গাড়িতে হামলা, জঙ্গলে পালিয়ে রক্ষা পেলেন ইবি ভিসি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারীর গাড়িতে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৪টার দিকে ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ফেরার পথে ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার বড়দা এলাকায় এ হামলা হয়। শুক্রবার সকাল ৯টায় ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী ক্যাম্পাসের বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন।

ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারীর ভাষ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ঢাকা থেকে ব্যক্তিগত সহকারী রেজাউল করিমসহ ব্যবহৃত গাড়িতে (কুষ্টিয়া ঘ ১১-০০২৮) করে ক্যাম্পাসে উদ্দেশ্যে রওনা হই। ঝিনাইদহ শহরে রেজাউল করিমকে বাসায় রেখে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে রাত ৩টা ৪২ মিনিটে গাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার বড়দা এলাকায় পৌঁছালে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি দেখতে পান চালক ফরহাদ।পরে গাড়ি ব্যাক করে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পেছনে কিছুদূর যাবার পর বেশ কয়েকটি ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকা দেখা যায়। ফলে, গাড়ি পেছনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এ সময় মাফলাটে মুখবাঁধা তিনজন আমার গাড়িতে রাম দা দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে। ফলে, গাড়ির বাম দিকের সামনের ও পেছনের দুটো গ্লাস ভেঙে যায়। চালক আবার সামনে গাড়ি টানে। এতে দুর্বৃত্তরা পেছনে পড়ে যায়। গাছের গুঁড়ির কাছে গিয়ে তা পার হবার চেষ্টা করে চালক। কিন্তু অনেক বড় গাছের গুঁড়ি হওয়ায় তা ডিঙ্গাতে ব্যর্থ হয়। পরে চালক ফরহাদ হোসেন আমাকে পালাতে বলেন। আমি গাড়ি থেকে নেমে জঙ্গলে আশ্রয় নেই। দুর্বৃত্তরা গাড়ির কাছে আসে আমাদের না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে। জঙ্গলে টর্চলাইট দিয়ে খুঁজতে থাকে। দুর্বৃত্তরা পাশের জঙ্গলে আমাকে খুঁজে পায়। আমি অস্ত্রের মুখে আল্লাহর নাম নিতে থাকি। তারা আমাকে লুকিয়ে থাকতে দেখে অস্ত্রের মুখে গাড়ির কাছে ধরে নিয়ে যায়। পরে দুর্বৃত্তরা আমার কাছে টাকা চায়। কিন্তু মানি ব্যাগ ও মোবাইল ফোন খুঁজে না পাওয়ায় ল্যাপটপটি তাদের হাতে আমার ল্যাপটপ দেই। তারা টাকা না পেয়ে ল্যাপটপ রেখে ‘এখান থেকে এক পা নড়বি না’ বলে পেছনে চলে যায়। কিছুক্ষণ আমি গাড়িতে বসে থাকি। পরে আবার রাস্তার সামনে দিয়ে সোজা দৌড়াতে শুরু করি। কিছুদূরে গিয়ে একটি বাড়িতে আশ্রয় চাই। পরে বাড়ির মালিক পাশের বাড়ির একজনকে ডেকে নেয়। ওই ব্যক্তি আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক-প্রশাসন বিভাগের শাখা কর্মকর্তা ফজলুল করিমের বাড়িতে নিয়ে যান। ফজলুল করিম প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানকে ঘটনা জানান। পরে ভোর ৪টা ৫৪ মিনিটে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা পুলিশের গাড়িতে ক্যাম্পাসের বাসভবনে আসি।

ঘটনার বর্ণনাকালে তিনি আরো বলেন, ‘আমি মৃত্যুর বিভীষিকা দেখেছি। মনে হল আজই জীবনের শেষ দিন। আল্লার অশেষ রহমতে রক্ষা পেলাম।’

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের জোর দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, জিয়া পরিষদ, শাখা ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, ইংরেজি, বিভাগ ও লোক প্রশাসন বিভাগ।

চালক ফরহাদ হোসেন বলেন, রাস্তায় গাছের গুঁড়িটি পার হতে প্রাণপন চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তা অসম্ভব হওয়ায় স্যারকে পালাতে বলেছি। স্যার পালানোর পর আমি অপর দিকে পালিয়ে যাই এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানকে ফোন করি। পরে পুলিশ আসলে আমি গাড়ির কাছে আসতে সক্ষম হই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ঘটনা জানার পর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের হেফাজতে উপাচার্য স্যারকে ক্যাম্পাসের বাসভবনে নিয়ে আসা হয়। ঘটনা তদন্ত করে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রতন শেখ বলেন, বিষয়টি জানারপর ঘটনাস্থলে গিয়ে স্যারকে উদ্ধার করে ক্যাম্পাসে বাসভবনে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।