গুজব ছড়ানোর অভিযোগে আরও ৩ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
ফেসবুকে বিভিন্ন উসকানিমূলক গুজব ছড়ানো ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও তিন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তারা হলেন-আহমাদ হোসাইন (১৯), নাজমুস সাকিব (২৪) ও লুৎফুর রহমান লুমা।
গ্রেফতারকৃত সাকিব ঢাকার ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়, আহমাদ কামরাঙ্গীরচরের জামিয়া নুরিয়া মাদ্রাসা এবং লুমা ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী।
এদিকে ২৯ জুলাই পরবর্তী ছাত্র আন্দোলনে উসকানি দেয়ায় ৫১ মামলায় ৯৭ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম উদ্দিন জানান, বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ফেসবুকে বিভিন্ন উসকানিমূলক গুজব ছড়ানোর অভিযোগে হোসাইন ও সাকিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ও বধুবার ঢাকা ও কামরাঙ্গীরচর থেকে তাদের গ্রেফতার করে সিআইডি।
গ্রেফতারকৃত দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে পল্টন থানায় বুধবার মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, আহমাদ হোসাইন নোয়াখালীর কবিরহাটের আতাউর রহমানেরে ছেলে। আর নাজমুস সাকিবের বাবার নাম জহির উদ্দিন বাবর। তার বাসা পূর্ব রাজাবাজারে।
আসলাম উদ্দিন বলেন, ৪ থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম নিহত হওয়ার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কিছু দুষ্কৃতকারী মিথ্যা তথ্যসংবলিত বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার করে।
‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ দেশে অরাজক ও অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট লেখা, পোস্ট,ছবি ও ভিডিও ইলেকট্রনিক বিন্যাসে সম্প্রচার করেছে।’ তিনি বলেন, সিআইডি কম্পিউটার ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যম তদারকি করে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য তদন্ত শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার ও বুধবার ঢাকা ও কামরাঙ্গীরচর থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়া রাজপথে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুর রহমান লুমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বেলকুচি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, ইডেন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী লুৎফর নাহার লুমা (২১) কয়েক দিন আগে তার চাচা শহর আলীর বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। সম্প্রতি কোটা আন্দোলন নিয়ে ঢাকার রাজপথে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি সাইবার ক্রাইম মামলা হয়।
ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড সাইবার ক্রাইম কন্ট্রোল টিমের একটি বিশেষ দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে বেলকুচি থেকে আটক করে বলে জানান তিনি।
আটকের পরপরই টিমটি তাকে ঢাকা নিয়ে যায় বলে জানান ওসি।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ জানান, ঢাকার সাইবার ক্রাইম কন্ট্রোল টিমের একটি বিশেষ দল মঙ্গলবার রাতে এসে আমাদের সহায়তা চায়। বুধবার এক মেয়েকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে গেছে বলে শুনেছি।
এদিকে, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুজন শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে গড়ে ওঠা ‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে সহিংস ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন থানায় মোট ৫১টি মামলা করা হয়।
এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৯৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে দণ্ডবিধি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মোট ৪৩ মামলায় ৮১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আন্দোলনে সহিংস ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানির প্রেক্ষিতে রমনা বিভাগে মোট ১৪টি মামলা করা হয় এবং মোট ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। যার মধ্যে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয় ১০টি। যেখানে গ্রেফতার করা হয় ২০ জনকে এবং ৮৪ জনকে আসামি করে করা চারটি মামলায় গ্রেফতার করা হয় ১১ জনকে ।
১৪টি মামলার মধ্যে ১৩টির তদন্ত করছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ এবং একটি মামলা তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ।
লালবাগ বিভাগে একজন সহ অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ওয়ারী বিভাগে মোট মামলা হয়েছে দুটি। অজ্ঞাতনামা ৩৫০-৪৫০ জনকে আসামি করে করা দুই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে একজনকে।
এ বিষয়ে মতিঝিল বিভাগে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ছয়টি মামলা করা হয়েছে। ছয় মামলায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তেজগাঁও বিভাগে ছয়জনকে আসামি করে দুটি মামলা করা হয়েছে। যার মধ্যে দুজন এজাহার নামীয়সহ আরও ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মিরপুর বিভাগের মিরপুর মডেল থানায় বিইউবিটি ইউনিভার্সিটি ও কমার্স কলেজসহ অন্যান্য কলেজের অজ্ঞাতনামা ৫০০-৬০০ জন ছাত্র শিক্ষককে আসামি করে একটি মামলা, অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনকে আসামি করে কাফরুল থানায় একটি মামলা এবং ৯৬ জনকে আসামি করে আরও তিনটিসহ মোট পাঁচটি মামলা করা হয়েছে।
গুলশান বিভাগে অজ্ঞাতনামা ২০০০-২৪৫০ জনকে আসামি করে সাতটি মামলা এবং ৩১ জনকে আসামি করে আরও দুটি মামলাসহ মোট নয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।নয়টি মামলায় মোট ২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
উত্তরা বিভাগে অজ্ঞাতনামা ১০০-১৫০ জনকে আসামি করে তিনটি মামলা এবং ১১৩ জনসহ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি মামলাসহ মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় মোট তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ২৯ জনকে আসামি করে দায়ের করা মোট আটটি মামলায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আটটি মামলার মধ্যে চারটি মামলা ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ, একটি ডিবি পুলিশ এবং একটি থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন