গাইবান্ধার চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়া রোধে বিকল্প পদ্ধতিতে পাঠদান

টানা দেড় বছর ধরে বন্ধ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। কোভিড-১৯ বা করোনা, মহামারী আকার ধারণের পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক-সহ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকায় হুমকিতে শিশু-কিশোরদের লেখা-পড়া। বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের লেখাপড়া বন্ধ থাকায় চিন্তিত অভিবাকরাও।

আগামীর প্রজন্ম এসব শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বেশ কয়েকটি সংস্থা। এমন এক সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ।

করোনা মহামারীকালে কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যত চিন্তা করে ঝড়ে পড়া ও বাল্য বিবাহ রোধে বিশেষ ব্যবস্থায় পাঠদান অব্যাহত রেখেছে সংস্থাটি। শিক্ষকদের বাড়ীতেই স্বাস্থ্যবিধি এবং নিরাপদ দূরত্ব মেনে লেখা-পড়া চালানো হচ্ছে পুরোদমে। যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে বিদ্যালয়ের বিকল্প হিসেবে এমনভাবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালাতে সহযোগিতা করছে ফ্রেন্ডশিপ।

যেসব চরে একসময় ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া দুরূহ ব্যাপার ছিল সেখানেই অনেক শিক্ষার্থী এখন স্বপ্ন দেখছে ডাক্তার, প্রকৌশলী হতে। শিক্ষার্থীদের এসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ফ্রেন্ডশিপ। প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। লেখাপড়ার পাশাপাশি, করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কৌশলও শিক্ষা দেয়া হচ্ছে ছাত্রী-ছাত্রীদেরকে। তারা এগুলো শিখে পরিবার-পরিজনকেও করছে সচেতন।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লার চর ইউনিয়নের চর সিধাই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকের বাড়িতে স্বাস্থ্য বিধি মেনেই দল ভিত্তিক পদ্ধতিতে চলছে পাঠদান কার্যক্রম।

নাজমুল হাসান নামে ৮ ম শ্রেণির এক ছাত্র জানান, আমাদের এই চরে আর কোন স্কুল নেই যদি ফ্রেন্ডশিপ স্কুল না থাকতো তাহলে আমাকেও মাঠে কাজ করতে হতো।

ইতি নামে ৮ম শ্রেণীর অন্য আরেক শিক্ষার্থী জানান তার বাবা তাকে কিছুদিন আগে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ স্কুলের স্যাররা আমার পরিবারের সাথে কথা বলে বিয়েটা আটকায় এখন আমি আবার নতুন উদ্যমে পড়াশোনা করছি।

ফ্রেন্ডশিপের পক্ষ থেকে জানানো হয়- গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরের সবিধা বঞ্চিত প্রায় ১০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর লেখাপড়া এমন বিকল্প পন্থায় চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বাড়ী গিয়ে বা অভিবাবকের সাথে যোগাযোগ করে নেয়া হচ্ছে লেখাপড়ার খোঁজখবর।

ফ্রেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক রুনা খান জানান, করোনকালে সুবিধা বঞ্চিত চরবাসীর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ নজর দিয়েছে ফ্রেন্ডশিপ। এ সংস্থার অধীনে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানে আনা হয়েছে নতুন মাত্রা। বিশেষ করে ফোনে যোগাযোগ, শিক্ষকের বাড়ীতে লেখা-পড়ার আয়োজন এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের খোঁজ-খবর নেয়ায়, সাধুবাদ জানিয়েছেন অভিবাবক, স্থানীয় সমাজ ও প্রশাসন। এ ধরণের সাধুবাদ এবং উৎসাহ, ফ্রেন্ডশিপের কাজে আরও গতি আনবে বলে আশা করেন তিনি।

প্রত্যন্ত চরে ফ্রেন্ডশিপের ৪৩টি প্রাথমিক এবং ১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধীনে চলছে এই পাঠদান ব্যবস্থা। ছাত্রীদের দক্ষতা বাড়াতে ১২০ টি সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ক্লাস নিচ্ছে ফ্রেন্ডশিপ। ফ্রেন্ডশিপ বিদ্যালয়ের শিক্ষদের পাঠদান সহজ করতে আয়োজন করা হচ্ছে অনলাইন প্রশিক্ষনের।