গত রাতেও ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৬ ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত
মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতেও দেশের পাঁচ জেলায় অভিযান চালানোর সময় পাঁচ ব্যক্তি তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশ।
এর মধ্যে কুষ্টিয়ায় দুজন, গাইবান্ধা একজন, জামালপুরে একজন, ফেনীতে একজন এবং কুমিল্লায় একজন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে আরো দাবি করা হয়েছে, নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী। ‘বন্দুকযুদ্ধের’ সময় অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে প্রতি রাতেই মাদক ব্যবসায়ীরা তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ অভিযান চলবে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে সারা দেশে অন্তত ৩৪ ব্যক্তি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত রোববার চারজন, সোমবার নয়জন এবং গতকাল মঙ্গলবার ১১ জন নিহত হয়েছেন। লাগাতার বন্দুকযুদ্ধের মধ্যে আজ বুধবার আরও ছয়জন নিহতের খবর এলো।
এদিকে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র গত সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২১ দিনে ২৭ ব্যক্তি তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নিহতদের মধ্যে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে ১০ জন, পুলিশের হাতে আটজন এবং গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে নয়জন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন-
কুষ্টিয়া থেকে সাবিনা ইয়াসমিন শ্যামলী জানিয়েছেন, কুমারখালী ও ভেড়ামারা উপজেলার ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে এসব ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক দাবি করেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য বেচাকেনার খবর পেয়ে পুলিশ উপজেলার লাহিনী পাড়া গড়াই নদীর পাড় সংলগ্ন সেতুর নিচে অবস্থান নেয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি করেন। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ফটিক ওরফে গাফ্ফার (৩৭) গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
‘ফটিক ওরফে গাফ্ফার উপজেলার এলেঙ্গীপাড়ার মৃত ওসমান গনির ছেলে। তিনি পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।’
ওসির আরো দাবি, ‘বন্দুকযুদ্ধের সময় কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হামিদুর রহমান, এসআই শফিকুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আনোয়ার হোসেন ও কনস্টেবল মো. আলাউদ্দিন আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি গুলি, ৭০০ ইয়াবা ও কিছু গাঁজা উদ্ধার করেছে।’
অন্যদিকে ভেড়ামারা থানার ওসি আমিনুল ইসলামের ভাষ্য হচ্ছে, ‘মাদক বেচাকেনার সংবাদ পেয়ে পুলিশ উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের হাওয়াখালী মাঠে অবস্থান নেয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। তখন বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী লিটন হোসেন (৪০) গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। লিটন ভেড়ামারা পৌরসভা এলাকার নওদাপাড়ার মৃত গোলজার হোসেনের ছেলে।’
‘বন্দুকযুদ্ধে’ ভেড়ামারা থানার এসআই সালাউদ্দিন, কনস্টেবল মো. আমিনুর ও সানোয়ার হোসেন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশিয় শাটারগান, তিনটি গুলি, ৫০০ ইয়াবা ও কিছু হেরোইন উদ্ধার করেছে বলেও দাবি করেন ওসি। তিনি আরো জানান, লিটন পুলিশের তালিকাভুক্ত ‘শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী’ ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
কুমিল্লা থেকে মো. জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন, আদর্শ সদর উপজেলায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার গোমতী বাঁধের কাছে চান্দপুর সেতুর কাছে এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।
নিহত নুরুল ইসলাম ইছা আদর্শ সদর উপজেলার গাজীপুর গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে।
পুলিশের দাবি, ইছা পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। তাঁকে গতকাল বিকেলে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন দাবি করেন, ‘ইছাকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর সহযোগীদের ধরতে পুলিশ অভিযানে নামে। শহরতলীর চান্দপুর সেতুর কাছে ইছার সহযোগী মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় ইছা গুলিবিদ্ধ হন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো দাবি করেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে কুমিল্লা সদর থানার ওসি আবু ছালাম মিয়াসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হন।’
গাইবান্ধা থেকে কৃষ্ণ কুমার চাকী জানিয়েছেন, জেলার পলাশবাড়ী উপজেলায় তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে র্যাব।
গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে নিহত ব্যক্তির নাম রাজু মিয়া। তিনি উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের রায় গ্রামের মৃত জোব্বার মিয়ার ছেলে।
র্যাব-১৩ গাইবান্ধার কার্যালয় থেকে দাবি করা হয়েছে, মাদক বেচাকেনার সংবাদ পেয়ে র্যাবের একটি দল পলাশবাড়ী উপজেলার বিশ্রমগাতি এলাকা অভিযানে যায়। এ সময়
মাদক ব্যবসায়ী রাজু মিয়া ও তাঁর সহযোগীরা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় রাজু মিয়া ঘটনাস্থলে নিহত হয়। দুই র্যাব সদস্যও আহত হন।
ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলি ও গাঁজা উদ্ধারের তথ্যও দিয়েছে র্যাব।
ফেনী থেকে ওছমান হারুন মাহমুদ জানিয়েছেন, ফেনীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ফারুক (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে র্যাব।
গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতের দিকে সদর উপজেলার কালীপাল এলাকায় এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেছেন র্যাব-৭ সিপিসি ১-এর অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার শাফায়াত জামিল ফাহিম।
এ ‘বন্দুকযুদ্ধ’ সম্পর্কে র্যাব কর্মকর্তার ভাষ্য হচ্ছে, ‘একটি প্রাইভেটকারে মাদক পাচার হচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব কালীপাল এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালায়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা র্যাবের ওপর গুলি চালায়। র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এতে ফারুক গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলেন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ঘটনাস্থল থেকে ২২ হাজার ইয়াবা ও একটি শ্যুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে বলেও দাবি র্যাবের।
জামালপুর থেকে শফিক জামান জানিয়েছেন, শহরতলীতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। নিহত ব্যক্তির নাম জানায়নি পুলিশ।
জামালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল ইসলাম দাবি করেন, ‘আজ বুধবার ভোরে জামালপুর শহরতলীর ছনকান্দা মাদ্রাসা বালুঘাট এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।’
‘মাদক বেচাকেনার খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। অন্যরা ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে পালিয়ে যায়।’
এ সময় সদর থানার ওসি মো. নাসিমুল ইসলামসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন রাশেদুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এক হাজার ইয়াবা, ১০০ গ্রাম হেরোইন, একটি পিস্তল ও তিনটি গুলি উদ্ধার করে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন