গরমের দাপট থাকতে পারে এপ্রিল মাস জুড়ে

চৈত্রের বিদায় যত ঘনিয়ে আসছে তাপমাত্রার পরদ তত বাড়ছে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদগুলোতে নিদাঘের সূর্য তাতিয়ে উঠছে প্রতিদিন। বৈরি হয়ে উঠছে প্রকৃতি। হাঁসফাঁস করছে জনজীবন-প্রাণীকুল। দিবাভাগে অস্বস্তিকর প্রহর কাটাচ্ছে মানুষ। সর্বত্রই দিনের ব্যবধানে একটু একটু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাপমাত্রা। গতকাল ২ ডিগ্রি বেড়ে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি। শুধু চুয়াডাঙ্গা বা ঈশ্বরদীই নয়, উত্তরাঞ্চলসহ দেশের একটি বড় অংশজুড়ে বিরাজ করছে তাপপ্রবাহ।

এমন পরিস্থিতি আরও এক সপ্তাহ চলবে বলে গতকাল আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে এপ্রিল জুড়েই সারাদেশে তাপপ্রবাহ ওঠা-নামা করবে। চলবে গরমের দাপট। এই সময়ে অনাবৃষ্টির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়াবিদগণ।

তারা বলছেন, আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই এপ্রিল মাসে গড়ে সাধারণত দুই-তিনটি মাঝারি এবং এক-দুটি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। তবে তারা আশঙ্কা করছেন, এ বছরের তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তিকাল বিগত বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, বিদ্যমান তাপপ্রবাহের কারণে বাতাসে এখন জলীয়বাষ্পের আধিক্য থাকবে। এতে করে মানুষের শরীরে অস্বস্তিবোধ বৃদ্ধি পেতে পারে। এপ্রিল বছরের উষ্ণতম মাস।এ সময় তাপমাত্রা এমনিতেও বেশি থাকে। কিন্তু এটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া দরকার। যখন ঝড় হয়, তখন ভারী বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা আর বাড়ে না। কিন্তু আপাতত ভারী বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের গত কয়েকদিনের পূর্বাভাসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। কারণ বাংলাদেশের ঐ অঞ্চলের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ,বিহার,উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের অবস্থান। ওইসকল প্রদেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি। এসব জায়গায় বছরের এই সময়ে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝে ওঠানামা করে।

ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, গত বছর ভারতের ওইসব প্রদেশের কোন কোন অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। যেহেতু ওগুলো উত্তপ্ত অঞ্চল, তাই ওখানকার গরম বাতাস চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং তা আমাদের তাপমাত্রাকে গরম করে দেয়। এই আন্তঃমহাদেশীয় বাতাসের চলাচল ও স্থানীয় পর্যায়েও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দেশব্যাপী এবছর তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি থাকতে পারে। বিগত বছরের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে চলতি ২০২৪ সাল উত্তপ্ত বছর হিসেবে কাটবে। আমরা এ বছর তাপপ্রবাহের দিন এবং হার বেশি পেতে যাচ্ছি।এর কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। বাংলাদেশের তাপমাত্রার উর্ধ্বগতিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ছোঁয়া লেগেছে। ইতিমধ্যে কোন কোন বিভাগে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে,তা ৮ ও ৯ই এপ্রিল নাগাদ কিছুটা কমতে পারে। তারপর আবারো বাড়বে। তীব্র তাপপ্রবাহ সাধারণত গড়ে তিন থেকে সাতদিন ধরে চলে। তবে মৃদু তাপপ্রবাহ সর্বোচ্চ ২৩ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে। তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে বজ্রবৃস্টি। তবে আপাতত: এপ্রিল উষ্ণতম মাস, এসময় তাপমাত্রা এমনিতেও বেশি থাকে। তবে আপাতত: বজ্রবৃস্টি ও ঝড়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। অনেকদিন ধরে তাপপ্রবাহ হলে কোনও কোনও এলাকার বায়ুরচাপ কমে যায়। তখন সাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্প বাতাসের কোথাও জড়ো হতে শুরু করে এবং তখন সেখানে বজ্রমেঘ তৈরি হয়। পরবর্তীতে সেই মেঘ বৃষ্টিপাত ঘটায়। বাংলাদেশ বা ভারতের বিহার, আসাম, উড়িষ্যা, মেঘালয়, ত্রিপুরা, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে তাপপ্রবাহ বিদ্যমান। তাই তাপমাত্রা হ্রাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বজ্রবৃষ্টিপাতের।

এ দিকে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, আগামীকাল সোমবার তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তবে সাময়িক। গ্রীষ্মের সময়টায় বিরামহীনভাবে সূর্যকিরণ দিয়ে থাকে। আকাশে মেঘমালার অনুপস্থিতির কারণ সর্বোচ্চ সূর্যতাপ মাটিতে এবং মাটির কাছাকাছি পরিবেশে আপতিত হয়। ফলে প্রকৃতি গরম হয়ে যায়। বৈরী পরিবেশের এটাই কারণ। এতে স্থানে স্থানে কাল বৈশাখী,বজ্রবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি এবং মাঝে মাঝে প্রচণ্ড গতিতে টর্নেডো হয়ে থাকে।

এদিকে দেশে আগামী ১১ এপ্রিল ঈদুল ফিতর হতে পারে। ওই দিনের আবহাওয়া সম্পর্কে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, ঈদের দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকবে। সেদিনও তীব্র গরম অনুভূত হতে পারে। আবদুর রহমান জানান,আজ রোববার থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে থাকবে। দুই দিন একটু কমের দিকে থাকবে। এরপর আবার বাড়তে থাকবে তাপমাত্রা। আজ রোববারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.২ ডিগ্রি: চুয়াডাঙ্গায় শুরু হয়েছে তীব্র তাপদাহ। প্রচ্ল তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সেই সাথে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় অনুভূত হচ্ছে ভ্যাপসা গরম। তাপদাহে খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। গতকাল শনিবার বিকেল ৩ টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন মাঝারি তাপদাহের পর গতকাল তীব্র তাপদাহ শুরু হয়েছে। আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।

ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি, বাতাসে বইছে হলকা: ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি স্বপন কুমার কুন্ডু জানান,পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শনিবার ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যাবেক্ষণাগারে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা এ বছরে ঈশ্বরদীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। বাতাসে বইছে হলকা।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন বলেন, গতকাল বিকাল ৩টায় ঈশ্বরদীতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে, ঈশ্বরদীতে চৈত্রের তপ্ত রোদে বাতাসে আগুনের হলকা ছড়াচ্ছে। শহরের রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল কমে গেছে। তপ্ত রোদে দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ।