গলায় কিছু আটকে শ্বাসরুদ্ধ হলে কী করবেন?
ডা. সজল আশফাক : সাধারণত খাদ্য কিংবা অন্য কিছু শ্বাসনালিতে আটকে শ্বাসরুদ্ধ হতে পারে। বড়দের চেয়ে বাচ্চারা এ ধরনের ঘটনার শিকার বেশি হয়। শ্বাসরুদ্ধ হলে তার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, অক্সিজেনের অভাবে তার চোখ নীল হয়ে আসে, সে বারবার কাশে।
এ সময়ে কী করণীয়?
- রোগী যদি প্রচণ্ড কাশতে থাকে, তাকে বাধা দেবেন না।
- যদি সে না কাশতে পারে, আচমকা তার পেটে ধাক্কা মারুন।
- রোগী যদি অজ্ঞান হয়ে পড়ে, তাকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস দিন।
- যদি শ্বাসনালি সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে, তাহলে বস্তুটি অপসারণ করুন।
- যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যান।
১. যদি প্রচণ্ড কাশার পরেও বস্তুটি গলা থেকে না বের হয়, তাহলে এক হাতে তাকে পেঁচিয়ে ধরে তার মাথা নিচু করে অন্য হাতের গোড়া দিয়ে রোগীর দুই কাঁধের মাঝখানে শক্ত করে চাপড় মারুন।
২. যদি পেছনটায় চারবার চাপড় মারার পরও বস্তুটি না বের হয়, তাহলে পেটে চাপ দিন। যদি তারপরও শ্বাসনালি বন্ধ থাকে, আবার রোগীর দুই কাঁধের মাঝখানে চাপড় দিন। এভাবে করতে থাকুন।
৩. যদি রোগীর শ্বাসনালি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং তার মুখে মুখ লাগিয়ে ফুঁ দেওয়ার পরও তার ফুসফুসে বাতাস না পৌঁছায়, তাহলে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে বস্তুটিকে খুঁজে বের করার। এ ক্ষেত্রে আপনি রোগীর মুখের মধ্যে একটি আঙুল বাঁকা করে ঢুকিয়ে ধীরে ধীরে বস্তুটিকে খুঁজতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে আঙুলটি সোজাসুজি যেন বস্তুটিকে ধাক্কা না মারে, তাহলে তা গলার আরো গভীরে ঢুকে যাবে। গালের এক পাশ থেকে খোঁজা শুরু করুন, মুখের পেছনে আঙুলটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুঁজুন। তারপর আঙুলের মাথা বাঁকিয়ে বস্তুটিকে টেনে নিয়ে আসুন। যখন টেনে নিয়ে আসবেন তখন খুব দ্রুত টেনে নিয়ে আসুন। কারণ, রোগী ঢোক গিললে তা আরো গভীরে ঢুকে যাবে।
যে কথা মনে রাখবেন :
- যে পর্যন্ত না রোগী কথা বলতে ও কাশি দিতে পারছে, সে পর্যন্ত রোগীর পাশে থাকুন।
- রোগী সুস্থির হওয়া পর্যন্ত তার পাশে থাকুন। যদি তার গলায় যন্ত্রণাদায়ক কিছু আটকে থাকে, তাহলে বস্তুটি বের হওয়ার পরেও অনেকক্ষণ রোগীর গলার মাংস পেশি টাইট থাকে। রোগীকে বিশ্রাম নিতে বলুন।
- যখন রোগীর পিঠে চাপড় মারছেন, তখন মায়া করবেন না। প্রয়োজনে চাপড়টা জোরে মারুন।
- বাচ্চাকে খেলনা দেওয়ার সময় ছোট খেলনা দেবেন না।
- আপনি রোগীর গলা থেকে বস্তুটি বের করার পরও রোগীকে ডাক্তার দেখাতে ভুলবেন না। যদি আপনি রোগীর পেটে আঘাত করে থাকেন, তাহলে অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে। চিকিৎসক রোগীকে দেখলে বুঝতে পারবেন, গলা থেকে বস্তু বের করার সময় তার অভ্যন্তরীণ অঙ্গের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না।
- রোগী কাশি দিয়ে বস্তু বের করতে চেষ্টা করার আগে রোগীর পিঠে বা পেটে ধাক্কা দেবেন না।
- যদি রোগী প্রচণ্ড কাশতে থাকে এবং আপনার সঙ্গে কথা বলতে থাকে, আপনি দাঁড়িয়ে থাকুন। তাকে উৎসাহ দিন। কিন্তু তার কাশি ও কথা বলাতে বাধা দেবেন না। তাকে পরামর্শ দিন যেন কেশে কফ বের করে দেয়।
- এসব প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলেই তবে তাকে উবু করে ধরে তার পিঠে চাপড় মারুন। তাকে দাঁড় করিয়ে কিংবা বসিয়ে কাজটি করতে পারেন। সে যদি পড়ে যায় তাকে টেনে তুলুন।
- রোগী বাচ্চা হলে তাকে কোলে নিয়ে কিংবা আপনি একটি চেয়ারে বসে আপনার ঊরুদ্বয়ের ওপর শিশুটিকে উপুড় করে তার পিঠে চাপড় মারুন।
- রোগী ছোট বাচ্চা হলে তার পা দুটো ধরে মাথাটা নিচের দিকে ঝুলিয়ে পিঠে চাপড় মারুন।
- রোগী শ্বাস নেওয়া বন্ধ করলেই কৃত্রিম শ্বাস দিন।
- রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ধারের কাছের স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে চলুন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন