গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে চামড়ার বাজারে আমদানি ও কেনাবেচার সোনালী অতীত যেন শুধুই স্বপ্ন

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী কালিবাড়ী হাটে চামড়ার বাজার মূল্যে চরম দুরবস্থা-মৌসুমী ক্রেতাদের মাথায় হাত। অতীতের যে কোন সময় তুলনায় বাজার মূল্যে এবার চরম ধস। চামড়ার সোনালী অতীত যেন শুধুই অতীত। দেশের অন্যতম চামড়া কেনা-বেচার হাট পলাশবাড়ী পৌরশহরের ঐতিহ্যবাহী কালীবাড়ীহাট। সপ্তাহের প্রতি বুধবার চামড়ার হাটটি বসে আসছে।

শুধু উত্তরাঞ্চল নয় রাজধানী ঢাকা থেকে ট্যানারি শিল্প, আড়ৎদার, লেদার কোম্পানি সমূহ, ছোট-বড় ক্রেতা, স্থানীয় ক্রেতা-বিক্রেতা ছাড়াও চামড়া শিল্পের সাথে সম্পৃক্তরা হাটটিতে আসেন। সারাবছরের ধারাবাহিকতায় বিশেষ করে বছরের দুই ঈদে হাটটি চামড়া বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। এবারের কোরবানির ঈদ-উল-আযহা হয়েছে গত (১৭ জুন) সোমবার। ঈদ পরবর্তী (১৯ জুন) বুধবার ছিল চামড়া হাটের নির্দিষ্ট দিন। কিন্তু চামড়া লবনযুক্ত না হওয়ার কারণে এদিন হাট বসেনি।

৯ দিন পেরিয়ে (২৬ জুন) বুধবার স্বল্প পরিসরে কতিপয় ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারনায় হাটটি বসে। এরআগে গত সোমবার (২৪ জুন) দুপুর থেকে হাটটিতে স্বপ্ল পরিমাণে চামড়া আসা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত বুধবার ভোর হতে চামড়া যাচাই-বাছাইয়ের সাথে কেনাবেচা শুরু হয়ে তা চলে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত। ট্যানারি, লেদার কোম্পানি, মহাজন এবং কোম্পানীর প্রতিনিধিদের পদচারণা ঘটলেও এবারে কোরবানির চামড়ার মূল্য বলতে গেলে ছিল নামমাত্র। এক্ষেত্রে গরুর চামড়ার বিনিময় মূল্য থাকলেও ছাগর-ভেড়ার চামড়া হয়ে পড়ে মূল্যহীন।

হাট ইজারাদার আয়ান উদ্দিনগং আহম্মদ আলী, শাহিন ও মোমদুলসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের মতো এবারও কোরবানীর চামড়ার দরপতনের কারণে হাটটি জমে উঠেনি। এমন পরিস্থিতিতে হাটে হা-হুতাশ করেছেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। চামড়ার কাঙ্খিত দাম না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। তাদের অভিযোগ, একে তো দাম নেই। তারপরও লবণ, শ্রমিক ও পরিবহন খরচ অনেক বেশি।

অন্যদিকে; বছরের পর বছর ট্যানারি মালিকদের নিকট টাকা পড়ে থাকায় স্বস্তিতে নেই পাইকাররাও। তাদের ধারদেনা করে মৌসুমি ব্যবসায়িদের কাছ থেকে চামড়া কিনছেন। ধারাবাহিকতায় এ বছর চামড়া প্রকারভেদে ভালো মানের প্রতিটি গরুর চামড়া ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ১শ’ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচনা করতে দেখা যায়।

এক্ষেত্রে কম মূল্যে চামড়া বিক্রি করে অপুরনীয় লোকসান গুনেছেন তৃণমূল মৌসুমি চামড়া ক্রেতারা। এবারে হক লেদার, আরকে লেদার, রিলায়েন্স, চাইনিজ (আজাদ), বুশরা লেদার ও সাবিনা ট্যানারি ছাড়াও স্থানীয়দের মধ্যে মিনু মন্ডল, আবু বক্কর, নান্নু মিয়া, মাহামুদসহ অন্যান্যদের চামড়া কিনতে দেখা যায়।

উল্লেখ্য; দুর-দুরান্ত থেকে বিক্রেতারা হাটে এসে তাদের চামড়ার মূল্য নগন্য থাকায় দু’একজন মৌসুমি ক্রেতা মনের রাগ ও ক্ষোভে দুঃখে হাটস্থলেই চামড়া রেখে চলে যান। হাটিতে এবারে প্রায় ৮ হাজার শুধুমাত্র গরুর চামড়া আমদানি ঘটে। তন্মধ্যে হাজার খানেক চামড়া অবিক্রিত থেকে যায়।