গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ইজারা ছাড়াই চলছে খেয়াঘাট : উত্তোলিত অর্থ যাচ্ছে কার পকেটে
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের ভৌগলিক সীমানার খেয়াঘাট সমূহ চলছে ইজারা ছাড়াই। উত্তোলিত অর্থ যাচ্ছে কার পকেটে।তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, চলতিবৈশাখ-চৈত্র-১৪৩০ সনের ইজারা দরপত্র আহবান করা হয় গত ১১ মে। দরপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গত ১৫ মে।
এদিন ইউপির অন্যান্য ঘাট ব্যতিত শুধু হাজির ঘাটের জন্য ৫টি পৃথক পাঁতানো দরপত্র দাখিল করেন। এরা হচ্ছেন; যথাক্রমে আতোয়ার রহমান ১৮ হাজার টাকা, আশরাফ ১৯ হাজার, কৈলাশ ১৪ হাজার ৫’শ, বাহাদুর ৪ হাজার ৪’শ এবং কালিপদ ১৩ হাজার ৫’শ টাকা।
পরস্পর পাঁতানো সমঝোতায় সর্বোচ্চ দরদাতা আশরাফুল ইসলামের নামে হাজির ঘাটটি ইজারা বন্দোবস্ত দেয়া হয়। ইজারা নীতিমালা উপেক্ষা করে বিশেষ ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় ঘাটটি মোটাঅংকের বিনিময় কৈলাশের নিকট হাতবদল করা হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকার সচেতন জনমনে নানা গুঞ্জনসহ মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে; জনবল পারাপারের ক্ষেত্রে জনগুরুত্বপূর্ণ চকবালা ঋশির ঘাটটি ইজারা বন্দোবস্ত ছাড়াই রহস্যজনক ভাবে পারাপার টোল আদায় হলেও তা যাচ্ছে কার পকেটে! এ নিয়ে এলাকাবাসির মাঝে নানা প্রশ্ন দানা বেধে উঠেছে। ঋষি ঘাটের গত বছরের ইজারাদার মন্টু ও স্বাধীন মাঝি তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানান, ঘাটটি চলতি বছরে অত্র ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর ২০ হাজার টাকার একটি ডিসিআর কেটে দেয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন।
কিন্তু; অদ্যাবধি প্রতিশ্রুতি ডিসিআরটি প্রদান করেননি বলে তিনি জানান। একই ঘাটের বিপরীতে অত্র ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যকে উপরন্ত আরো ১৫ হাজার দিতে হয়। সর্বমোট ৬৫ হাজার টাকা গ্রহণ করা হলেও প্রত্যাশিত ডিসিআরটি এখনো মেলেনি। অবশিষ্ট ফলিয়া-মালিয়ানদহ, আসেরঘাট ও অলি নামীয় পৃথক খেয়াঘাট তিনটি এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইজারা বন্দোবস্ত দেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানা যায়।
এলাকাবাসী জানান, হাজীর ঘাট এবং ঋষি ঘাট দু’টোই দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা এবং গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলার মিলনস্থল। প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অসংখ্য মানুষজনসহ যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে।
এছাড়াও উপজেলা গুলোর হাট-বাজারে যাতায়াতকারী হাঁটুরে, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়িদের এপার-ওপার হতে হয়। ঘাটগুলো দিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পারাপার চলে থাকে। গত বছরও ইজারার মাধ্যমে ঋষির ঘাটটি চলেছে। এখন শুনছি ডাক-হাঁক ছাড়াই টাকা আদায় করা হচ্ছে।
ইজারা ছাড়া কিভাবে ঘাট চলে এবং টাকা আদায় করা হয় বিষযটি রহস্যজনক হয়ে দাড়িয়েছে। ভূক্তভোগি মহলের দাবী ঘাটস্থলে নির্ধারিত ইজারাদারের নাম সম্বলিত টোল আদায়ের সরকারি কোনো বোর্ড নেই। যে কারণে তারা ইচ্ছেমতো টোল আদায় করছেন। নীতিমালা লঙ্ঘন করে ঘাট সমূহ দিনের পর বছর চললেও দেখার যেন কেউ নেই? হাজীর ঘাট ইজারাদার আশরাফ আলী জানান, যে পন্থায় এবং অর্থ যাই-ই হোক; প্রথমবারের মত এবছর আমি ইজারা গ্রহণ করেছি।
ঋষির ঘাট এলাকার ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান মুঠো ফোনে জানান, আমি বাহিরে আছি পরে কথা বলব। কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের দীর্ঘ ১৮ বছরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু বলেন, আমি প্রতিবছরই নিয়মিত খেয়াঘাট গুলো ইজারা বন্দোবস্ত দিয়ে আসছিলাম। এখন কিভাবে চলছে আমার জানা নেই।
ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর জানান, ইজারা ডাক-কারি না থাকায় ঋষিঘাটটি ইজারা প্রদান সম্ভব হয়নি। সরকার মোটাঅংকের রাজস্ব হারাচ্ছে কি-না এক প্রশ্নের উত্তরে চেয়ারম্যান কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি। তুঘলকি এসব কর্মকান্ডের বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান নয়ন-এর সাথে কথা বললে এলাকার ভুক্তভোগী মহল অভিযোগ করলে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, সরকারি নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে কেউ যদি ঘাট ডেকে নিয়ে অপরজনের নিকট বিক্রি করার বিষয়টির প্রমাণ পেলে লিজ বাতিল করা হবে।
উল্লেখ্য; প্রতিবছর ঋষির ঘাটে গংঙ্গাস্নান এবং হাজির ঘাট দিয়ে বিশেষ করে দুই ঈদ, পহেলা বৈশাখ ও নানা পূঁজা-পার্বনে পারাপাররত সর্বস্তরের জনমানুষের নিকট থেকে লাখ-লাখ টাকা টোল আদায় হয়ে থাকে। কিন্তু ইজারা বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে শুভঙ্করের ফাঁকির গ্যারাকলে নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে ইজারা বন্দোবস্ত দেখানো হয়ে থাকে বলে অভিযোগে জানা যায়।
এলাকাবাসীর নিকট সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টি চরম অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। সর্বোপরি এলাকাবাসী বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট দায়ীত্বশীল মহলের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন