গুজব : সচেতনতার অভাব ও সাংবাদিকতায় বাধা
উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করে তা ছড়িয়ে দেওয়াই গুজব। রাজনীতিতে এই গুজব বরাবরই একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে ইতিবাচক পরচর্চার পরিবর্তে নেতিবাচক গুজব অধিক কার্যকর হতে দেখা গেছে। অতীতে যখন প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল না তখন মুখে মুখে গুজব ছড়ানো হতো। এখন প্রযুক্তির কারণে লিখিতভাবে, সংবাদ আকারে ছড়ানো হচ্ছে গুজব।
কোনো কোনো ঘটনা আমাদের এত বেশি নাড়া দেয় যে, সেটি পরিচিতজনদের সঙ্গে না শেয়ার করে পারা যায় না। অথবা সেই ঘটনাটি কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এতটাই মানহানিকর যে, সেটি সহজে বিশ্বাস হয় না। তাই ব্যাপারটা আসলে গুজব না সত্যি, তা যাচাইয়ের জন্য হলেও অন্যকে বলতে হয়। গুজব একজনের কাছ থেকে আরেকজন হয়ে হাজারো মানুষের কাছে এভাবেই ছড়ায়। বর্তমান সময়ে এতটাই বিশ্বাসযোগ্য করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে যা দেখে বোঝার উপায় থাকে না- তথ্যটি সত্য না মিথ্যা। আর এটাই এখন অনলাইন সাংবাদিকতায় নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণকালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের হোতারা বিরোধিতা করে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি উদ্ভট উপায়ে মানুষের মাথা ও রক্ত পদ্মা সেতুতে ব্যবহৃত হবে মর্মে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মাথা ও রক্তের জোগান দিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেকে ছেলেধরা হচ্ছে বলে গুজব রটে। সেই গুজবে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত গণপিটুনিতে নিহত হন ৪৩ জন মানুষ। তবে সব চেয়ে বেশি আলোচিত হয় তসলিমা বেগম রেণু হত্যা। বাড্ডায় নিজের মেয়েকে স্কুলে ভর্তির তথ্য জানতে এসে তসলিমা বেগম রেণু ছেলেধরা গুজবের শিকার হয়ে গণপিটুনিতে নিহত হন। এ ধরনের গুজবের পরিণতি মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক ও মর্মবেদনার।
২০১৩ সালের মার্চে চাঁদে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চেহারা দেখা গেছে বলে গুজব ছড়ানো হয় চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। পরিস্কার বোঝা যায়, এর উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল। এছাড়া কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধমন্দিরে হামলা কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে তাণ্ডব চালানোর পেছনেও ছিলো পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো গুজব। এমনকি রাজধানী ঢাকার সড়কে ২০১৮ সালে কিশোরদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় ধর্ষণ ও খুনের গুজবও ছড়ানো হয়।
সম্প্রতি ঢাকা-১৭ আসনের উপ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ এ. আরাফাত জয়লাভ করার পর তাকে এবং ডিজিএফআইকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিউজ আকারে একটি গুজব ছড়ানো হয়। মুহুর্তেই ভাইরাল সেই গুজবটি। বিশ্বাস করেন অনেকেই। আর এখানেই সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ। মেইন স্ট্রিম গণমাধ্যম এসব ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর ফ্যাক্টচেক করছে, অনুসন্ধান করছে তারপর সত্যটা তুলে এনে সংবাদ পরিবেশন করছে ততক্ষণে ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে জীবন দিতে হচ্ছে অনেককেই। রামু কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শুরু হয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ তাণ্ডব।
বিজ্ঞজনরা বলছেন, অনলাইন সাংবাদিকতায় এটি বড় চ্যালেঞ্জ বটে তার চেয়ে বড় সমস্যা সামাজিক মাধ্যাম ব্যবহারকারীদের সচেতনতার অভাব। চিলে কান নিয়েছে বলে যে গুজব আছে, ঠিক সে রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি কাজ করছে, সংবাদমাধ্যম কি ছাপছে, কী বলছে, তার দিকে নজর নেই, চিলের পেছনে কান উদ্ধারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। সুতরাং এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কিছু একটা ঘটলেই ফেসবুকে লিখে, মতামত দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করার কিছু নেই। নিরবে পর্যবেক্ষণ করাও জ্ঞানীর পরিচয়। মানুষ সচেতন হলে এসব গুজব সাংবাদিকতায় বাড়তি চাপ যোগ করবে না।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন