্নিসংযোগ করায় ভিতরে বসার বা কাজ করার কোনো অবস্থা নেই। থানার গেটে ডিউটি পালন করছেন আনসার সদস্যরা। কয়েক জন পুলিশ সদস্যর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের চেয়ার টেবিল থেকে শুরু করে সব পুড়ে গেছে। থানার ভিতরে বসার মতোও অবস্থা নেই। যানবাহন পুড়ে যাওয়ায় মামলার তদন্ত কাজ এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। যানবাহন না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় অপারেশনাল কাজ থেকে বিরত রয়েছেন তারা।

ডিএমপির ৫০টি থানার মধ্যে সবগুলো থানার অপারেশনাল কাজ বাদে যানবাহন ছাড়াই কার্যক্রম স্বল্প পরিসরে শুরু হয়েছে। থানায় কর্মরত কনস্টেবল, এএসআই, এসআই, পরিদর্শকসহ যোগদান করেছেন। তবে এখনো স্বল্পসংখ্যক পুলিশ সদস্য অনুপস্থিত রয়েছেন। কিছু পুলিশ সদস্য আহতও রয়েছে। এরই মধ্যে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা থানাগুলো মেরামতের কাজ শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তরের উদ্যোগে। যানবাহনের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।