গোপন বিয়ে পরিবার মেনে না নিলে করণীয়
জিজ্ঞাসা : আমার বয়স ২৮ ও বউয়ের বয়স ২৩। দুই জনের কুফুও একই।
চাকরি না থাকায় আমরা গোপনে বিয়ে করে আলাদাভাবে বসবাস করছি ঢাকায়। সেও অনার্সে পড়ে। কিন্তু গ্রামে কোনো প্রমাণ ছাড়াই কেউ কেউ রটিয়ে দেয় যে আমরা বিয়ে করে ফেলেছি। এতে আমার পরিবার মেয়েকে কোনোভাবেই মেনে নিবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। তাদের এই অবস্থায় কোনভাবে রাজি করানোও যাবে না। আর বিপদ আরও বাড়ার আশঙ্কায় আমিও বিয়ের কথা অস্বীকার করেছি। এমতাবস্থায় মা-বাবাকে খুশি করার জন্য তাদের কথায় বউকে তালাক দেওয়া শরিয়তে জায়েজ আছে কিনা? আমরা কেউ কাউকে ছাড়তে চাই না। ছাড়া সম্ভবও না। দুই জনেই শরিয়াঅনুযায়ী জীবন যাপনের চেষ্টা করছি।
জবাব : এক. ভাই, প্রকৃতপক্ষে গোপন বিয়ে অসামাজিক, অমানবিক, অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ ও লজ্জাজনক কাজ। এজন্য বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা ইসলাম পছন্দ করে না। আপনাদের এতো বিপত্তির পেছনে রয়েছে গোপন বিয়ে! ইসলামের নির্দেশনা হলো, ‘বিয়ে করবে ঘোষণা দিয়ে। ’(মুসনাদে আহমাদ ৪/৫)
আর তা না হলে এরকম বিপত্তি বাঁধবে!
হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ এক সাহাবির বিয়ের খবর শুনে নির্দেশ দেন, ‘বিয়ের ঘোষণা প্রদান করো এবং মসজিদে তা সম্পাদন কর। আর এর জন্য দফ (এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র) বাজাও। ‘ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৯)
দুই. নিন্দনীয় হলেও বিয়ে যেহেতু গোপনে করেই ফেলেছেন, এখন এই বন্ধন রক্ষা করতে হবে। মনে রাখবেন, এটি কোনো ছেলেখেলা নয়। বরং এটি হলো, আল্লাহ তাআলাপ্রদত্ত ও নির্দেশিত নারী-পুরুষের সারাজীবনের একটি চিরস্থায়ী পূত-পবিত্র বন্ধন। ইসলামে তালাকের সুযোগ রাখা হয়েছে খুবই অপছন্দনীয়ভাবে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক যখন তিক্ত পর্যায়ে চলে যায় এবং সমাধানের কোনো পথ থাকে না, তখনই তালাক দেওয়া হয়ে থাকে। তারপরও ইসলামে তালাক একটি জঘন্যতম বৈধ কাজ। রাসুলুল্লাহ ﷺ তা চরমভাবে ঘৃণা করতেন। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল হলো তালাক। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭৭)
এজন্য অতীব প্রয়োজন (যা শরিয়তে ওজর বলে গণ্য) ছাড়া স্বামীর জন্য তালাক দেওয়া জায়েজ নয়, স্ত্রীর জন্যও তালাক চাওয়া বৈধ নয়। যেহেতু তালাক স্বামীর অধিকার, তাই বিশেষত স্বামী এক্ষেত্রে নিছক মা-বাবার চাপ বা বলপ্রয়োগের কারণেও তা প্রয়োগ করতে পারবে না। কারণ সৃষ্টির আনুগত্যের সীমারেখা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল ﷺ বলেন, ‘অসৎকাজে আনুগত্য নয়; আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে। ‘ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭১৪৫)
তিন. সুতরাং আপনি এখন যা করবেন তা হলো,
(ক) অস্বীকার করে অন্যায়ের পর অন্যায় আর নয়; বরং মা-বাবার সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন। আপনি তাদের সঙ্গে অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ আচরণ করেছেন, তা তাদের কাছে স্বীকার করে নিন। পাশাপাশি এটাও বুঝিয়ে বলুন যে আপনি তাদের সঙ্গে যে অন্যায় আচরণ করেছেন, এর শাস্তি আপনি পেতে পারেন; আপনার স্ত্রী নয়। এর প্রতিকার হিসাবে তালাকের মতো দূর্ঘটনা ঘটলে তা হবে আরেকটি অন্যায়।
(খ) এরপরেও যদি তারা তালাকের কথা বলে, তাহলে দেখুন, তাদের কথা সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত কিনা? যদি তাদের কথা সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত হয় এবং সে কারণে তালাক ছাড়া আর কোনো পথ বাকি না থাকে, পাশাপাশি যদি তালাক প্রদান করার দ্বারা আপনার জিনায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে মাতা-পিতার সন্তুষ্টির জন্য স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে। হজরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার একজন স্ত্রী ছিল। যাকে আমি ভালবাসতাম। কিন্তু আমার পিতা (হজরত উমর বিন খাত্তাব রা. যৌক্তিক কারণে) তাকে পছন্দ করতো না। তিনি আমাকে বললেন তাকে তালাক দিতে। কিন্তু আমি তালাক প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানালাম। তখন আমার পিতা রাসুল ﷺ এর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করলে রাসুল ﷺ বললেন, তাকে তালাক দিয়ে দিতে। ফলে আমি আমার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করি। (মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালিসি, হাদিস : ১৯৩১, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৪৭১২, আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৩৮)
পক্ষান্তরে তালাকের কারণ যদি যৌক্তিক না হয়, কেবল বউয়ের প্রতি ঈর্ষাবশত এটি হয়, তাহলে তালাক দেওয়া আপনার জন্য জায়েজ হবে না।
(গ) পরিশষে আপনাকে ধৈর্য্য ধরার ও মা-বাবার সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই অসদাচারণ না করার পরামর্শ দিচ্ছি। আপনার স্ত্রীকে তাঁদের সঙ্গে এমন ভালো ব্যবহার দেখাতে বলুন, যাতে তাঁদের মন নরম হয়। আর অবশ্যই আল্লাহর কাছে দোয়া অব্যাহত রাখুন। তিনিই প্রকৃত সমাধানদাতা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন