গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর কিশোরগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১২ ইউপি সদস্যের লিখিত অভিযোগ দায়ের

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিকের নানামুখী দূর্ণীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন। ১২ ইউপি সদস্য স্বাক্ষরিত অভিযোগটি রোববার (১২ জুন) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট দাখিল করা হয়।

অভিযোগে জানা যায়, ওই ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক নির্বাচিত হবার পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার প্রায় সকল কাজে বিভিন্ন দূর্ণীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছেন। এসব বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ইউপি সদস্যবৃন্দ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করতে চাইলে চেয়ারম্যান তার অবস্থান থেকে বরাবরই আর কোনো দূর্ণীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করবেন না মর্মে মৌখিক অঙ্গীকার করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার প্রতিশ্রুত অঙ্গীকার বেমালুম ভুলে আবারো পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরে দূর্ণীতিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েন।

স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখিত অভিযোগ গুলো হচ্ছে; ইউপি সদস্য/কর্মচারী ছাড়াও এলাকার সাধারণ জনগণের

সাথে অহেতুক এবং অকারণে অশোভনীয় আচরণ। গ্রাম আদালতে মামলার বাদী ও বিবাদীর নিকট অবৈধ নগদ অর্থ গ্রহণ, গ্রাম আদালতের সদস্য কিংবা প্রতিনিধি ছাড়াই মনগড়া মামলা পরিচালনা, ইউপি’র উন্নয়নমূলক কাজের বিপরীতে প্রাপ্ত বরাদ্দের ২৫% অর্থ চেয়ারম্যান নিজেই কোনো জবাবদিহি ছাড়াই শুধুমাত্র ৬নং ওয়ার্ডভূক্ত আসমতপুর, ফলিয়া ও লোকমানপুর গ্রামে দায়সারা কাজ সম্পাদন করে থাকেন।

অপরদিকে; কোনো পরামর্শ বা মতবিনিময় না করেই ইউপির ১% বরাদ্দের টাকা কোথায় কিভাবে ব্যয় করে থাকেন এ ব্যাপারে ইউপি সদস্যদের কোনো কিছু অবগত করেন না। তিনি প্রায় সম্পূর্ণ অর্থই আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া সরকারি বিধিবিধানের কোনো তোয়াক্কা না করে ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় খেয়ালখুশি মত আহ্বানকৃত টেন্ডারের অর্থ ও ইউপি এলাকার ইটভাটা সমূহ থেকে আদায়কৃত ট্যাক্সের অর্থ, ইউপি ভবনে অবস্থিত মোবাইল টাওয়ারের ভাড়ার টাকা তিনি বরাবরই আত্মসাৎ করে আসছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

অন্যদিকে; সরকারি ত্রাণ সামগ্রীর তালিকা প্রস্তুত করনে দূর্ণীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় গ্রহণ করা। অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে নিজস্ব লোক মাধ্যম ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা। ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ ফেয়ার কার্ডের তালিকা করনে ইউপি সদস্যদের তিনি বরাবরই উপেক্ষা করে থাকেন। গর্ভবর্তী ও মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকা প্রস্তুত করণে তিনি একচ্ছত্র আধিপত্যের মাধ্যমে ইউপি সদস্যদের বঞ্চিত করে আসছেন।

এক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর অত্যন্ত চাতুরতার সাথে সুকৌশলে ইউনিয়ন পরিষদের রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর নিয়ে থাকেন। রেজুলেশন খাতায় তিনি যতসব একক সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করে থাকেন। যথাসময় না করে তিনি ইচ্ছেমত ইউপি সভা আহবান করে থাকেন। জন্মনিবন্ধনের আদায়কৃত টাকা ব্যাংকে জমা না করে পকেটস্থ এবং মনগড়া ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাতৎ করে থাকেন।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হলে ইউপি চেয়ারম্যান জানান, উত্থাপিত অভিযোগ সমূহ সম্পূর্ণ মিথ্যা- বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। মূলতঃ আমার নিয়ম মাফিক চলার বিষয়টি তাদের গাত্রদাহে পরিণত হয়েছে। বরং ইউপি সদস্যদের অনিয়ম রোধকল্পে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ায় তারা আমার প্রতি উঠেপড়ে লেগেছেন। অন্যায়-দূর্ণীতি কখনে ঢাকা যায় না। আমার দুর্ণীতি থাকলে প্রশাসন আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।

এদিকে; সোমবার (১০ জুন) অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে কথা হলে ইউএনও মো. কামরুল হাসান বিভিন্ন অভিযোগ সম্বলিত একটি অভিযোগপত্র পাবার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, অভিযোগ কারী ইউপি সদস্যবৃন্দ নিয়ম ও বিধি অনুসরণ করে অভিযোগ দাখিল করেননি। এ ব্যাপারে অভিযোগ স্বাক্ষরকারীদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষ তিনি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।