গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে

গাছ থেকে ভাইরাস বিক্রি করে সংসার চলে শত শত পরিবারের!

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা রেইনট্রি গাছের ভাইরাস পোকা বিক্রি করে চলছে শত শত পরিবারের সংসার। এ ভাইরাস বিক্রি লাভবান হওয়ায় নিজ পেশা ছেড়ে ভাইরাস বিক্রি পেশার যুক্ত হচ্ছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- উপজেলার ভারড়াশুর, মোচনা,পশারগাতী ইউনিয়নে এই রেইনট্রি গাছের ভাইরাস পোকার সংগ্রহ চলছে। আবার অনেকে রাস্তার পাশে গাছের বাগান ক্রয় করে রেখেছেন ভাইরাস সংগ্রহের জন্য। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ভাইরাস পোকা সংগ্রহের কাজ।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়- উপজেলার ভাবড়াশুর ইউনিয়নের কয়েকজন যুবক ইঞ্জিন চালিত ভ্যানগাড়ী সাথে নিয়ে উজানী থেকে আসা রাজন মিয়া রেইনট্রি গাছের ভাইরাস পোকার ডাল সংগ্রহ করে বাড়ী ফিরছে। এ পেশার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন উজানী ভাবড়াশুর মোচনা ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক যুবক। প্রথমে বাড়ী থেকে বের হয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলোতো গিয়ে রেইনট্রি কাছের সাদা বর্ণের ভেতর লালচে রঙের ভাইরাসযুক্ত ডালের সন্ধান করেন। পরে যে গাছের ডালগুলোতে সংক্রমিত বেশী, সেই ডাল গুলো দর-দামের মাধ্যমে গাছের মালিকের সাথে দাম ঠিক করে নেয়া হয়। পরে গাছ থেকে ডাল কেটে নারী শ্রমিকদের দিয়ে ভাইরাস ছাড়ানো হয়। ভাইরাস বিক্রির উপযোগী হলে বস্তায় করে স্থানীয় উপজেলা কলিগ্রাম ও গোপালগঞ্জ সদরে সহ কয়েকটি বাজারের আড়ৎতে প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

ভাইরাস বিক্রির ব্যবসার সাথে জড়িত হাসান,কামালের সাথে আলাপকালে তারা জানান- উপজেলা বিভিন্ন গ্রাম থেকে শিশু (রেইনট্রি) গাছ দেখে আসি। যেসব গাছে ভাইরাস হয়েছে সেগুলো থেকে তিন থেকে চার জন শ্রমিক নিয়ে সংক্রমিত ডাল কেটে ভ্যানে করে বাড়িতে এনে ভাইরাস ছাড়িয়ে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যাই। কয়েক বছর আগে এই ভাইরাসের দাম বেশি ছিলো। কিন্তু এখন দাম কমে গেছে।

ভাইরাস ক্রয়ের আড়ৎদার গোপালগঞ্জ সদরের সোহেল শেখ মুঠোফোনে জানান- গাছ থেকে সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে কিনে আমরা অন্য জায়গায় বিক্রি করি। এগুলো ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা প্রতিকেজি দরে কিনে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি করি। ভাইরাস কী কাজে ব্যবহার হয় এমন প্রশ্নে আড়ৎদার সোহেল শেখ জানায় আমরাও সঠিক জানি না। তবে লোকমুখে শুনেছি এটা দিয়ে আসবাবপত্রে রং করার কাজে উন্নতমানের আঠা বা গালা তৈরি করা হয়ে থাকে।

ভাবড়াশুর গ্রামের সেন্টু মৃধা সহ গ্রামের কয়েকজন জানান- দিন দিন এই ভাইরাস সংগ্রহের কাজে লোক ঝুঁকছে বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- গোটা উপজেলার শতশত নারী,পুরুষ এই পেশায় জড়িত হয়ে পড়েছে। বেকার যুবকরাও এ ভাইরাসের ব্যবসা শুরু করেছে। উপজেলার গায়েন্দা বাজারে অস্থায়ী একটি দোকান ভাড়া করে কয়েক জন পুরুষ ছুরির সাহায্যে ডাল থেকে ভাইরাস পোকা আলাদা করছে।

তারা বলেন-এইগুলো আলাদা করে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। এভাবে এক সপ্তাহ পর পর বিক্রি করে থাকি। প্রথমে এই ভাইরাস পোকার দাম ছিল ১০০০ টাকা কেজি। এখন দাম কমে গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ বাহাউদ্দীন সেক জানান- মানুষেরা যেটিকে ভাইরাস বলছে সেটি মূলত ভাইরাস নয়, এটি হলো গাছের লাক্ষা পোকা। এটি বিভিন্ন গাছে হয়ে থাকে। বর্তমানে রেইনট্রি গাছে বেশি দেখা যায়। এটি গাছ থেকে ছাড়িয়ে অনেকে বিক্রি করছেন।